Mob lynching

মহানগরের দোকানে বচসা, পিটিয়ে খুন যুবককে

কলকাতা

ভরদুপুরে মহানগরীর ব্যস্ত রাস্তা। অনবরত যাচ্ছে বাস, গাড়ি, অটো। সেখানেই রাস্তার ধারে মদের দোকানে ক্রেতার সঙ্গে সামান্য বচসার জেরে স্রেফ নৃশংসভাবে পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হলো এক ব্যক্তিকে। দেহও কিছুক্ষণের জন্য পড়ে থাকল রাস্তার ধারে!
খাস কলকাতায় ভরদুপুরে পিটিয়ে খুন! এমনই ভয়াবহ ঘটনার ছবি উঠে এসেছে রবিবার, ঢাকুরিয়ায়। এক মদের দোকানের সামনে এক ক্রেতাকে বচসা, বাদানুবাদ, হাতাহাতি থেকে পিটিয়ে, থেঁতলে খুন করার অভিযোগ উঠল ওই মদের দোকানের কর্মচারীর বিরুদ্ধেই।
এই ঘটনার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে দলে দলে চলে আসেন অসংখ্য মানুষ। দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠেন তাঁরা, ভাঙচুর চলে মদের দোকানে। এর বিক্ষোভের জেরে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। দাবানলের মতো খবর চারদিকে ছড়িয়ে যায় সিসিটিভি ফুটেজের মারফত।  
একটু পরে পুলিশ কর্মী আধিকারিকরা সেখানে এসে পৌঁছালে পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন উত্তেজিত জনতা। তাঁদের বক্তব্য, ‘আমাদের আস্থা নেই পুলিশে। পুলিশ টাকা খেয়ে দোষীদের ছেড়ে দেবে, তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত পুলিশ দোষীদের আমাদের সামনে গ্রেপ্তার না করবে ততক্ষণ আমরা একচুল নড়বো না এখান থেকে।’ অন্যদিকে, সে সময়ে পুলিশের বক্তব্য, দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর ক্রমশ  ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। ক্ষিপ্ত জনতাকে সামাল দিতে নামে বিশাল পুলিশবাহিনী। ঘটনার জের চলে রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত। 
নিহত সুশান্ত মণ্ডল ঢাকুরিয়া পঞ্চাননতলা এলাকারই বাসিন্দা, পেশায় গাড়ির চালক। সুশান্ত মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরা এদিন সাংবাদিকদের সামনেই অভিযোগ করে বলেন, সামান্য ৫ টাকার জন্য এই খুন। পাঁচ টাকা কম দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয় দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে। এরপরেই সুশান্তকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। মাত্র ৫ টাকার জন্য খাস শহর কলকাতায় পিটিয়ে খুন। তাও আবার এমন এক জায়গায় যেখান থেকে দুশো মিটার দূরে লেক থানা। অন্যদিকে আবার গোলপার্কের সামনে রয়েছে ট্রাফিক গার্ডও। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশকে ঘিরে ক্ষোভ বাড়ে। 
গোলপার্ক অভিমুখে ঢাকুরিয়ার ব্রিজ থেকে নামলেই গড়িয়াহাট রোডের ওপর একটি মদের দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পরে দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দোকানের ভেতর থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে এক কর্মচারী ঘাড় ধরে ভিতরের দিকে টেনে এনে বেধড়ক মারধর করছে ওই ক্রেতাকে। একটু পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সুশাম্ত মণ্ডল। এলোপাথাড়ি গুঁতো মেরে তাঁর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় ফুটপাতের ওপর। দেহ পড়ে থাকে কিছুক্ষণ ওখানেই। এই ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ পৌঁছায় সেখানে। কিন্তু তার আগেই স্থানীয় পঞ্চাননতলা এলাকার মানুষ সেখানে চলে আসেন দলে দলে। 
এরপর কার্যত রণক্ষেত্রের আকার নেয় গোটা এলাকা। ভাঙচুর চলে মদের দোকানে। অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে যায় চারদিকে। গাড়ি চলাচলও বন্ধ যায়। পরিস্থিতি দেখে পুলিশও সেলিমপুর থেকেই সমস্ত গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয় এলাকায়। পঞ্চাননতলা এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, মদের দোকানের পেছনের একটি বাড়িতে লুকিয়ে আছে অভিযুক্ত, তাকে টেনে বার করতে হবে। বাড়িটি আঙুল দিয়ে দেখাতেও থাকেন তাঁরা।
ইতিমধ্যে রক্তাক্ত সুশান্ত মণ্ডলকে রাস্তার ওপারেই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন স্থানীয় মানুষ। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, দোষী ব্যক্তিকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে, কারণ পুলিশ মদের দোকান থেকে ঘুষ খেয়ে ছেড়ে দেবে ওই দোষীকে। পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে তাকেন উত্তেজিত জনতা। পরিস্থিতির মোকাবিলায় হিমশিম খেতে থাকে পুলিশ।
সে সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতিমধ্যে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষের বক্তব্য, ‘পুলিশ মিথ্যা বলেছে, আমরা এতক্ষণ এখানে আছি, কোনও গ্রেপ্তার হয়নি, আসলে দোষীদের আড়াল করছে পুলিশ। আমরা দোষী ব্যক্তির ফাঁসি চাই।’  পরে দুই ব্যক্তিকে মুখ ঢাকা অবস্থায় গাড়িতে তুলতে দেখা যায় পুলিশকে। 
এলাকার মানুষের বক্তব্য, ছেলেটি এখানে সংলগ্ন ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে প্রায়ই আসে। এদিন মদ কিনতে এসেছিল। হয়তো দাম নিয়ে কিছু বচসা হয়েছে। তাই বলে এইভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে পিটিয়ে একজনকে মেরে ফেলা তো বর্বরতার শামিল। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা।   
প্রথমে পুলিশের তরফে জানানো হয় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত, সিসিটিভি ফুটেজে যাকে দেখা গেছে সেই প্রবীর দত্ত ওরফে টিঙ্কুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সঙ্গে প্রসেনজিৎ বৈদ্য বল আরেকজনকে। পরে রাতে পুলিশের তরফে জানানো হয় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃত বাকি দুজন দেবজ্যোতি সাহা ও অমিত কর। মদের দোকানের মালিক দেবজ্যোতি সাহা। বাকি তিনজন কর্মচারী। খুনের ধারাই রুজু করা হয়েছে, আগামীকাল  ধৃতদের আদালতে তোলা হবে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment