রাজ্য সরকার, পুলিশ প্রশাসনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরই কি শিকার আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী? অন্তত ঘটনাপরম্পরা এবং পুলিশের আচরণ তাই স্পষ্ট করছে।
গত ২১ জানুয়ারি কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী সহ ১৯জন কর্মীকে। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীদের জামিনের আবেদনের মরিয়া বিরোধিতাও করেছিলেন সরকারি আইনজীবী। আদালত তাঁদের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। ১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের পুলিশ হেপাজত থেকে জেল হেপাজতে পাঠানো হয়।
এরপরেই আবার কেএলসি (কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স) থানা মামলা সাজায় নওসাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। গত ২১ তারিখে হাতিশালায় আইএসএফ কর্মীদের ওপরেই তৃণমূলী দুষ্কৃতীবাহিনীর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় কলকাতা পুলিশের লেদার কমপ্লেক্স থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয় নওসাদ সিদ্দিকী সহ একাধিক আইএসএফ কর্মীদেরই বিরুদ্ধে। সেই মামলায় গত ৩ তারিখে বারুইপুর আদালত নওসাদ সিদ্দিকীকে ৯ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার বারুইপুর আদালতে তোলার কথা নওসাদ সিদ্দিকীকে।
এরই মধ্যে এবার নিউ মার্কেট থানায় রুজু হওয়া মামলার ভিত্তিতে পুলিশ নওসাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন জানালো আদালতে। অর্থাৎ কেএলসি থানার মামলায় যদি জেল হেপাজতে যান নওসাদ সিদ্দিকী, তবে নিউ মার্কেট থানার এফআইআর’র ভিত্তিতে ফের তাঁকে হেপাজতে নেবে কলকাতা পুলিশ। একের পর এক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা দায়ের করে রাজ্যের এক বিরোধী বিধায়ককে এভাবে পুলিশ লক-আপে ও জেলে দিনের পর দিন ঘোরানোর ঘটনায় তৃণমূল সরকারের দলতন্ত্রের চেহারাই বেআব্রু হচ্ছে।
ভাঙড়ে গত বিধানসভা ভোটে হেরেছে তৃণমূল। তারপর থেকেই সিপিআই(এম) ও আইএসএফ’র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস,মিথ্যা মামলা চলছে। তারপরেও ভাঙড়ে মাটি পায়নি শাসক তৃণমূল। তৃণমূলের ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় স্পষ্ট যেন এই সুযোগই খুঁজছিল তাঁরা। নওসাদ সিদ্দিকীকে একের পর এক মামলায় জেলে পুরে, একাধিক আইএসএফ কর্মীদের ঘরছাড়া করে ভাঙড়কে পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরোধীশূন্য করার খেলা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। ভাঙড়ে গত দু’মাস আগে থেকেই আরাবুল-কাইজার বাহিনী প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছে ভাঙড়ে বিরোধীদের কাউকে মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হবে না।
সেই লক্ষ্যেই এখন যেন হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে কলকাতা পুলিশ ও আরাবুল বাহিনী!
বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। নওসাদ সিদ্দিকী নির্বাচিত বিধায়ক। বিধানসভায় তাঁর যোগদান করার অধিকার রয়েছে। সেই দাবি তুলেই এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে গত ২১ তারিখে হেয়ার স্ট্রিট থানার মামলায় জামিনের আবেদন জানান নওসাদ সিদ্দিকীর তরফে তাঁর আইনজীবীরা। আইনজীবী মহম্মদ ইয়াসিন রহমান এদিন জানান, আমাদের তরফে নির্দিষ্টভাবে আদালতে জানানো হয়েছে নওসাদ সিদ্দিকী বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল কমিটির চেয়ারম্যানও বটে। বিধানসভায় তাঁর উপস্থিতি জরুরি। এভাবে আটকে রাখতে পারেনা প্রশাসন। একজন বিধায়ক হিসাবে, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ওঁর অধিবেশনে উপস্থিত থাকা খুবই জরুরি।
এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে শুনানিতে আইনজীবীরা বিধানসভার ঐ কমিটির নোটিসের কপিও দেখান যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে তাঁকে হাজির থাকতে হবে মিটিংয়ে।
নওসাদ সিদ্দিকীর তরফে আইনজীবীরা গত ২১ তারিখের কলকাতার ঘটনার একাধিক ছবি তুলে ধরেন আদালতে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে হামলাকারীরা মাথায় হেলমেট পরে। অর্থাৎ পুলিশই হামলা চালাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছেন জমায়েতকারীরা। নওসাদ সিদ্দিকী হামলা চালাচ্ছেন এরকম কোনও তথ্য আদালতে দেখাতে পারেনি পুলিশ। তারপরেও কীভাবে একজন সন্মানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে আইপিসি’র ৩০৭ ধারা অর্থাৎ খুনের চেষ্টার ধারা রুজু করা হলো? হেয়ার স্ট্রিট থানার মামলায় নওসাদ সিদ্দিকী সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আইপিসির ১৪৩, ১৪৭,১৪৯,১৫২,৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭,২৮৩,৪২৭ সহ পিডিপিপি আইনের ৮ ও ৯ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রতিহিংসার চোহারাই স্পষ্ট মামলার গতি প্রকৃতিতে। এই মামলাতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেপাজতেই রাখার যে নির্দেশ ছিল গত ১ তারিখে তাই বহাল থাকে।
এরই মধ্যে নতুন করে নিউ মার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় নওসাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রোডাকশান ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। যদিও নিউমার্কেট থানার এফআইআর-এ নওসাদ সিদ্দিকীর নাম ছিল না। গত ২১ তারিখে হেয়ার স্ট্রিট থানা ১৩জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। নিউমার্কেট থানা এক মহিলা সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। নতুন করে নিউমার্কেট থানার প্রোডাকশান ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদনেই স্পষ্ট তৃণমূল সরকার ও পুলিশ প্রশাসন রাজ্যের এক নির্বাচিত বিরোধী বিধায়ককে আপাতত জেল ও লক-আপেই আটকে রাখতে চাইছে।
Comments :0