MAMATA MEETING IN MALDA

প্রশাসনিক সভায় দাঁড়িয়ে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার মমতার

রাজ্য

CPIM TMC AWAS CORRUPTION RURAL BENGAL WEST BENGAL POLITICS  BJP BENGALI NEWS

দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির জন্য সরাসরি মমতা ব্যানার্জিকে দায়ী করে আসছে সিপিআই(এম)। মঙ্গলবার মালদহের গাজোলের প্রশাসনিক সভা থেকে নিজের মুখে দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার কথা স্বীকার করলেন মমতা। এই সভাতে যোগ দিতে যাওয়ার পথেই সোমবার রাতে দুর্ঘটনায় পড়ে লোকশিল্পী বোঝাই একটি বাস। সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ৪জন। 

ঠিক কী বলেছেন এদিন মমতা?

জেলার পুলিশ প্রশাসনকে পাশে বসিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমার মনে আছে পুরুলিয়ার কোটাটাই এই ডাকাত গদ্দাররা কেটে দিয়েছিল। পুরুলিয়ার কোটাটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। কীসের বিনিময়ে নাই বা বললাম। তারপর আমি বললাম, সব জেলার কোটা থাকে। ওরা কেন বঞ্চিত হবে। আমি কোটা বাড়িয়ে কাজের ব্যবস্থা করে দিলাম।’’

প্রসঙ্গত এখানে ডাকাত গদ্দার মানে শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর বাহিনী। এবং ‘কোটা’ মানে শিক্ষক নিয়োগের জেলা ভিত্তিক কোটা, যাঁর আইনত এবং প্রশাসনিক কোনও বৈধতাই নেই।  এই বক্তব্যের কিছু আগে নিজের দলকে চোরেদের দলের সঙ্গেও তুলনা করে ফেলেছেন মমতা। তাঁর দাবি, ‘‘ আমরা যদি চোর হই, তোরা তাহলে ডাকাত।’’ 

মমতার এই বক্তব্যকে ঘিরে রাজ্যে স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের একাধিক বর্তমান এবং অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকের দাবি, শিক্ষক নিয়োগের জেলা ভিত্তিক কোটার কোনো আইনগত বৈধতাই নেই। নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। সেখানে জেলার কোটার প্রশ্ন থাকবে কী করে? 

ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এরাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব থাকতো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হাতে। ওই সময় জেলা ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হতো। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তখনই জেলবন্দী মানিক ভট্টাচার্যকে মাথায় রেখে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের হাতে। তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল। যে পরীক্ষায় দুর্নীতি এখন সিবিআই তদন্তের আওতায়। কিন্তু সেখানেও কোথাও ‘জেলার কোটা’ ছিল না। 

শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের হাতে সবটা তুলে দিয়ে টেবিলের তলায় জেলার কোটা চালু করেছিল তৃণমূল। সেই কোটা ভাঙিয়ে শাসকদলের একের পর এক জেলার নেতা দুর্নীতি করেছে। চাকরি দেওয়ার নামে হয়েছে কোটি কোটি টাকার হাতবদল। এতদিন অবধি মমতা ব্যানার্জি বলে এসেছেন, তিনি দুর্নীতির কিছুই জানেন না। কিন্তু এদিনের সভায় তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, সবটাই তিনি জানতেন। এবং শুধু তাই নয়, প্রয়োজন মতো সেই অন্যায়ের অংশও হতেন তিনি। এবং সবটাই করতেন মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক চেয়ারে বসে। 

মমতা ব্যানার্জি যেই সময়ের কথা বলছেন, সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুরুলিয়া জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতেই। পুরুলিয়া জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘ওই সময় পুরুলিয়া জেলাতে প্রাথমিক শিক্ষক পদে যাদের নিয়োগ করা হয়েছিল তারা সব পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা। নিয়োগের পর্বের পরেই অতিমারি চলে আসে। লকডাউনের মধ্যেই পুরুলিয়া থেকে বদলি করে পূর্ব মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল। গোটাটাই হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে।’’

যদিও তৃণমূলে থাকার সময় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে মুখে রা কাড়েননি মমতা ব্যানার্জি। অর্থাৎ অন্যায় এবং ষড়যন্ত্রের সক্রিয় অংশীদার তিনিও। এবং এই গোটা প্রক্রিয়ায় যে বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে, তাও স্বীকার করেছেন মমতা। তাঁর ছোট্ট অথচ তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, ‘‘কীসের বিনিময়ে কোটা পকেটে ঢুকিয়েছিল, নাই বা বললাম’’ 

অর্থাৎ ইঙ্গিত খুবই স্পষ্ট। 

মমতা ব্যানার্জির দুর্নীতি স্বীকার করে নেওয়ার প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন পুরুলিয়ার সভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘ মমতা সভা থেকে বলেছে পুরুলিয়ার চাকরির কোটা শুভেন্দু নিয়ে গিয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট, কালীঘাটে বসে মমতা আর অভিষেক মিলে চাকরির কোটা ঠিক করেছে। নিয়োগ দুর্নীতির আঁতুরঘর হল কালীঘাট। কিন্তু তারপরেও সেখানে খোঁড়াখুড়ি না করে বিজেপি আরএসএস বলছে কুতুব মিনারের তলায়, তাজমহলের তলায় খুঁড়তে হবে।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment