BILQUIS BANO

নারীর সম্মান হিন্দুত্ববাদী প্রকরণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

Bjp rss godhra pogrom bilquis bano বিলকিস বানো'র ধর্ষকরা

অন্তঃসত্ত্বা বিলসিক বানুকে যে ১১ জন হিন্দুত্ববাদী অমানুষ ধর্ষণ করেছিল এবং তার তিন বছরের কন্যাসহ পরিবারের ৮ জনকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল সেই বর্বর দুষ্কৃতীদের গুণমুগ্ধ এবং প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিজেপি নেতা এবারও গুজরাটের গোধরা কেন্দ্রে প্রার্থী। বলা যায় সেই গোধরা কাণ্ড তথা গুজরাট দাঙ্গার সময় থেকেই এই ব্যক্তি গোধরার বিধায়ক। এমন নজিরবিহীন দাগী অপরাধীরা জেলে ভালো ব্যবহার করেছে এই যুক্তি দেখিয়ে আমৃত্যু জেলজীবন থেকে মুক্তি দেয় গুজরাটের বিজেপি সরকার। সরকারের তৈরি যে কমিটি বন্দিদের জেলজীবন নিয়ে ভালো ভালো কথা উল্লেখ করে মুক্তিদানের সুপারিশ করেছিল সেই কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন গোধরার বিধায়ক চন্দ্রসিন রাউলজি। 

বিলকিস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এই ব্যক্তি ধর্ষক-খুনিদের হয়ে ধারাবাহিকভাবে সওয়াল করে গেছেন। ১১ জনের অপরাধকে তিনি কোনও অপরাধ বলে গণ্য করেননি। বরং ভাষ্যে ছিল গর্বের অনুরণন। শুধু রাউলজিই নন, বিজেপি’র কোন নেতার কণ্ঠে এরজন্য অনুতাপের আঁচ পাওয়া যায়নি। সরাসরি না হলেও বিলকিস ধর্ষকদের তারা সমর্থনই করে গেছে। তাই গোড়া থেকেই তদন্তকে বিপথগামী করার চেষ্টা হয়েছে। ধর্ষকদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। গুজরাটের শাসকদল বিজেপি কোনও অবস্থাতেই চায়নি তাদের সাজা হোক।

 শেষপর্যন্ত নিম্ন আদালত থেকে বম্বে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট হয়ে তাদের আজীবন জেল নিশ্চিত হবার পর গুজরাট সরকার ও হিন্দুত্ববাদী তাদের ছাড়িয়ে আনার রাস্তা খুঁজে পেয়ে গেছে। যতদিন না পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি ততদিন তাদের নানা অজুহাতে প্যারোলে জেল থেকে বেরুবার ব্যবস্থা করে নিয়মিত। কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বেশিরভাগ সময় জেলের বাহিরেই কাটিয়েছেন। এমনকি প্যারোলে ছাড়া পেয়ে তারা ফের অপরাধে যুক্ত হয়েছেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে থানায় এফআইআরও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

এহেন কুখ্যাত হিন্দুত্ববাদী অপরাধীদের মুক্তির পর যখন দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে তখন তাদের মুক্তির অন্যতম সওয়ালকারী রাউলজি তাদের ‘সংস্কারী ব্রাহ্মণ’ বলে প্রশংসিত করেন। ব্রাহ্মণ তাই ধর্ষণ ও খুন করায় আপত্তি নেই।


এই ১১ কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে। যখন হিন্দুত্ববাদী ধর্ষকরা বিজয় গর্বে জেল থেকে বের হন তাদের ফুল মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধনা দেন হিন্দুত্ববাদীরা। ঠিক সেদিনই রাজধানীর লালকেল্লাই ভাষণ দিয়ে নারীদের সম্মান করার জ্ঞান বিতরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নারীদের সম্মান করার হিন্দুত্ববাদী প্রকরণ ঠিক কেমন বিলকিস ধর্ষকরা দু’দশক আগে দেখিয়েছিলেন। সেই প্রকরণে হিন্দুত্ববাদীরা আস্থা রাখে তার প্রমাণ তাদের মুক্তি। দুর্ভাগ্যের ঘটনা এটা বিলকিস ধর্ষকদের মুক্তির অন্যতম সওয়ালকারী এবারের নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সেই রাউলজিকে জেতাতে প্রচারে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। নারীদের কেমন সম্মান দেখানোর কথা তিনি বলেছিলেন এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার।

Comments :0

Login to leave a comment