শুভাশিস ভৌমিক: আমেদাবাদ
বিকেল সবে নামছে। সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম পাড়ে। গুজরাট ভারতের পশ্চিম দিকে হওয়ায় শীতকালেও আলো থাকে সন্ধ্যো ছ’টার পরও। ভারতীয় দলের প্র্যাকটিস প্রায় শেষের পথে। কিন্তু মাঠকর্মীরা ছিলেন নিজেদের কাজে মগ্ন। কেন?
ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচ বলে কথা। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া। তাই ঘন ঘন বাইশ গজে রোলার চালাচ্ছেন মাঠ কর্মীরা। পিচ প্রস্তুতকারক বল ড্রপ খাইয়ে দেখছেন, বল কতটা উঁচুতে উঠছে! বল হাঁটুর উপরে উঠলেই, ফের তিনি রোলার চালানোর নির্দেশ দিলেন, যা দেখে বোঝা গেল ফাইনাল ম্যাচের উইকেটে একেবারেই বাউন্স থাকবে না। উইকেটে গতি থাকছে না। আর ফের ব্যবহৃত পিচে খেলা হবে ফাইনাল ম্যাচ। গত ১৪ অক্টোবর যে পিচে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি আয়োজিত হয়েছিল, সেখানেই ইন্দো-অজি দ্বৈরথ আয়োজিত হবে। পেসারদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকবে না বললেই চলে। এমনিতেই আমেদাবাদের উইকেট স্লো হয়। তবে পেসার গতি হেরফের করিয়ে, বৈচিত্রের সাহায্যে ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারবেন, ঠিক যেভাবে জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজরা পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন। এই মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না অজিরাও। প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্করাও দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে গুটিয়ে দিয়েছেন মাত্র ২১৩ রানে। তাঁরাও ফাইনালে মোতেরার পিচ থেকে সুবিধা তুলতে পারবেন।
এদিন ভারতের অনুশীলন (ঐচ্ছিক) করার কথা ছিল দুপুর দু’টো থেকে। আইসিসি’র মারফত সেটাই জানানো হয়, কিন্তু শুক্রবার সকালে হঠাৎ জানা যায়, ভারতীয় দল দু’টোর পরিবর্তে সাড়ে তিনটে থেকে অনুশীলন শুরু করবে। ঘড়িতে তিনটে পঁয়ত্রিশ বেজে গেলেও দেখা নেই ভারতীয় দলের। কিছুক্ষণ বাদেই দেখা যায়, ভাবলেশহীন চেহারা নিয়ে এগিয়ে আসছেন এক ভদ্রলোক। চোখে রোদচশমা। কিছুটা এগিয়ে আসতেই বোঝা গেল তিনি জ্যামি অর্থাৎ ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। এরপর ঢুকলেন ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর থেকে শুরু করে বোলিং কোচ পরেশ মামব্রে, ফিল্ডিং কোচ টি দলীপ সহ থ্রো ডাউন বিশেষজ্ঞ। ম্যাচের দু’দিন আগে এসে পিচ পর্যবেক্ষণ করাটা যেন রীতি হয়ে গিয়েছে ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদের। সেই অনুযায়ী নকশা তৈরি করছেন টিম থিঙ্কট্যাঙ্ক। সফলতা আসছে।
রাহুল নিজে বেশ খানিকক্ষণ পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিলেন, পিচের চরিত্র কেমন হতে চলেছে। এরপর যোগ দিলেন রাঠোর ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। মিনিট ১৫ আলোচনা হওয়ার পর, স্লিপ ক্যাচিং প্র্যাকটিস করলেন রোহিত। সার্পোট স্টাফরা বেরিয়ে গেলেও মহম্মদ কাইফ, সঞ্জয় বাঙ্গারদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ব্যস্ত থাকলেন শর্মাজি। ওদিকে সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যানদের ধৈর্যের বাধ ভাঙছে। কখন আসবেন বাকি ক্রিকেটাররা? ফাইনালে দু’দিন বাকি বলেই কি রোহিত ছাড়া আর কেউ এলেন না!
সংশয় দূর করতে জিজ্ঞেস করা হয়, ভারতীয় দলের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তিকে। তিনি বললেন, রোহিত ছাড়া আরও পাঁচ ক্রিকেটার (কেএল রাহুল, ঈশান কিষান, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা) এসেছেন প্র্যাকটিস করতে। কিন্তু তাঁরা কোথায়? ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলো তাঁকে, তিনি বললেন, স্টেডিয়ামের পিছনে আউটডোরে নেট প্র্যাকটিস করছে। তাঁর কথা শুনে সেই জায়গা গিয়ে নিরাশ হতে হলো! দেখা গেল কালো পর্দা দিয়ে ঢাকা। রুদ্ধদ্বার অনুশীলন চলছে। যেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশের অধিকার নেই। কিন্তু সম্প্রচারকারী চ্যানেলের প্রতিনিধিরা থাকতে পারবেন।
এবার অনুশীলন দেখার উপায়? ছুটে যেতে হলো আমেদাবাদ স্টেডিয়ামের পাঁচতলায়। সেখান থেকেও ভালোমতো দেখা গেল না। তবে এটুকু বোঝা গেল, অ্যাডাম জাম্পাকে নিয়ে সতর্ক ভারতীয় দল। তিনি মাঝের ওভারে ব্যাটারদের ভোগাচ্ছেন। ২২ টি উইকেট পেয়েছেন। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর রেকর্ড ভালো। তাই রাহুল, জাদেজা, রোহিতরা, জাম্পাকে বেলাইন করতে বেশি সুইপ মারছিলেন। স্টার্ককে সামলানোর জন্য বাঁ-হাতি নেট বোলারদের মনোযোগ দিয়ে খেললেন ভারতীয় ব্যাটাররা। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, অশ্বিন টানা ঘোরালেন। অনেকের মত, আমেদাবাদের উইকেট মন্থর বলে সিরাজকে বসিয়ে খেলানো হোক অশ্বিনকে। সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। দল অপরিবর্তিত থাকতে চলেছে। আমেদাবাদ পৌঁছে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনাল উঠেই অজিরা মনঃস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু করে দিয়েছেন। মিচেল মার্শ বলছেন, অস্ট্রেলিয়া প্রথম ব্যাট করে ৪৫০/২ তুলবে। ভারত অলআউট হয়ে যাবে মাত্র ৬৫। রোহিত শর্মারা সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে জেনে গিয়েছেন মার্শের কথাটি। এর জবাব, আগামী রবিবার মাঠেই দেবে ভারতীয় দল। তাঁদের হাবেভাবেই স্পষ্ট ছিল।
Comments :0