HOWRAH TORTURE

চুরির সন্দেহে গোটা পরিবারের মাথা কামিয়ে ‘শাস্তি’ হাওড়ায়

জেলা

অত্যাচারিত পরিবারের মাথা কামিয়ে নেওয়া হয়েছে এভাবেই।

শুভাশিস দেব সরকার

চুরির সন্দেহ মেয়ের ওপর। সেই সন্দেহে গোটা পরিবারের মাথার চুল কেটে নেওয়া হলো। চলল মারধরও। হাওড়ার এই ঘটনায় ছড়িয়েছে ক্ষোভ। তার জেরে লিলুয়া থানার পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 
চুরির কোন অভিযোগ থানায় না জানিয়ে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। 
আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে তাঁদের বাড়ির মেয়ে কাজ করত কাছেই এক বাড়িতে। বিত্তবান সেই বাড়ির লোকেদের সন্দেহ হয় পরিচারিকা চুরি করেছেন। এরপরই শুরু হয় অত্যাচার। 
ডোমজুড় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া একি ভিডিও-তে দেখা যায় একই পরিবারের তিন জনকে পাশাপাশি বসিয়ে রেখে কাঁচি দিয়ে মহিলার চুল কেটে দেওয়া হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করছেন না। অসহায় হয়ে বসে আছেন মহিলা এবং তাঁর স্বামী। পাশেই রয়েছেন তাঁদের পুত্রও। 
কিশোরীর বাবা জানিয়েছেন, ছেলে এবং পুত্রবধূর চুল কেটে শাস্তি দেওয়া হয়। পরের দিন ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে এবং তাঁর স্তরে। তাঁদেরও চুল কেটে দেওয়া হয়। 
ডোমজুড়ের উত্তর কলোড়া অঞ্চলে এক হোসিয়ারী দ্রব্যের ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ করতেন এক তরুণী। কয়েকদিন আগে পরিচালিকা তরুণী কাজ ছেড়ে চলে যান। ঠিক তখনই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ টাকা চুরি হয় বলে অভিযোগ। পরিচারিকাই টাকা নিয়েছে বলে সন্দেহ করে ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য। এলাকার কয়েকজন মাতব্বরকে নিয়ে ব্যবসায়ী পরিবার পরিচারিকার বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যবসায়ীর কারখানায় নিয়ে আসেন। 
পরিচালিকার বাবার অভিযোগ কারখানায় নিয়ে এসে প্রথমে তাদের মারধর করা হয়। পরে পরিচারিকার বাবা, মা  ভাইয়ের চুল কেটে নেওয়া হয়। পরে ওই পরিবারটিকে ঘর থেকে তাড়িয়ে গ্রামের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। গ্রামে ঢুকলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। 
তার পর থেকে গ্রাম ছেড়ে ১০ কিলোমিটার দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে না খেয়ে দিন কাটছিল বলে পুলিশকে জানান।
ঘটনার ভিডিও বেরিয়ে পড়তেই ছড়াতে থাকে ক্ষোভ। তার জেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতিতা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। নির্যাতিতা পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হাসান লস্কর, ইশা লস্কর ও শ্যাম লস্করকে গ্রেপ্তার করে ডোমজুড় থানার পুলিশ। 
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণকুমার ত্রিপাঠী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এফআইআর-এ নাম থাকা তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। আরও কেউ যুক্ত থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বর্বর এই অত্যাচার চলল কোন সাহসে, উঠেছে সে প্রশ্ন। কেবল চুল কেটে নেওয়া নয়। কিশোরীর মা জানিয়েছেন, দলবল নিয়ে প্রভাবশালী ওই পরিবার তাঁদের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়। ফের অত্যাচারের ভয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় আক্রান্ত পরিবার। 
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রভাবশালীরা এমন ‘শাস্তি’ দিচ্ছে। কোথাও কোথাও বসছে সালিশি সভা। অত্যাচার এবং সামাজিক অসম্মানের নিষ্ঠুরতা চলছে স্থানীয়দের সামনে। অথচ কেউ সরাসরি প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছেন না। ভিডিও ছড়িয়ে যাওয়ার আগে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আবার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে সতর্ককারীর বিরুদ্ধেই পুলিশ মামলা করছে! আখেরে মদত মিলছে অন্যায়ে।

Comments :0

Login to leave a comment