Prime Minister Narendra Modi

জাতগণনা খারিজ করতে বিজেপি সেই মোদীময় প্রচারেই

জাতীয়

চার রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশ হতেই জাতভিত্তিক গণনাকে খারিজ করতে উঠে পড়ে লাগলো বিজেপি। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহের কথার মূল সুর ছিল এটাই। একই সঙ্গে মোদী ভজনাও সর্বোচ্চ মাত্রায় শুরু করা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় বিজেপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। জেপি নাড্ডা, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং সহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মোদী-শাহের জমানায় এটাই প্রথা হয়েছে, যে কোনও রাজ্যে ভোটে জয়ের পরে মোদী বিজেপি কর্মীদের সামনে ভাষণ দেন দলীয় দপ্তরে এসে। একই সঙ্গে তিনি লোকসভা ভোটের জন্যেও সুর চড়িয়ে বলেছেন, আজকের হ্যাট্রিক ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেরও হ্যাট্রিক বলে অনেকেই বলছেন। 
মোদী বলেছেন, এই নির্বাচনে জাতের নামে দেশকে ভাগ করার চেষ্টা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম চারটিই জাত আছে দেশে। নারীশক্তি, যুবশক্তি, কৃষক এবং গরিব পরিবার। এই চারটি জাতের লোক বিজেপি-কে ভোট দেওয়ার জন্য বিপুল উৎসাহ দেখিয়েছে। গরিবরা মনে করেছেন তাঁরা জিতেছেন। নারীশক্তি অর্থাৎ মহিলাদের দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহও একই সুরে বলেছেন, এই ফলাফলে প্রমাণ হয়েছে তুষ্টিকরণ এবং জাতের নামে রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে। নতুন ভারত কর্মক্ষমতার উপরে ভোট দিচ্ছে। তেলেঙ্গানায় ভোট প্রচারে গিয়ে অমিত শাহই একের পর এক সভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যে বিজেপি’র সরকার হলে ওবিসি অংশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। তেলেঙ্গানার জনসংখ্যার  কমবেশি ৪৮% ওবিসি। 
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য, যেখানে বিজেপি’র সাংগঠনিক শক্তিও অনেক বেশি এবং দুটি রাজ্যে কংগ্রেসের সরকার চলেছে পাঁচ বছর ধরে, সেখানে ওবিসিদের জন্য ন্যায়সঙ্গত দাবিকে বিজেপি’র জাতের নামে দেশভাগ বলে প্রচার নামে, সেই বিজেপিই তেলেঙ্গানায় জেতার জন্য ওবিসি অংশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি বিলি করেছে। এখন তিন রাজ্যে ভোটের জয়ে সেই কথাই আবার জোরের সঙ্গে প্রচার করে জাতভিত্তিক গণনার ন্যায়সঙ্গত দাবিকে খারিজ করতে চাইছে। বিশ্লেষকদের মত, বিহারে জাতভিত্তিক গণনার ফল সামনে আসার পরে খুবই অস্বস্তিতে আছে বিজেপি। বিহারের ফলাফল প্রকাশ করা হয় এই রাজ্যগুলির নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে যাওয়ার পরে। বিহার, উত্তর প্রদেশে জাতভিত্তিক গণনার দাবি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে বিজেপি এখনও আশঙ্কিত, মুখে তারা যাই বলুক না কেন। যে কারণে বিহারে চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের নতুন বিল পেশ করলে বিহারের বিজেপিও তাতে চোখ বুজো সমর্থন দিচ্ছে। বিজেপি জানে যে তিনটি রাজ্যে জয় পেয়েছে, তার মধ্যে দুটিতে কংগ্রেস সরকারে ছিল এবং জাতভিত্তিক গণনার কোনও চেষ্টা সরকারে থাকার সময়ে করেনি। রাহুল গান্ধী বা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা জাতভিত্তিক গণনার কথা উপর থেকে বললেও রাজ্যস্তরের কংগ্রেস নেতারা বিশেষত সরকারের নেতারা তা করেননি। ফলে এখনের নির্বাচনে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এই প্রচার জোরালো হাওয়া পেলে লোকসভা ভোটের আগেও কোনও প্রভাব ফেলবে না, তার গ্যারান্টি নেই। সেই কারণে এদিন ফলপ্রকাশের শুরুতেই জাতভিত্তিক গণনার কোনও প্রভাব নেই এবং তা অপ্রয়োজনীয় এই প্রচারেই জোর দিতে চেয়েছেন মোদী সহ বিজেপি নেতারা। 
কর্নাটকের ভোটে সর্বশক্তি নিয়োগ করার পরেও বিপর্যয়কর পরাজয়ের পরে বিজেপি যেমন মুষড়ে পড়েছিল, একইভাবে মোদীর ভাবমূর্তিও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এই জয়কে তাই ফের মোদীর জয় হিসাবে দেখাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিজেপি। অমিত শাহ পরপর টুইটে বলেছেন, একমাত্র যে ব্যক্তি মানুষের মনে আছেন, তিনি মোদী। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে যাঁর ভবিষ্যৎ দোলাচলে রয়েছে,  এদিন মোদী এবং বিজেপি’কে তুষ্টিকরণের সর্বাধিক চেষ্টা চালিয়েছেন। নতুন স্লোগান তৈরি করে ফেলেছেন মোদীকে নিয়ে। তিন রাজ্যে জয়ের পরে শিন্ডে বলেছেন, আগে ‘ঘর ঘর মোদী’ ছিলেন, এখন বোঝা যাচ্ছে ‘মন মন মে মোদী’। লোকসভা ভোটের আগে ফের ‘মোদী মোদী’ সুর তুলতেই বিজেপি কার্যালয়ের সভা মঞ্চেও লেখা হয়েছিল, ‘‘সপনে নেহি, হকিকত বুনতে হ্যাঁয়, তভি তো সব মোদীকো চুনতে হ্যাঁয়।’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, এই জয়কে হাতিয়ার করে ফের মোদী মোদী রব তোলার চেষ্টা এদিন থেকেই শুরু করে দেওয়া হলো। বিজেপি’র সমস্ত শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মোদী ভজনায় তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। নীতিন গড়কড়িও বলেছেন, দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীতিকে সমর্থন করেছেন এবং বিজেপি’কে ভোট দিয়েছে। মানুষ মোদীর গ্যারান্টি’র উপরে ভরসা রেখেছেন বলে এদিন বিজেপি নেতারা সমস্বরে বলেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী, মধ্য প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং, মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান সকলেই জয়ের কৃতিত্ব মোদীকে দিয়েছেন। ১৮ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরেও যে শিবরাজের নাম গোটা নির্বাচনের প্রচার প্রক্রিয়ায় মুখে আনেননি মোদী। স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর প্রমুখরাও মোদী ম্যাজিক, মোদী মহিমা ইত্যাদি প্রচার তুঙ্গে তুলেছেন। 
জয়ের আভাস পাওয়ার পর থেকে বিজেপি’র কেষ্টু-বিষ্টুরা মোদী মোদী করে যে প্রচার শুরু করেছিলেন, রাতে তাকেই চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন খোদ মোদী। দলীয় দপ্তরের ভাষণে বলেছেন, যখন সকলের প্রতিশ্রুতির আশা শেষ হয়ে যায়, তখন মোদীর গ্যারান্টি শুরু হয়!

Comments :0

Login to leave a comment