মানুষের দুঃসময়ে, মানবিকতার বার্তা নিয়ে ফের একবার দুর্গতদের পাশে দাঁড়াল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)। গত ৫ অক্টোবর ভয়াবহ বন্যার পর ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি পঞ্চায়েতের হোগলারটারি এলাকায় সিপিআই(এম)’র উদ্যোগে গত ১৩ অক্টোবর থেকে চালু হয়েছে 'আমাদের রান্নাঘর'। ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত বহু পরিবারের জন্য এই কমিউনিটি কিচেন এক ভরসার আশ্রয় হয়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় চাঁদা তুলে এবং স্থানীয় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সিপিআই(এম) কর্মী-সমর্থকেরাই 'আমাদের রান্নাঘর' পরিচালনা করছেন। বন্যার জল সরে গেলেও, ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে, প্রতিদিন শতাধিক দুর্গত পরিবারের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে যাচ্ছে গরম ও পুষ্টিকর খাবার। মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, মরশুমি তরকারি, এবং ডিম বা সবজি— যা দুর্গতদের পুষ্টি নিশ্চিত করছে। রান্না থেকে শুরু করে পরিবেশন করা — সমস্তটাই সিপিআই(এম)’র স্বেচ্ছাসেবকরা করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
‘আমাদের রান্নাঘর’ এই উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। একাধিক দুর্গত পরিবারের সদস্য গোবিন্দ সরকার, রতন মন্ডল, দীনেশ রায় সরাসরি জানিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। বলেছেন, ‘‘সরকারি ত্রাণ শিবিরে যেমন খাবার দেয়, তার থেকে অনেক ভালো এখানে খাওয়া-দাওয়া। যত্নটা অন্যরকম। সবটাই গরম এবং টাটকা, যা আমাদের এই কঠিন সময়ে খুব প্রয়োজন।’’
ভোর থেকেই পার্টির সদস্যরা রান্নার প্রস্তুতি শুরু করছেন। দুপুরের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু খাবার, যা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে অভুক্ত দুর্গতদের। এই স্বতঃপ্রণোদিত সেবা দুর্গত মানুষগুলির কাছে কেবল খাদ্য নয়, এক গভীর মানসিক জোরও জোগাচ্ছে।
স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা নিরঞ্জন রায় জানিয়েছেন, ‘‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ ব্যাহত।
তাই মানবিকতার খাতিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যতদিন না দুর্গত পরিবারগুলি সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন, ততদিন এই ‘‘আমাদের রান্নাঘর’’ বন্ধ হবে না। সিপিআই(এম)’র এক স্বেচ্ছাসেবক মনি রায়ের কথায়, যা সিপিআই(এম)’র সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এটাই আমাদের পার্টির সংস্কৃতি, মানুষ যখন বিপদে, তখন পাশে থাকা। একজন মানুষও অভুক্ত থাকলে, আমাদের রান্নাঘর চলবে। ‘‘আমাদের রান্নাঘর’’ প্রমাণ করে দিয়েছে যে কঠিন সময়েও মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং পার্টির নিরলস সংগ্রামই পারে সবচেয়ে বড় ভরসা যোগাতে।’’
Comments :0