Siliguri District Hospital

শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকে উধাও সদ্যোজাত শিশুর মৃতদেহ

রাজ্য জেলা

সুরক্ষা ব্যবস্থার ঢিলেমিতে প্রকাশ্য দিবালোকে সদ্যজাতের মৃতদেহ উধাও হয়ে গেলো জেলা হাসপাতাল থেকে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের ঘটনা জানাজানি হতেই বৃহস্পতিবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। 
জানা গেছে, শিলিগুড়ি ৪নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালাপট্টি এলাকার বাসিন্দা রিয়া গুপ্তাকে বুধবার বিকেলে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর মহিলার চিকিৎসা শুরু হতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রসূতির পরিবারকে জানান মায়ের গর্ভেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ওই প্রসূতি মহিলা। রাত প্রায় ১১টা নাগাদ পরিবারকে দেখানোও হয় মৃত সদ্যজাত সহ প্রসূতি মাকে। এরপর হাসপাতালের তরফে জানানো হয় চার ঘন্টা পরে তারা সদ্যজাতের দেহ নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু রাতে না নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটির দেহ নেওয়া হবে বলে পরিবারের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মৃত সদ্যজাতের কোন খোঁজ নেই। 
সদ্যজাতের দেহ নেওয়ার জন্য এদিন সকাল সকাল করেই পরিবারের লোকজন হাসপাতালে পৌঁছে যান। অভিযোগ, সকাল আটটা থেকে থেকে দিচ্ছি, দেব করতে করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর দুপুর হয়ে যায়। কিন্তু সদ্যজাতের দেহ তুলে দেওয়া হয়নি পরিবারের হাতে। দুপুর দুইটার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পরিবারকে জানানো হয় তাদের সদ্যজাতের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনা জানাজানি হতেই হই হট্টোগোল পড়ে যায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল চত্বর সহ গোটা এলাকায়। ঘটনায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। খবর পেয়ে শিলিগুড়ি থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। জানা গেছে, সকাল আটটার পর থেকেই শিশুটির খোঁজ মিলছিলো না। সদ্যজাতের মৃতদেহ নিখোঁজের ঘটনায় এদিন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্যরা ব্যাপক ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, লেবার রুম থেকেই সদ্যজাতের মৃতদেহ নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু কিভাবে নিখোঁজ হলো তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতাল ভারপ্রাপ্ত সুপার অমিত দত্ত জানান, সদ্যজাতের মৃতদেহ খুঁজে না পাওয়ার ঘটনা কিভাবে ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই সময় কর্তব্যরত প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে নার্স থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী সহ যারা যারা কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য বা জঞ্জাল অপসারনের ব্যাগগুলোতে ভুল করে সদ্যজাতের মৃতদেহ ভরে নিয়েছে কেউ অথবা কুকুর বা বেড়াল মুখে তুলে নিয়ে যেতে পারে বলেও ভারপ্রাপ্ত সুপারের অনুমান। 
রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা জোরদার করার দাবিতে গত দুইমাসেরও বেশী সময় ধরে চিকিৎসা জগতের সাথে যুক্তরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সময়ে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সদ্যজাতের মৃতদেহ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতির প্রমান মিলেছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে এখনও শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও তলানিতে পড়ে রয়েছে। শুধু চিকিৎসক বা চিকিৎসা কর্মী নয়, হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী, রোগীর পরিজন এমনকি মৃতদেহেরও নিরাপত্তা নেই হাসপাতালে। 

Comments :0

Login to leave a comment