Chatkal Labor Union

২৭ দফা দাবিতে ডেপুটেশন ২১ চটকল শ্রমিক ইউনিয়নের

রাজ্য

Chatkal Labor Union

ন্যূনতম মাসিক মজুরি ২৬ হাজার টাকা, স্থায়ী কর্মী নিয়োগ, কর্মীদের অন্যায় ছাঁটাইয়ের বিচার সহ চটকল শ্রমিকদের ২৭ দফা দাবি নিরসনে বিক্ষোভ, অবরোধ সহ শ্রমমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন জমা দিল বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়ন সহ ২১টি ট্রেড ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার বাবুঘাটের সামনে স্ট্র্যান্ড রোডে জমায়েতের পর নব মহাকরণ ভবনে শ্রম দপ্তরে ডেপুটেশন দিতে যায় ২১টি সংগঠন থেকে মোট ১১ জন প্রতিনিধির একটি দল। 


প্রতিনিধিদলে ছিলেন বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু (সিআইটিইউ), আইএনটিইউসি’র গণেশ সরকার, এআইইউটিইউসি’র অমল সেন, টিইউসিসি দেবদাস চ্যাটার্জি, বিএমএস’র বিনোদ সিংহ, ইউটিইউসি’র মুজিবর রহমান, এআইসিসিটিইউ’র নব্যেন্দু দাশগুপ্ত, এইচএমএস রামনারায়ণ সাউ, আরসিএমইউ’র শঙ্কর পান্ডে, এআইটিইউসি’র দেবাশিস দত্ত এবং বিজেএসএস সংগঠনের সংযোগ রায়। নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আগামী ১৪ ডিসেম্বর চটকল শ্রমিকদের দাবিসনদ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। 

 


এদিন শ্রম দপ্তর অভিযানে বাবুঘাট থেকে মিছিল করে নব মহাকরণের সামনে এসে বিক্ষোভসভা করেন ২১টি ট্রেড ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। এই সভায় বক্তব্য রাখেন অনাদি সাহু ছাড়াও সিআইটিইউ নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জি, এএনটিইউসি নেতা মাস্টার নিজাম, এআইটিইউসি’র দেবাশিস দত্ত, এআইসিসিটিইউ’র অতনু চক্রবর্তী সহ নেতৃবৃন্দ। 

 


নেতৃবৃন্দ এদিন বলেন, বাংলা তথা সারা দেশে চটশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে শ্রমিকদের দাবিগুলি অবিলম্বে পূরণ করতেই হবে সরকারকে। বিগত তিন বছর ধরে চটশিল্পে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমানে চটশিল্পে কোনও স্থায়ী কর্মী নেই বললেই চলে। যাঁদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে, তাঁদের মাসে ১৮ হাজার টাকাও বেতন দেওয়া হয় না। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পিএফ, ইএসআই সহ বিভিন্ন খাতের কোটি কোটি টাকা আজও বকেয়া রেয়েছে। আমাদের দাবি, অবিলম্বে ১৯৭১-র চুক্তি অনুযায়ী চটশিল্পের ৯০ শতাংশ কর্মীকে স্থায়ী পদ দিতে হবে সরকারকে এবং তার পাশাপাশি সমস্ত কর্মীর ন্যূনতম মাসিক মজুরি ২৬ হাজার টাকা করতে হবে। কর্মচারীদের দক্ষতা অনুযায়ী গ্রেডেশন এবং স্কেল সিস্টেম চালু করতে হবে সরকারকে। 

 

 

 

এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কর্মীদের ডিএ প্রতি পয়েন্টে ১.৯ থেকে ২.৫ টাকা করতে হবে প্রশাসনকে। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিমধ্যে চটশিল্প থেকে অভূতপূর্ব নিয়মে কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করেছে সরকার। বিভিন্ন অজুহাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই গেটের বাইরে করে দেওয়া হচ্ছে চটশিল্পের শ্রমিকদের। মালিকের কোনও অধিকার নেই এইরকম বেআইনিভাবে কর্মীদের বরখাস্ত করার। মন্ত্রীদের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি এই ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্ত মালিকদের শাস্তি দিতে হবে অবিলম্বে। রাজ্য সরকারের উচিত, এই দাবিগুলি দিল্লির সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং এর পক্ষে সুপারিশ করা। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে চটশিল্প অন্যতম প্রধান একটি শিল্প, সেখানকার সরকার যদি চট শ্রমিকদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই।

 


নেতৃবৃন্দ জানান, অন্যান্য সমস্যাগুলির পাশাপাশি চটকর্মীদের একটি মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের বাসস্থানের পরিবেশ। শ্রমিক কোয়ার্টারগুলি একেবারেই বসবাসের উপযুক্ত নয়। ভীষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে শ্রমিকদের। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে দ্রুত তাঁদের বাসস্থানগুলিকে সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। 
এদিন নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মজদুরদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ষড়যন্ত্র করে ৯টি চটকল বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। অথচ একথা সবাই জানেন যে আজ অবধি মজদুরদের সমস্যার জন্য একদিনের জন্যও কোনও চটকল কখনও বন্ধ হয়নি। কোনও শ্রমিকই কখনো চাইবেন না তাঁর রোজগারের পথ বন্ধ করে দিতে। এসবই সরকারের দূরভিসন্ধির অংশমাত্র। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই চটকলগুলিকেও চালু করে সেখানে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে সরকারকে।

Comments :0

Login to leave a comment