দীপশুভ্র সান্যাল ও অনিন্দিতা দত্ত

রাজ্যে ৮ হাজার ৩২২টি স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে ২২ হাজার মদের দোকান খুলেছে। চা বাগানের মেয়েদের অন্য রাজ্যে পাচার করার  ব্যবস্থা করে রেখেছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় জনসভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি। রবিবার আলিপুরদুয়ার থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়িতে বিভিন্ন জনপদে গিয়েছে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’। তিনি বলেছেন যে চা বাগানে নারী পাচার, প্রকৃতি লুটে তৃণমূলেরই সঙ্গী বিজেপি।
তিনি বলেন, তৃণমূল চুরি করেছে, লুট করেছে, দুর্নীতি করেছে, চা বাগানের জমি বেচে দিয়েছে। চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেয়নি। জমির অধিকার দিচ্ছে না। প্রত্যেকটা দিন এরাজ্য হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে বাইরের রাজ্যে চলে যাচ্ছে, শুধুমাত্র দু’বেলা খাবার জোগাড়ের জন্য। 

মীনাক্ষী বলেছেন, যারা বলেছিলো তৃণমূলকে টাইট দিতে বিজেপি-কে ভোট দাও তারা এখন কী বলবে। উত্তরের মানুষ দু’হাত ভরে বিজেপি’কে ভোট দিয়েছিলেন। বিধানসভার ভিতরে ছিলেন নিজেপি’র বিধায়করা। কিন্তু তৃণমূলের চুরি রুখে দেওয়ার হিম্মত বিজেপি’র হয়নি। ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট করা থেকে তৃণমূলকে বাধা দিতে পারল বিজেপি? বরং, কাজ বন্ধ করে শাস্তি দিল গরিব মানুষকে।
মীনাক্ষী বলেন, বিধানসভার ভিতরে এত বিধায়ক বিজেপি’র। এদিকে নদী-জঙ্গল-জমি গোটা পর্যটনকে কর্পোরেটদের হাতে বিলিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। কিন্তু বিজেপি’র টুঁ শব্দ করার হিম্মত হয়নি। 
মীনাক্ষী রাজ্যের তৃণমূল প্রসঙ্গে বলেন যে এরা আমাদের জমি, জঙ্গল, পাহাড় সবকিছুকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গের যত নদী আছে, সরকারের মদতে দুর্নীতি না হলে এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়? জঙ্গলের ভিতরের জমির কি হলো? সেই তো কর্পোরেটের হাতে তুলে দিল। আজ বন্যপ্রাণী সমানে লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষ, বন্যপ্রাণী দুই-ই মারা যাচ্ছে।
মীনাক্ষী বলেন, তৃণমূলের কর্মীদের জিজ্ঞেস করছি, দলের ভিতরে কথা বলার অধিকার আছে আপনাদের? জিজ্ঞেস করতে পারছেন যে আরজি করের মেয়েটার কী দোষ ছিল ছিল? চা বাগানের মেয়েগুলো কেন পাচার হচ্ছে? কেন বলতে পারছেন না ধর্ষণ, পাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। 
মীনাক্ষী বলেন, বিজেপি কর্মীদের জিজ্ঞেস করছি যে তৃণমূলকে টইট দেওয়ার রাস্তাটা চওড়া করতে গিয়েছিলেন তা কি হয়েছে? নেতাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন তৃণমূলের সঙ্গে কী এমন আঁতাত আছে যার জন্য অনুব্রত, জ্যোতিপ্রিয়, পার্থ,এবং ভাইপোর বিরুদ্ধে এতো কেস থাকার পরেও তারা কি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
এদিন কালিয়াগঞ্জের মাঠে সমাবেশে যাত্রা প্রবেশ করার সময় ডেঙ্গুয়াঝার চা বাগানের চা শ্রমিকরা ধামসা মাদল সহযোগে বরণ করে নেন ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র অভিযাত্রীদের। তিস্তাপারের  পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা জলপাইগুড়ির মানুষের সংগ্রাম আন্দোলন, চা শ্রমিক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, রেলওয়ে মজদুর ইউনিয়নের আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে জলপাইগুড়ির সংগ্রামী মানুষদের অভিনন্দন জানান সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখার্জি, আভাস রায় চৌধুরী, জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র, পার্টি নেতা দেবরাজ বর্মন সহ নেতৃবৃন্দকে। দার্জিলিঙ জেলাতেও মিলেছে জনতার ব্যাপক সাড়া।