New Education Policy

কেন্দ্রের ধাঁচ মেনেই রাজ্যের শিক্ষানীতি

রাজ্য

NEP 2023

শিক্ষাকে প্রসারিত করার বদলে সঙ্কুচিত করার অভিপ্রায় নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছে। মমতা ব্যানার্জির সরকারও সেই নীতিকে অনুসরণ করে তৈরি করেছে রাজ্যের নয়া শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতিকে রাজ্য মন্ত্রীসভার অনুমোদনের পর শনিবার গেজেট নোটিফিকেশন জারি করল শিক্ষা দপ্তর। জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্কুলস্তরে সেমিস্টার সিস্টেমে পড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রের এই ঘোষণা মেনে নিয়ে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণির পর থেকে সেমিস্টার সিস্টেমে পড়ানো হবে। একাদশ, দ্বাদশেও সেমিস্টার সিস্টেমে পড়ানোর কথা রাজ্যের নতুন শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগে নতুন নিয়মের কথা বলা হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে। সেই নীতি অনুসরণ করে রাজ্যের শিক্ষানীতিতেও নতুন শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম আনা হচ্ছে। রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, চাকরির শুরুতে শিক্ষকদের পাঁচ বছর গ্রামের স্কুলে পড়াতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, একেবারে প্রাথমিক স্তরে তিনটি ভাষায় পড়ার সুযোগ থাকবে। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা মাতৃভাষায়। উচ্চ প্রাথমিক স্তর থেকে তিন ভাষায় পড়ার সুযোগ দেওয়া হবে। রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বাংলা ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছে। তাহলে কি রাজ্যের সব পড়ুয়াকে বাংলা পড়তেই হবে? 
এ নিয়ে আগেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, ‘‘কলকাতার কোনও পড়ুয়া চাইলে প্রথম ভাষা হিসাবে বাংলা নিতে পারে। দার্জিলিঙে কেউ চাইলে প্রথম ভাষা হিসাবে নেপালি নিতে পারে। আবার কেউ যদি উর্দু, অলচিকি বা রাজবংশীকে প্রথম ভাষা করতে চায়, তা হলে সেটাও সে করতে পারে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনজাতির প্যাটার্নের উপর নির্ভর করবে, তারা কী ভাষা নেবে।’’ এদিকে রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক আলাদা পরীক্ষা হবে। মাধ্যমিক স্তরে বিষয় বাছা যাবে না। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে দু’টি এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে দু’টি সেমিস্টার হবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যে সব পড়ুয়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে তারা এই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির আওতায় আসবে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে হবে একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা। ২০২৫ সালের মার্চে হবে একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার। ওই বছর নভেম্বরে হবে দ্বাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার। ২০২৬ সালের মার্চে হবে দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার। দ্বাদশ শ্রেণির দু’টো সেমিস্টারের উপর মূল্যায়ন করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
রাজ্যের নতুন শিক্ষানীতিতে বাচ্চাদের প্রি-প্রাইমারি পড়তে হবে ১ বছরের আর চার বছরের প্রাইমারি ক্লাস হবে। তাছাড়া বাকি যা নিয়ম ছিল তা একই থাকছে। অর্থাৎ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি, তারপর নবম-দশম শেষে মাধ্যমিক। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শেষে উচ্চ মাধ্যমিক। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কাঠামো পাল্টাচ্ছে। সেমিস্টার পদ্ধতি এবং এমসিকিউ ধাঁচে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি আগেই মেনে নিয়ে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছরের স্নাতক অনার্স চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন অথবা চার বছরের ডিগ্রি কোর্স এবং ‘মাল্টিপল এন্ট্রি এগজিট’র সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। রাজ্যের শিক্ষানীতিও প্রায় একই কথা উল্লেখ রয়েছে। 
কী এই ‘মাল্টিপল এন্ট্রি এগজিট’?  ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতকে কিছু বিষয়কে ‘মেজর’ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর ৩ বছরে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে মিলবে ‘মেজর গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি। যদি ৪ বছরে এই কোর্স শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন, তাহলে মিলবে ‘অনার্স গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি। উচ্চশিক্ষার পরবর্তী স্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের মিলবে ‘অনার্স’ ডিগ্রি বা ‘অনার্স উইথ রিসার্চ’ ডিগ্রি। কলকাতা, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় চলতি শিক্ষাবর্ষে ‘মাল্টিপল এন্ট্রি এগজিট’ চালু করে দিয়েছে। তাছাড়া জাতীয় শিক্ষা নীতিতে অনলাইন ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উল্লেখ রয়েছে। রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, অনলাইন কোর্স পরিচালনা করবে নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Comments :0

Login to leave a comment