পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলছে এসআইআর’র কাজ। পশ্চিমবঙ্গে এনুমারেশন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১১ ডিসেম্বর। ১২টি রাজ্যের মধ্য বাকি ৬টি রাজ্যে এই কাজের সময় বাড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত ৪ নভেম্বর থেকে বিএলওরা বিএলএ’দের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফরম বিলি ও সংগ্রহ করে তা নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে আপলোড করছেন। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গ ৬টি রাজ্যে ১৬ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে।
কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, অনলাইলের সঙ্গে অফলাইনেও ভোটার তালিকায় নিজের নাম দেখা যাবে। বিএলও’দের কাছে যেমন খসড়া ভোটার তালিকা থাকবে তেমনি রাজনৈতিক দলের কাছে যেমন খসড়া ভোটার তালিকা থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অফলাইনে ভোটার তালিকায় নাম আছে কিনা দেখে নেওয়া যাবে বিএলও ও স্বীকৃতি রাজনৈতিক দলের কাছে থেকে। অনলাইনে এপিক কার্ড নাম্বরের সঙ্গে নামও লাগবে। খসড়া তালিকায় কাদের নাম থাকছে আর কাদের বাদ পড়ছে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট eci.gov.in, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের ওয়েবসাইট ceowestbengal.wb.gov.in কিংবা eci net অ্যাপে গিয়ে নিজের নাম এবং এপিক নম্বর দিতে হবে। তাতেই জানা যাবে খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে কিনা। এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট ভোটারের জেলার তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক (ডিইও)-দের ওয়েবসাইটে গিয়েও খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে কি না, তা দেখা যাবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, খসড়া তালিকা থেকে যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তা নিয়েও পৃথক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই তালিকা সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ এবং দাবি কমিশনে জানানো যাবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। সে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা, বিতর্কের নিষ্পত্তি করা, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে শুনানিতে (হিয়ারিং) ডাকা এবং আলোচনার সাপেক্ষে সন্দেহ দূর করার কাজ ইআরও-রা করবেন ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সব শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে।
সূত্রের খবর, ভোটারদের মোট তিনটি তালিকায় ভাগ করেছে কমিশন নিজস্ব (সেলফ) ম্যাপিং, প্রজিনি ম্যাপিং এবং নন-ম্যাপিং। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (রাজ্যে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে) যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা নিজস্ব ম্যাপিংয়ের তালিকায় পড়েছেন। এমন ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮ জন ভোটারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না-থাকলেও বাবা-মা বা আত্মীয়ের নাম আছে, তাঁরা প্রজিনি ম্যাপিং তালিকায় রয়েছেন। রাজ্যে তেমন ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৩৯ জন। এছাড়া, ৩০ লক্ষ ভোটার রয়েছেন, যাঁদের নিজেদের নাম বা আত্মীয়ের নামও ২০০২ সালের তালিকায় নেই। তাঁরা নন-ম্যাপিং তালিকাভুক্ত। এই তৃতীয় তালিকার সকলকেই কমিশনের তরফে শুনানিতে ডাকা হবে। তাঁদের তথ্যপ্রমাণ, নথি যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া, প্রথম দুই তালিকার ভোটারদের মধ্যে কারও তথ্যে সন্দেহ থাকলে তাঁদেরও শুনানিতে ডাকা হতে পারে।
এদিকে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এসআইআর-এর যে স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এ রাজ্যে যা ফর্ম বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন তারমধ্যে ৫৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৫১টি এনুমারেশন ফর্ম অনকালেক্টটেবল অর্থাৎ ফেরত আসেনি। এই নামগুলি বাদ যেতে পারে বলা যেতেই পারে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অনকালেক্টটেবল রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৭ (৯.৪৯ শতাশ), উত্তর ২৪ পরগনায় ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ৬৪ (৯.৫৪ শতাংশ), কলকাতা উত্তরে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৫৭ (২৫.৯৩ শতাংশ), কলকাতা দক্ষিণে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ২০৭ (২৩.৮৩ শতাংশ), হাওড়ায় ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৪০ (১০.৮০ শতাংশ)। এছাড়া দার্জিলিঙে রয়েছে ১ লক্ষ ২২ হাজার ২৭৪ (৯.৪৬ শতাংশ)।
বৃহস্পতিবার ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে কমিশন বলছে, বাংলায় খসড়া তালিকা থেকে মোট নাম বাদ যাচ্ছে ৫৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৫১ (৭.৫৯%) জনের।
কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর থেকে বাদ পড়ছে ৪৪ হাজার ৭৮৭ জনের নাম। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্রে নন্দীগ্রাম থেকে বাদ পড়ছে ১০ হাজার ৫৯৯ জন। কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিমের বিধানসভা কলকাতা বন্দ থেকে বাদ পড়ছে ৬৩ হাজার ৭৩০ জনের নাম। বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বিধানসভা কেন্দ্র আসানসোল দক্ষিণ থেকে বাদ পড়ছে ৩৯ হাজার ২০২ জনের নাম। মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের বিধানসভা কেন্দ্র টালিগঞ্জ থেকে ৩৫ হাজার ৩০৯ জনের নাম বাদ পড়ছে। বিজেপি বিধাকয় শঙ্কর ঘোষের বিধানসভা শিলিগুড়ি সেখানেও ৩১ হাজার ১৮১ জনের নাম বাদ পড়ছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কেন্দ্র দমদম থেকে ৩৩ হাজার ৮৬২ জনের নাম বাদ পড়ছে। বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক কুমার লাহিড়ীর কেন্দ্র থেকে ১১ হাজার ২১৯ জনের নাম বাদ পড়ছে। উত্তর দমদম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই কেন্দ্র থেকে বাদ পড়ছেন ৩৩ হাজার ৯১২ জন। বিধায়ক শশী পাঁজার শ্যামপুকুর কেন্দ্রে থেকে বাদ পড়ছেন ৪২ হাজার ৩০৩ জন। বাবুল সুপ্রিয়োর বিধানসভা কেন্দ্র বালিগঞ্জ থেকে ৬৫ হাজার ১৭১ জনের নাম বাদ পড়ছে। রত্না চট্ট্যপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পূর্ব সেখানেও ৫৩ হাজার ৩৬ জনের নাম বাদ পড়ছে। প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির কেন্দ্র বেহালা পশ্চিম থেকে ৫২ হাজার ২৪৭ জনের নাম বাদ পড়ছে। ২৫ হাজার ৪৭৮ জনের নাম বাদ পড়ছে চন্দননগর থেকে। ওই কেন্দ্রে থেকে জয়ী হয়ে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন। কমিশনের তথ্য বলছে শিবপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারির শিবপুর কেন্দ্র থেকে বাদ পড়ছেন ৩৩ হাজার ৫০৫ জন।
Draft Voter List
বাদ যেতে পারে! মৃত, স্থানান্তরিত ৫৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৫১ নাম
×
Comments :0