Alia University

আলিয়া বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলনে পড়ুয়ারা

রাজ্য কলকাতা

Alia University students movement bengali news

তৃণমূল সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে রেজিস্টারের ঘরের সামনে অবস্থানে বসলেন পড়ুয়ারা। সেখানে বসেই ইফতারও সারলেন তাঁরা। বেলাশেষে রেজিস্টার তাঁদের সঙ্গে দেখা করে বলেন তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল না ফেরানো পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।

দীর্ঘদিন ধরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে চরম অব্যবস্থার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার। বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্য, কন্ট্রোলার থেকে শুরু করে সমস্ত গূরূত্বপূর্ণ পদ খালি পড়ে রয়েছে সেখানে। ন্যাক সেখানে শেষ কবে পর্যবেক্ষণে এসছে কেউ জানে না। এরই মধ্যে চরম অভ্যন্তরীণ সমস্যার মধ্যে দিয়েও যেতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। 

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। লাইব্রেরীতে বই নেই, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কার্যত কোনো বিভাগেই ল্যাবোরেটরির পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। হোস্টেল সংখ্যা অত্যন্ত কম এবং হোস্টেলে পানীয় জলের অবস্থা শোচনীয়। রোজার মধ্যে তাই প্রতিদিন বাইরে থেকে জল কিনে খেতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। সবমিলিয়ে এক বিশাল আয়তনের কবরে পরিণত হয়েছে আলিয়া। এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।

পদার্থবিদ্যার স্নাতোকোত্তর স্তরের ছাত্র উসামা চৌধুরী বলছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যত কঙ্কালে রূপান্তরিত করেছে প্রশাসন। এখানে শেষবার ন্যাক এসেছিলো ২০১৫সালেরও আগে। বর্তমানে আমরা এই সংশয়ে ভুগছি যে ইউজিসি না কোনোদিন বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ করে দেয়। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবেই ন্যাককে ডাকছে না কারণ তাঁরা আসলে অনেক হিসেব দিতে হবে তাতে কেরচো খঁড়তে কেউটে বেরিয়ে যেতে পারে! নয়তো প্রতিবছর বিধানসভায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢালাও টাকা বরাদ্দ হয়, সেগুলো যায় কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোতে তো আমরা কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারছি না।’

‘এই মূহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গূরূত্বপূর্ণ সমস্যা হল হোস্টেলের সমস্যা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়তে আসে তাঁদের ৯০শতাংশই গ্রামের মেধাবী ছাত্রছাত্রীর দল। অথচ মোট ছাত্রের মাত্র ১০শতাংশের আবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিদের অতিরিক্ত খরচ করে বাড়িভাড়া করে থাকতে হয়। তাতে ভীষণই সমস্যা সূষ্টি হয় অনেকের পরিবারেই। এর পাশাপাশি রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। মেয়ে ও ছেলে উভয় হোস্টেলেই ওয়াটার পিউরিফায়্যারগুলি খারাপ হয়ে গেছে দীর্ঘদিন। বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্তেও কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ইতিমধ্যে রোজা শুরু হয়েছে। রোজার মধ্যে জল কতটা প্রয়োজনীয় আমরা সবাই জানি। কিন্তু তারপরও কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।’

‘এছাড়াও এতবড়ো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটাও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা নেই। লাইব্রেরির পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ। সেখানে বইয়েরও অভাব চলে আসচে দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় সমস্ত ল্যাবোরেটরিরই পরিকাঠামো এতটাই খারাপ যে সেখানে নূন্যতম কাজ করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি বিভাগে মাত্র দুজন শিক্ষক পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। এইরকম চরম অবহেলায় কার্যত ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যাচ্ছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের হাল ফেরাতে আজ দুপুর থেকে অবস্তানের সিদ্দান্ত নিয়েছি আমরা। অবস্থানকারীদের অনেকেই রোজা পালন করছেন। তাই আজ রেজিস্টারের ঘরের সামনেই ইফতার সেরেছি আমরা। যতক্ষণ না আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে এই অবস্থান চলছে।’

এদিন তাঁদের লড়াইয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদেরও যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।

এই বিষয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তারিকুল আনোয়ার বলছেন, ‘আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হওয়া এই অচলাবস্থা কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়। পরিকল্পনামাফিকই রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এখন সংখ্যালঘু দপ্তরের মন্ত্রী পাল্টে দিয়ে মানুষের মন ভোলাতে চাইছেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা আজ বুঝে গেছে যে মুখ্যমন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনেই কাজ হচ্ছে না। রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর এই আক্রমণ মানুষ মেনে নেবে না। তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়বে তৃণমূল সরকার।’


 

Comments :0

Login to leave a comment