বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনীর আক্রমণে নিহত সিপিআই(এম) নেতা বাদল শীলকে শ্রদ্ধা জানালেন হাজার হাজার মানুষ। শনিবার নিহত হন দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা পরিষদের প্রার্থী রাজনগরের সিপিআই(এম) নেতা কমরেড বাদল শীল।
রবিবার বিলোনিয়ায় শত শত মানুষ লাল পতাকা অর্ধনমিত রেখে শামিল হন মিছিলে। বিজেপি’র দুর্বৃত্তদের রুখে দেওয়ার শপথে মিছিল হয়েছে আগরতলাতেও।
রবিবার বিলোনিয়ায় সিপিআই(এম) কার্যালয়ে শহীদ কমরেড বাদল শীলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পার্টির নেতৃবৃন্দ। কমরেড বাদল শীলকে কুপিয়ে হত্যা করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। শনিবার বেলা দু’টোর সময়ে আগরতলার জিবি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শুক্রবার দক্ষিণ ত্রিপুরার রাজনগরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময়ে সিপিআই(এম)’র মিছিলে হামলা করে বিজেপি’র সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। আরও অনেকের সঙ্গেই জখম হয়েছিলেন কমরেড বাদল শীল। পরে সন্ধ্যায় বাজারে এলে তাঁর মাথায় দা’ দিয়ে কুপিয়ে চোত্তাখলা বাজারে ফেলে রেখে যায় বিজেপি’র উন্মত্ত বাহিনী। তখন আরও তিন জন সিপিআই (এম) কর্মীকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। রাজনগর বিধানসভার অন্তর্গত সিপিআই(এম) শ্রীরামপুর আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক কমরেড বাদল শীল দক্ষিণ জেলা পরিষদের ৪ নম্বর আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কমরেড শীলের হত্যার প্রতিবাদে রবিবার ১২ঘণ্টা ত্রিপুরা বন্ধের ডাক দেয় বামফ্রন্ট।
হত্যার ঘটনায় সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, শাসকদলের স্বৈরাচারী ভূমিকার বিরুদ্ধে সব অংশের মানুষ গর্জে উঠুন, জানান দিন, বিজেপি যা করতে চায়, তাতে জনগণের সমর্থন নেই। হাসপাতালে জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, এটা শুধু কমরেড বাদল শীলের নয়, গণতন্ত্রের মৃত্যু। এরাজ্যে মানুষের অধিকার কীভাবে লুট হচ্ছে, এই হত্যার মাধ্যমে আবার গোটা দেশকে দেখিয়েছে বিজেপিই।
শনিবার হাসপাতালে কমরেড বাদল শীলকে দেখতে গিয়েছিলেন সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। তিনি বলেন, এই সব ঘটনা শাসক বিজেপি’র দুর্বলতার লক্ষণ। তারা জনগণের মুখোমুখি হতে চায় না বলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চায়। এরা বুঝতে পারছেন এবার পরিবেশ ২০১৯ এর মতো নয়, মানুষ ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন, রুখে দাঁড়াচ্ছেন।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কমরেড বাদল শীল। ছাত্র-যুব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সিপিআই (এম)’র সংস্পর্শে আসেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সমাজের জন্য। ত্রিপুরায় ১০৩২৩ জন চাকরিচ্যুত শিক্ষকের তালিকায় তিনিও ছিলেন। কাজ হারিয়ে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও পার্টির কাজে কোনও খামতি ছিল না। কমরেড বাদল শীল সিপিআই(এম) শ্রীরামপুর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক ছিলেন। বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির সদস্যও ছিলেন।
রাজ্যে ২০১৮ সালে বিজেপি জোট সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকে একাধিকবার তাঁর বাড়িতে হামলা হয়। তাঁকে মারধর করা ছাড়াও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। এত চক্রান্ত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও একদিনের জন্যেও কমিউনিস্ট মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি স্বৈরাচারী শাসক বিজেপি। নানা আক্রমণ, প্রলোভন, মিথ্যা মামলা, ষড়যন্ত্র কোনও কিছুতেই তাঁকে নোয়ানো যায়নি।
৮ আগস্ট ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা পরিষদের ৪ নম্বর আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে গত ১১ জুলাই দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা শাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা করেন বাদল শীল।
শুক্রবার রাজনগর ব্লক অফিসে রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২৩টি আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার মিছিলে হামলা করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। কমরেড বাদল শীল ছিলেন সেই মিছিলে, তিনিও আক্রান্ত হন। বিকালে রাজনগর থেকে নিজ বাড়ি চোত্তাখোলায় ফিরে যান। বাড়ির একটি জরুরি জিনিস কিনতে সন্ধ্যায় চোত্তাখোলা বাজারে আসেন। সেই সময় বিজেপি’র একদল দুর্বৃত্ত বাহিনী কমরেড শীলকে বাজারের মধ্যে ঘিরে ধরে লাঠি দিয়ে নৃশংস মারধর করে। দা’ দিয়ে কোপ মারা হয় মাথায়। ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত এবং অচৈতন্য হয়ে পড়েন কমরেড বাদল শীল। আরও দুজন বামকর্মী সুশীল দেবনাথ দুলাল দেবনাথকে বেধড়ক মারধর করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। কমরেড বাদল শীল প্রাণ হারিয়েছেন ভেবে দুর্বৃত্তরা বাজারে উল্লাস করতে থাকে। ভয়ে-আতঙ্কে সাধারণ মানুষ আহত পার্টিকর্মীদের উদ্ধারও করতে পারেননি। ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে ছুটে আসেন কমরেড বাদল শীলের মেয়ে সহ পরিজনরা। অতি সঙ্কটজনক অবস্থায় কমরেড শীলকে রাতেই আগরতলা নিয়ে আসা হয়। শনিবার সকালে জিবি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে বাদল শীলের মস্তিষ্কে জমা রক্ত বের করার জন্য অপারেশন করা হয়। অপরেশনের কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে প্রয়াত হন তিনি।
ত্রিপুরায় সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটি সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও তুলে দেয় সম্প্রতি। ধর্মনগর বিধানসভা এলাকায় গাড়িতে মাইক বেঁধে বিজেপি’র বাহিনী সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল সেই ভিডিও-তে। বিভিন্ন এলাকায় হুমকি এবং হামলার ঘটনায় সরব হন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। কিন্তু রাজ্যের বিজেপি সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে। বিলোনিয়ার রাজনগরে কমরেড বাদল শীলের হত্যাকাণ্ড তা স্পষ্ট করেছে।
TRIPURA COMRADE BADAL SIL
শহীদের শেষযাত্রায় জনতার ঢল ত্রিপুরায়, বিজেপি’র দুর্বৃত্তদের রোখার শপথ
×
Comments :0