Post Editorial on reservation policy

উচ্চবর্ণদের জন্য সংরক্ষণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

সংরক্ষণ নিয়ে আবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল গত ৭ নভেম্বর। ‘সংরক্ষণ’ শব্দটা শুনলেই আমাদের মাথায় আসে যে নিশ্চয়ই তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি), অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)  তাদের কোনও সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ৭ নভেম্বর রায় হয়েছে এদের বাদ দিয়ে, এই সমস্ত অংশের মধ্যে যাঁরা পড়েন না, শুধুমাত্র তাঁদের জন্য সংরক্ষণ নিয়ে এক রায় হয়েছে। 
অর্থনৈতিক অনগ্রসরদের জন্য কোটা ?
এই সংরক্ষণকে বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অনগ্রসরদের (ইডব্লিউএস) জন্য কোটা, কারণ যারা এই সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন, তাদের একটি অর্থনৈতিক মাপকাঠির নিচে থাকতে হবে।  সেই অর্থনৈতিক মাপকাঠি হচ্ছে  মাসিক আয় ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা হয় (বছরে ৮ লাখ টাকার কম), ২৯৯ কাঠা কৃষি জমি থাকে (৫ একর বা ১৫ বিঘার কম), থাকবার জন্য ৯৯৯ বর্গফুটের কোনও ফ্ল্যাট  (১০০০ বর্গফুটের কম)। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির তুলনায়, এতটা সম্পত্তির মালিককে ঠিক অর্থনৈতিক অনগ্রসর বলা চলে কিনা সে নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। 
কিন্তু, শুধু অর্থনৈতিকভাবে একটা মাপকাঠির তলায় পড়লেই হবে না, তার একটা সামাজিক অবস্থানও থাকতে হবে।  সে তিনটি অংশের অন্তর্ভুক্ত হলে চলবে না- (১)  তফসিলি জাতি, (২) তপসিলি উপজাতি, (৩) অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)। এই তিন অংশের মধ্যে প্রথম অংশ তফসিলি জাতি বলতে হিন্দু ধর্মের অস্পৃশ্য বা তথাকথিত নিম্নতম জাতগুলিকে বলে, এরা হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদের (চার বর্ণ - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) মধ্যে পড়ে না, এরা শূদ্রেরও নিচে। তফসিলি উপজাতি বলতে দেশের আদি জনজাতি বা আদিবাসীদের বোঝায় (এরা আদি অবস্থায় হিন্দু ধর্মে ছিল না, এখনও অনেকেই  হিন্দু ধর্মে নেই)। ইতিহাস বলে যে, নানা সামাজিক নিপীড়ন এই দুই অংশের উপর ছিল বহু যুগ ধরে, প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী সেই নিপীড়ন বর্তমানেও চলছে, পরিসংখ্যানেও এটা দেখা যায় যে এরা সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবেও দারুণভাবে পিছিয়ে। ওবিসি অস্পৃশ্য বা আদিবাসীদের মধ্যে পড়ে না, হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদের নিয়মানুযায়ী এরা শূদ্র বর্ণভুক্ত। এরাও ‘সামাজিক ও শিক্ষাগত’  দিক দিয়ে পিছিয়ে, তবে এদের উপর অস্পৃশ্যদের মতো সামাজিক নিপীড়ন নেই । এখন যে সংরক্ষণ ২০১৯ থেকে চালু হয়েছে, তা উপরোক্ত তিন অংশকে বাদ দিলে যারা থাকে তাদের জন্য, সংবিধান অনুযায়ী তারা ‘সামাজিক ও শিক্ষাগত’ দিক থেকে এগিয়ে। পরিসংখ্যানও তাদের এগিয়ে থাকার কথা বলে।     


সামগ্রিকভাবে যে সংরক্ষণ ২০১৯-এর পর দেশে চালু আছে তা সারণি-১ তে বলা হলো। সারণিতে দেখুন দেশের ১০০ শতাংশ মানুষের জন্যই সংরক্ষণ এখন চালু। 
  সারণি-১: ২০১৯ এর পরে যে সংরক্ষণ চালু আছে দেশে 
ক্যাটেগরি                 জনসংখ্যার শতাংশ            সংরক্ষণের শতাংশ 
তফসিলি জাতি      ১৬.৬১                 ১৫.৫
তফসিলি উপজাতি  ৮.৬১             ৭.৫ 
অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)* ৫২২       ২৭ 
সংবিধান অনুযায়ী সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে এগিয়ে থাকা অংশ  (হিন্দুদের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণ,  মুসলিমদের প্রায় ৪৮% সহ)* ২২.৮  ১০ 
মোট          ১০০           ৫৯.৫ 
সূত্র:  ১সেন্সাস রিপোর্ট-২০১১,   ২মণ্ডল কমিশন রিপোর্ট, *এদের সকলে সংরক্ষণের আওতায় নয়, একটা অর্থনৈতিক মাপকাঠি আছে   
ইডব্লিউ সংরক্ষণের ইতিকথা 
মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ভি পি সিং সরকার ওবিসিদের জন্য আদেশনামা বের করেছিল ১৯৯০ সালের ১৩ আগস্ট। তাতে দেশে প্রবল বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভে প্যাঁচে পড়েই হোক, আর অন্যদের অনুরোধেই হোক ভি পি সিং বাকি ‘সামাজিক ও শিক্ষাগত’ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা অংশের জন্যও  ৫-১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথাও ঘোষণা করেন ১৯৯০-এর ২৭ আগস্ট। এটাই ছিল ইডব্লিউএস সংরক্ষণ। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ চলতেই থাকে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট  মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করার উপর স্থগিতাদেশ দেয় ১ অক্টোবর, ১৯৯০। 


১৯৯১ সালে নরসিমা রাও সরকার এক আদেশনামায় অর্থনৈতিক বিষয়টি যুক্ত করে ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে এগিয়ে থাকা অংশের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করে। সুপ্রিম কোর্টে সরকারের আদেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়। ১৯৯২ সালে, এই মামলার রায়ে বলা হয় যে ওবিসি’র সংরক্ষণ থাকবে, কিন্তু যেহেতু ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না, তাই অন্য কোনও সংরক্ষণ চলবে না। 
২০১৯ সালে  সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে এগিয়ে থাকা অংশের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করে মোদী সরকার। এর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হয়। প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট কার্যকরী করতে ভি পি সিং সরকারকে সংবিধান সংশোধন করতে হয়নি, কারণ সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কথা ১৯৫১ সাল থেকে সংবিধানে ছিল। ২০১৯ সালে সংরক্ষণ চালু হওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টে তার সাংবিধানিক বৈধতা চালেঞ্জ করা হলেও সুপ্রিম কোর্ট তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেয়নি। ২০১৯ সালেই তা চালু হয়, সেই বছরই দেশের সর্বোচ্চ চাকরির জন্য যে সিভিল সার্ভিস (যেখান থেকে আইএএস, আইপিএস, আইএফএস নিয়োগ হয়) পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাতে এই সংরক্ষণ চালু হয়ে যায় (ইন্টারনেটে তার রেজাল্ট দেখতে পারেন)। ২০১৯ সাল থেকে আমাদের রাজ্যেও এই সংরক্ষণ চালু আছে। ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের যে রায় তা হচ্ছে এই সংরক্ষণ যে সাংবিধানিকভাবে বৈধ তা বলা হলো। 
ওবিসি সংরক্ষণ বনাম ইডব্লিউএস সংরক্ষণ
২০১৯ সাল থেকে যে ইডব্লিউএস সংরক্ষণ চালু হয়েছে, তার সাথে ওবিসিদের জন্য যে সংরক্ষণ ১৯৯২ থেকে চালু আছে তা মূলত এক। পার্থক্য শুধু - কাদের জন্য সংরক্ষণ। ওবিসি বলতে সামাজিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা অংশ বোঝায়, ইডব্লিউএস’র ক্ষেত্রে সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা অংশ। দুটি ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক মাপকাঠি আছে এবং বর্তমানে এই মাপকাঠি দুই ক্ষেত্রেই সমান। দুটি সংরক্ষণের ব্যাপারে তুলনামূলক আলোচনা করতে সারণি-২ দেখুন।  



সারণি-২: ওবিসি সংরক্ষণ বনাম ইডব্লিউএস সংরক্ষণ
বিষয়          ওবিসি সংরক্ষণ             ইডব্লিউএস  সংরক্ষণ
প্রথম কত সালে সরকারি আদেশ বেরোয়   ১৯৯০ ২০১৯
কাদের জন্য সংরক্ষণ তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি বাদে সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অংশ 
তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, ওবিসি বাদে বাকি সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা অংশ
সংবিধান সংশোধন করতে হয়নি। কারণ সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অংশর জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কথা ১৯৫১ থেকে সংবিধানে বলা ছিল
করতে হয়েছে। কারণ সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা অংশের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কথা সংবিধানে বলা ছিল না
অর্থনৈতিক মাপকাঠি মাসিক আয় ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা (বছরে ৮ লাখ টাকার কম), ২৯৯ কাঠা কৃষি জমি  (৫ একর বা ১৫ বিঘার কম), থাকবার জন্য ৯৯৯ বর্গফুটের কোনও ফ্ল্যাট  (১০০০ বর্গফুটের কম)  
মাসিক আয় ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা (বছরে ৮ লাখ টাকার কম), ২৯৯ কাঠা কৃষি জমি  (৫ একর বা ১৫ বিঘার কম), থাকবার জন্য ৯৯৯ বর্গফুটের কোনও ফ্ল্যাট  (১০০০ বর্গফুটের কম)
প্রথম কত সালে চালু হয় ১৯৯২ ২০১৯
প্রথম আদেশনামার পর প্রতিক্রিয়া    তীব্র বিক্ষোভ        প্রতিক্রিয়াহীন
আদেশনামার পর তা বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে কে আবেদন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন   ‘জনহিত অভিযান’ নামে এক সংস্থা
প্রথম আদেশনামার পর  সুপ্রিম কোর্টের  প্রতিক্রিয়া স্থগিতাদেশ স্থগিতাদেশ  হয়নি

সারণিতে দেখতেই পারছেন, ওবিসি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা এসেছে— সুপ্রিম কোর্ট থেকে, ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ থেকে। ইডব্লিউএস’র ক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু হয়েছে বাধাহীনভাবে, নিঃশব্দে। সাধারণত আদালতে সরকারি কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে নানা সংস্থা বা ব্যক্তি, ওবিসি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিষয়টা এতটাই সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিল যে তা বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আবেদন করেছিল। 
এতদিন ধরে বলা মেধার ব্যাপারটা কী হবে ?
মণ্ডল কমিশনের সুপারিশে ভি পি সিং সরকার যে ৫২ শতাংশ মানুষের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করার কথা বলেছিল, তার মধ্যে ৭ শতাংশ মুসলিম বাদ দিলে ৪৫ শতাংশ হিন্দু। কিন্তু যে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছিল তা করেছিল হিন্দুরাই, হিন্দুদের যারা সেই সময়ে সংরক্ষণের আওতায় পড়েননি- তারা হচ্ছে তফসিলি উপজাতি (আদিবাসী), তপসিলি জাতি (অস্পৃশ্য জাতিগুলি) ও ওবিসি (শূদ্র) বাদ দিয়ে বাকিরা - হিন্দু ধর্মে বর্ণের বিচারে যারা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় বর্ণের মধ্যে পড়ে।  
এক ছাত্র নিজের গায়ে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ জানিয়েছিল, তার দেখাদেখি আরও অনেকে নিজেদের গায়ে আগুন দিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল যে এতে মেধাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, দেশের এতে ক্ষতি হচ্ছে, দেশের জন্যই তাদের লড়াই। মেধা বলতে আমরা কী বুঝি ? সাধারণ হিসাবে মেধা বলতে তো যার রেজাল্ট ভালো, তাকেই মেধাবী বলে। তাহলে সংরক্ষণের সুযোগে যদি কম নম্বরের কেউ কোনও সুযোগ পায়, তার মানে তো তার চেয়ে ভালো নম্বর পাওয়া কোনও না কোনও মেধাবী বঞ্চিত হচ্ছে। এখন সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া কোন অংশের জন্য সংরক্ষণে যদি মেধাবীর বঞ্চনায় দেশের ক্ষতি হয়ে থাকে, ২০১৯ সাল থেকে যে সংরক্ষণ চালু হয়েছে, সেটাতেও তো তাই হবে। বলতে পারেন, এখন দরিদ্রদের জন্য দেওয়া হচ্ছে। সংবাদপত্রে দেখলাম, ১৯৯০ সালে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে সেদিনের গায়ে আগুন দেওয়া এক ছাত্রের পরিবার বলেছে, তারা খুশি যে এখন দারিদ্রের ভিত্তিতে সংরক্ষণ হচ্ছে। কিন্তু জাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণে কোনও মেধাবীর বঞ্চনায় যদি দেশের ক্ষতি হয়, দারিদ্রর ভিত্তিতে সংরক্ষণেও তো সেটা ঘটবে।  
আর এই সংরক্ষণ তো শুধু দারিদ্রের ভিত্তিতেও নয়, কয়েকটি জাত বাদে অন্যদের জন্য সংরক্ষণ, তাদেরও নির্দিষ্ট জাত ও সামাজিক অবস্থান আছে, সংবিধানের ভাষায় যে গোষ্ঠীগুলি সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে এগিয়ে।      


আর ওবিসিদের জন্যও তো দারিদ্রের ভিত্তিতেই সংরক্ষণ ছিল।  শুধু তফাত হছে, ওবিসিদের সংরক্ষণ সংবিধান অনুযায়ী সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য, আর আজকের ইডব্লিউএস সংরক্ষণ সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা অংশের জন্য- দুই ক্ষেত্রেই দারিদ্রের মাপকাঠিও এক (সারণি-২ দেখুন)।  তবে কি সেদিন ১৯৯০ সালে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের পাশাপাশি সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা অংশের জন্যও সংরক্ষণ ঘোষণা করলে এই আন্দোলন হতো না? বাস্তব ঘটনা দেখুন, ওবিসিদের জন্য  আদেশনামা বের হয়েছিল ১৯৯০ সালের ১৩ আগস্ট। ‘সামাজিক ও শিক্ষাগত’ ক্ষেত্রে  এগিয়ে থাকা অংশের জন্যও  ৫-১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথাও ঘোষণা হয়েছিল ১৯৯০-এর ২৭ আগস্ট। কিন্তু তাতে আন্দোলন থামেনি, আর আজকের  ইডব্লিউএস সংরক্ষণে ১৯৯০-এর ঘোষণার একটুও বাড়তি কিছু ঘটেনি। 
চাকরি কোথায় যে সংরক্ষণ ?


সারণি-১ দেখুন, এখন ১০০ শতাংশ মানুষের জন্যই সংরক্ষণ চালু। কিন্তু চাকরি কোথায়? ২০১২ সালে ন্যাশনাল স্টাটিসটিক্যাল কমিশনের অসংগঠিত ক্ষেত্র নিয়ে রিপোর্ট অনুযায়ী, যতটুকু কাজ লোকে পায়, তাতে কর্মরতদের ৯৩ শতাংশই আজ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করে, এখানে সংরক্ষণের প্রশ্ন নেই। এদের শতাংশ নিশ্চয়ই এখন আরও বেড়েছে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মচারী মিলিয়ে ২ শতাংশের কম, এর সাথে আধা সরকারি চাকরি যেখানে সংরক্ষণ চলে তা জুড়লেও মোট পরিমাণ ৪ শতাংশের কম, বাকি ৯৬ শতাংশের বেশি মানুষের জন্য কোনও সংরক্ষণ নেই। আর কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারে নিয়োগ হচ্ছে না। এখানের কর্মচারীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরগুলিতে মোট কাজ করত ৩৮.৭৬ লক্ষ, কিন্তু ২০১১ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৭ লক্ষে (সূত্র: মিনিষ্ট্রি অব লেবার অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট, ২০১৪)।  কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও রাজ্য সরকারগুলিতে মোট ৬০ লক্ষ ৮২ হাজার শূন্য পদ আছে।  কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় স্থায়ী কর্মচারী ও শ্রমিক সংখ্যা ছিল ২০১৩-১৪ তে ১৩.৫১ লক্ষ, ২০১৯-২০ তে তা দাঁড়িয়েছে ৯.২২ লক্ষ। আর এখন এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে চলছে ব্যাপক বেসরকারিকরণ। ফলে সংরক্ষণে কারো জন্য ব্যাপক কোনও পরিবর্তন হয়ে যাবে, সে আশা করা বৃথা।
 

Comments :0

Login to leave a comment