NATO Membership

ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য ঘোষণা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক

NATO Membership

                        
                        

ইউক্রেনের বহুতল আবাসনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানী কিয়েভে সরকারিভাবে এই কথা জানানো হয়। গত শনিবার দেশের দক্ষিণ পূর্বের নিপ্রো শহরে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে ওই আবাসিক বহুতলটির একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে। প্রায় বিধ্বস্ত, বসবাসের পক্ষে অনুপযুক্ত গোটা বহুতলটিই। শনিবার রাত থেকেই আক্রান্ত বহুতল থেকে আবাসিকদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। মঙ্গলবারেও উদ্ধারকারীরা ভেঙে পড়া ভবনটির ধসের তলা থেকে আরও একটি শিশুর দেহ বের করে আনেন।


রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাতে নিপ্রোর সাম্প্রতিক এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই সব থেকে ভয়াবহ। ইতিমধ্যে বহুতল থেকে ৫টি শিশু সহ ৪৪ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মহিলারাও রয়েছেন। আহত ৭৯ জন। বর্তমানে আবাসনের ২০ জন বাসিন্দার কোনও খোঁজ নেই। নিপ্রোর মেয়র বহুতলের ধসের তলা থেকে আর কাউকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কম বলেই জানান।
ইউক্রেনের সরকার হামলার জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছে। কিন্তু মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্রুটির খেসারত দিতে হয়েছে নিপ্রোর বিধ্বস্ত বহুতলের আবাসিকদের। গত শনিবার দুপুরে নিপ্রোর বহুতলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। তার পর রাতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্টোভিক সাংবাদিকদের কাছে জানান, আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গন্ডগোলের জেরেই ক্ষেপণাস্ত্রটি ওই ভবনে আছড়ে পড়ে। এর পর দেশের নানা মহল থেকে সমালোচিত হন আরেস্টোভিক।


মঙ্গলবার দুপুরে কিয়েভে সরকারিভাবে আরেস্টোভিক পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে জানানো হয় ওই উপদেষ্টা ভুল বলার বিষয়ে স্বীকার করেছেন বলেও। প্রসঙ্গত, আরেস্টোভিকের বক্তব্যের আগেই মস্কো ঘোষণা করে ইউক্রেনের কোনও আবাসিক অঞ্চলে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেনি। সেই থেকে গোটা ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যথেষ্ট জলঘোলা হয়। মঙ্গলবার কিয়েভে সাংবাদিকরা ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কিকে তাঁর উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু তিনি প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি।
ঘটনাচক্রে আরেস্টোভিক ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত সংঘর্ষের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা রকমের ভিডিও, খবর, সমীক্ষা, পূর্বানুমান প্রভৃতি প্রকাশ করতেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ তা দেখতেন। এমন পরিচিত এক কূটনৈতিক আচমকাই পদত্যাগ করায় কিয়েভ যে বেশ অস্বস্তিতে পেড়েছে তা বলার প্রয়োজন পড়ে না।

এদিকে ইউক্রেন কার্যত যুদ্ধবাজ জোট ন্যাটোর সদস্য বলেই সংবাদ সংস্থা বিবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোনোরকমের রাখ ঢাক না করেই জানিয়েছেন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ। ইউক্রেনের মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার শুধু রাশিয়ার সীমান্তেই নয়, বরং সমগ্র পূর্ব ইউরোপেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসী সামরিক জোটের ঘটক হিসাবে ইউক্রেন সামরিক তৎপরতা বজায় রেখেছে এবং রাখতে চায়। অন্যদিকে রেজনিকভের প্রকাশ্য বিবৃতি বেআব্রু করে দিয়েছে ওয়াশিংটনের রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিরপেক্ষতা অবলম্বের মেকি নাটকও।


উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করে। এই মারাত্মক সামরিক সংঘাতের মূল কারণ ছিল ইউক্রেনের ন্যাটোতে শামিল হওয়ার তোড়জোর। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমী শক্তিগুলি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণে গতি বাড়াচ্ছিল। যার মূল লক্ষ্য ছিল মস্কোর ওপরে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। ক্রমশ দখল করা রাশিয়ার পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপের ন্যাটোর সামরিক জালের বাইরে থাকা দেশগুলির বিশাল শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের। দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক সঙ্কটের আবহে মুমুর্ষু নয়া উদারনীতিকে খানিক সময়ের জন্য হলেও মহার্ঘ অক্সিজেন জোগাবে। 

Comments :0

Login to leave a comment