‘নির্বাচনী গ্যারান্টি’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এবার বহুমুখী আক্রমণে বিঁধতে শুরু করল কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত যে ‘মোদী কি গ্যারান্টি’ ১৪০ কোটি ভারতীয়ের সঙ্গে ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’ ছাড়া কিছুই নয়।
বিজেপিতে ‘বি’ মানে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং ‘জে’ মানে ‘জুমলা’, উল্লেখ করে খাড়গে এক্স-এ একটি পোস্টে লেখেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীজি, মিথ্যা, প্রতারণা, জালিয়াতি, লুটপাট এবং প্রচার এই পাঁচটি বিশেষণ যা আপনার সরকারকে সবচেয়ে ভালভাবে বর্ণনা করে! ১০০ দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আপনার ঢাকঢোল পেটানো চটকদারি ছাড়া কিছুই নয়!’’
খাড়গে ছাড়াও কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু, ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপালও কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি পূরণে কংগ্রেসের ট্র্যাক রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে মোদীর সমালোচনা করেছেন।
‘‘১৬ মে, ২০২৪-এ আপনি দাবি করেছিলেন যে আপনি ২০৪৭ সালের রোডম্যাপের জন্য ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছ থেকে মতামত নিয়েছিলেন। পিএমও-তে দায়ের করা আরটিআই আপনার মিথ্যা প্রকাশ করে বিশদ বিবরণ দিতে অস্বীকার করেছে!’’ কংগ্রেস সভাপতি পোস্টে লিখেছেন।
রেকর্ড গড়ার দাবি করে খাড়গে ‘বছরে দু’কোটি চাকরির’ প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও উত্থাপন করেন। খাড়গে প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতে বেকারত্বের হার কেন ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, এবং যেখানেই হাতে গোনা কয়েকটি চাকরির সম্ভবনা থাকছে সেখানে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটছে কেন?
সাত বছরে ৭০টি প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য কে দায়ী? এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির অংশীদারিত্ব বিক্রি করে কে ৫ লক্ষ সরকারি চাকরি ছিনিয়ে নিয়েছে?
‘বহুত হুই মেহাঙ্গাই কি মার’ বলে মন্তব্য করে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘কেন পারিবারিক সঞ্চয় ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেল? কেন গত বছরে একটি সাধারণ থালির দাম ৫২ শতাংশ বেড়েছে? টমেটোর দাম বেড়েছে ২৪৭ শতাংশ, আলুর দাম বেড়েছে ১৮০ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
দুধ, দই, আটা, ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যদ্রব্যের উপর কে জিএসটি ধার্য করেছিল? কারা কর সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়ে লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের মাধ্যমে মধ্যবিত্তর ঘাড়ে চাপিয়েছে?’’
‘আচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করে খাড়গে বলেন, ‘‘টাকার মান ডলারের তুলনায় সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। আইসিইউতে নাকি মার্গদর্শক মণ্ডলে আছে তা? আপনার সরকার গত ১০ বছরে ১৫০ লক্ষ + কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, অর্থাৎ প্রত্যেক ভারতীয়ের মাথায় ১.৫ লক্ষ টাকা ঋণ। ডিএমও+ ত্রুটিপূর্ণ জিএসটির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে’’।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মোদী সরকার এসসি, এসটি, ওবিসি এবং ইডব্লুএস সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সরকারি চাকরি কেড়ে নিচ্ছে, যেখানে ক্যাজুয়াল বা কন্ট্রাক্ট হায়ারিং ৯১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘‘২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জুমলা। ন্যুনতম সহায়ক মূল্যের জন্য আইনি গ্যারান্টি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ৩৫টি কৃষি পণ্যের উপর জিএসটি বসানো হয়েছে। অগ্নিপথের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীতে স্থায়ী নিয়োগকে অস্থায়ী নিয়োগে পরিণত করা হয়েছে! মোদীজি, আঙুল তোলার আগে মনে রাখবেন, মোদী কি গ্যারান্টি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতা। পোস্টে তোপ খাড়গের।
শুক্রবার মোদী বলেন, কংগ্রেস যেটা কখনই পূরণ করতে পারবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য জনগণের সামনে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে।
এদিকে, মোদীকে আক্রমণ করে সিদ্দারামাইয়া বলেন, কংগ্রেসের দিকে আঙুল তোলার আগে কর্ণাটকে বিজেপির ‘বিপর্যয়কর উত্তরাধিকার’-এর দিকে কড়া নজর দেওবা উচিত তাঁর।
Comments :0