MANIPUR VIOLENCE

সর্বার্থে ব্যর্থ

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

manipur violence bjp rss communal clash bengali news

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাধের ডবল ইঞ্জিনের মণিপুর সরকার কতটা অযোগ্য, অকমর্ণ এবং অপদার্থ এতদিন বিরোধী দল এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার বলার চেষ্টা হয়েছিল। এবার খোদ দেশের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে ‍ দিয়েছে মোদী-শাহদের দল পরিচালিত মণিপুর সরকারকে অযোগ্য, অকমর্ণ্য এবং অপদার্থ বললেও যথেষ্ট কম বলা হবে। মোদীরা সেখানে এমন ডবল ইঞ্জিন সরকার চালাচ্ছেন যে আইন-শৃঙ্খলা বলে কোনও কিছু নেই। 

ভেঙে পড়েছে সাংবিধানিক ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে পুলিশে ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ নেই। গত তিনমাস ধরে চলা সাম্প্রদায়িক ও জাতি সংঘর্ষ ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ। যেসব ভয়াবহ হিংসা, খুন, নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে, তার তদন্তের কাজেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় তারা কণিকা মাত্র ভূমিকাও পালন করতে পারেনি। রাজ্যের আইন-শঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর পুলিশের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সুপ্রিম কোর্টের এহেন পর্যবেক্ষণের পর এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, মণিপুরে আদৌ কোনও সরকার আছে কি?

মণিপুর নিয়ে একগুচ্ছ মামলায় ডবল ইঞ্জিনের সরকারের সওয়ালকে কার্যত তুলোধোনা করে আদালত বলেছে, মণিপুরের পুলিশ প্রমাণ করে দিয়েছে তারা হিংসা ঠেকাতে পারে না, হিংসার ঘটনার এফআইআর নেয় না। কিছু নিলেও অস্বাভাবিক বিলম্বে এফআইআর হলেও তদন্ত করে না। মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজারের বেশি এফআইআর হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র সাতজন। তদন্ত যে কিছুই হয়নি এবং হচ্ছে না, এটা তারই প্রমাণ। 

তিনমাস ধরে মণিপুরে মানবতার বিরুদ্ধে যে বর্বর অভিযান চলছে, যে পরিমাণে জীবনহানি ও সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, তার কোনও স্পষ্ট ছবিও সরকারের কাছে নেই। বস্তুত মুখ্যমন্ত্রীও শহরের বাইরে যেতে পারেন না। মন্ত্রিরা কেউ নিরাপদ নন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মণিপুরে গিয়ে অনেক লম্বা-চওড়া ভাষণ দিয়ে এসেছেন। ফলাফল শূন্য। মোদী তো তাঁর কর্মসূচি থেকে  মণিপুরকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। 

মণিপুর যাওয়া, শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা তো দূরের কথা, মণিপুরের নাম উচ্চারণেও তাঁর অনীহা। অবশ্য এরই মধ্যে রাহুল গান্ধী, বাম সাংসদদের দল এবং ‘ইন্ডিয়া মঞ্চের’ সাংসদরা মণিপুরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। তাঁদেরই হিসাব অনুযায়ী পাঁচ হাজারের বেশি বাড়ি পোড়ানো হয়েছে, দু’শোর বেশি মানুষ খুন হয়েছেন। গুরুতর জখম পাঁচ শতাধিক। ৬০ হাজারের বেশি ঘরছাড়া। আশ্রয় শিবিরে আছেন মনুষ্যেতর জীবদের মতো।


এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে মণিপুরের সরকার এবং পুলিশ কাজের যে নমুনা দেখিয়েছে, তাতে তাদের উপর কারও কোনও আস্থা থাকতে পারে না। আবার এত এফআইআই’র তদন্ত সিবিআই-কে দিয়েও সম্ভব নয়। তাই তদন্তের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।  নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে  মণিপুরের হিংসা ও নারী নিগ্রহকে অন্যরাজ্যে হিংসা-নিগ্রহের সঙ্গে এক করে দেখার যে যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করছে ডবল ইঞ্জিন, তাকেও সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে  সুপ্রিম কোর্ট। 

অর্থাৎ ডবল ইঞ্জিনের যাবতীয় যুক্তি, অজুহাত, ভাষ্য সর্বোচ্চ আদালতে কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। অপদার্থতা আড়ালের চেষ্টাও কোনও ফল পায়নি। এই অবস্থার পরও শাসকদল গলা উঁচু করে কথা বলে কি করে, সেটাই প্রশ্ন। তাদের তো লজ্জায় মাথা নত করে থাকার কথা। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর অকপটে স্বীকার করার কথা— মণিপুরে ডবল ইঞ্জিন অচল হয়ে গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment