বই
সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি ও মৈত্রী আন্দোলনের প্রথম পর্ব
সুবিনয় মিশ্র
মুক্তধারা
ভারতের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও মৈত্রী আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই আন্দোলনের সাংগঠনিক ঐতিহ্যেরও ৮০
বছর পূর্ণ হলো। যার সূচনা হয়েছিল সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি গঠনের মধ্য দিয়ে। ১৯৪১ সালের ২২ জুন নাৎসি বাহিনীর
দ্বারা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রান্ত হলে একমাসের মধ্যে ১৯৪১সালের ২১ জুলাই প্রখ্যাত সাংবাদিক সত্যেন্দ্রনাথ
মজুমদারের সভাপতিত্বে ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’ গড়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। যে সংগঠনের ইংরেজি নাম ছিল ‘Friends
Of the Soviet Union’, সংক্ষেপে ‘FSU’।
সেই সময়ে সোভিয়েত সংস্কৃতিকে প্রগতিশীল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ ও নতুন সভ্যতা রূপে গণ্য করা হতো।
ফ্যাসিবাদের আক্রমণে সেই সভ্যতা নষ্ট হতে বসেছিল। সেই সময়ে এদেশের অগ্রণী চিন্তাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিক এই নতুন
সভ্যতাকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করে বলেছিলেন, এই নতুন ‘সভ্যতা যখন বিপদাপন্ন তখন
আমরা যুগব্যাপী অন্নাভাবে জীর্ণ, হীনতায় নিমজ্জিত ভারতবাসীরা নিরুদ্বিগ্ন থাকিতে পারি না।’ এর প্রথম স্বাক্ষরকারী ছিলেন
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
সোভিয়েত সভ্যতা তার আদর্শ ও তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের মানুষের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কাজে নেমেছিল এই
সমিতি। এই ধরনের মৈত্রী সংগঠনের প্রয়োজন যে আছে কমিউনিস্টরা ছাড়াও কংগ্রেসের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষও
অনুভব করেছিলেন। পরে টাউন হলের এক ঐতিহাসিক সভা থেকে (২০ জুলাই) ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’র একটি
কমিটি নির্বাচিত হয়েছিল। সমিতির সভাপতি ছিলেন ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। যুগ্ম সম্পাদক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও
স্নেহাংশুকান্ত আচার্য। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন রাধারমণ মিত্র, গোপাল হালদার, সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামী, জ্যোতি বসু,
নীরেন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই সমিতির পৃষ্ঠপোষক পদ গ্রহণে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তখন তিনি অবশ্য খুবই অসুস্থ ছিলেন।
জ্যোতি বসু ও সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামী শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন। কিছু কথাবার্তার পর রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্মতি প্রদান
করেছিলেন।
জ্যোতি বসু যে সময়ে ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’র বাংলা কমিটির সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি তখন রেল শ্রমিকদের
নেতাও ছিলেন। বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে ঘুরে শ্রমিকদের মধ্যে সোভিয়েত সভ্যতা সম্পর্কে ও সেখানে কি ঘটছে সেকথা ব্যক্ত
করতেন। সেই অভিজ্ঞতা তিনি ‘Indo-Soviet Journal, March22,1943’ সংখ্যায় লিখেছিলেন। যার শিরোনাম
ছিল ‘Tell Them About The Soviets’। সেটি এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এছাড়াও সংকলিত হয়েছে এই
সমিতির ১৯৪৪ সালের প্রাদেশিক কনফারেন্সের ইশ্তেহার, সাপ্তাহিক বম্বে ক্রোনিকলে প্রকাশিত সমিতির প্রথম সর্বভারতীয়
কংগ্রেস সম্পর্কে একটি সম্পাদকীয়, বালিনের পতন উপলক্ষে লালফৌজের প্রতি কলকাতার উদ্ছ্বসিত অভিনন্দন,
সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি নিয়ে হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও স্নেহাংশুকান্ত আচার্য়ের দুটি পৃথক রচনা ও নানাবিধ তথ্য।
এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু আলোকচিত্র।
সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি নিয়ে নানা ধরনের লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু এমন তথ্যবহুল আলোচনার অভাব ছিল। ভারতের
সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও মৈত্রী আন্দোলনের প্রথম পর্বের গৌরবময় ইতিহাস এবং সোভিয়েত সুহৃদ সমিতির নানা জানা
অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন ভারতের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও মৈত্রী সমিতির (ইসকাফ) সর্বভারতীয় চেয়ারম্যান ভানুদেব
দত্ত। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি : সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও মৈত্রী আন্দোলনের প্রথম পর্ব
ভানুদেব দত্ত। ইসকাফ, পশ্চিমবঙ্গ। ৭৭, লেনিন সরণি, কলকাতা—৭০০ ০১৩। ১৫০ টাকা।
Comments :0