Migrant Worker Death

মুম্বাইয়ে মৃত্যুর পরই দাহ শ্রমিককে, যোগাযোগ নেই গ্রামের বাকিদের, আতঙ্কে কর্ণগড়

রাজ্য

শোকাহত মৃতের পরিবার।

চিন্ময় কর- শালবনী 
ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে শালবনী ব্লকের এক বছর ৩৫ বছরের যুবকের। মৃতের নাম জগেন হাঁসদা। মৃত্যুর পরই তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন যে বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আতঙ্কে ওই গ্রামের ২৮টি পরিবার। 
কাজ নেই রাজ্যে, বন্ধ ১০০ দিনের কাজও। তৃণমূল সরকার গত ১৩ বছরে একটি শিল্প গড়তে পারনি, উল্টে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকতে গেলে চাই অন্য বস্ত্র ও বাসস্থান। তাই পেটের তাগিদে পরিবারের মুখে দুটো অন্ন তুলে দিতে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে কাজ করতে শালবনী ব্লকের কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ডাঙ্গরপাড়া গ্রামের ২৮ জন। পাঁচ দিনের মধ্যেই পরিবারের কাছে এল মৃত্যুর খবর। আবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফের খবর এল যে তাঁদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানের পাওয়া যাচ্ছে রহস্যের গন্ধ, বলছে মৃতের পরিবার। 
পরিবারের প্রশ্ন, কী এমন ঘটেছে যে পরিবারকে না জানিয়েই দেহ পুড়িয়ে দিতে হল। আতঙ্কে ওই গ্রামের ২৮টি পরিবার। কারণ এই ২৮ পরিবারের তরতাজা যুবকরা গিয়েছেন মুম্বাইতে। 
গত মঙ্গলবার মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে জগেন হাঁসদার মৃত্যুর খবর আসে শনিবার বিকালে। 
মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই কোনো বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি রবিবারও। অন্যরা কেমন আছেন, কী অবস্থায় আছেন, সুস্থ আছেন কিনা, তাঁরা আদৌও আর গ্রামে ফিরবে কিনা, সেই আতঙ্কেই দিন কাটছে।
শালবনী থানায় গোটা ঘটনা জানিয়ে সাহায্য সহ প্রতিকার চেয়েছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি বলে গ্রামের মানুষের অভিযোগ। 
ওই গ্রামের বাসিন্দা শান্তি ভূঁই বলেন, ‘‘গ্রামে কাজের আকাল। দিন মজুর পরিবারের বাস। ভাদ্র মাসের টান, কাজ না থাকায় পেটের তাগিতে স্থানীয় এক ব্যাক্তি নিমাই সিংহের সঙ্গে মুম্বাই গিয়েছিলেন এখানকার ২৮ জন। সামনে দিওয়ালি। মিষ্টির দোকানের কারিগর ও সহায়কের কাজ করার জন্য মঙ্গলবার সকালে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন সবাই। শনিবার বিকালেই জগেন হাঁসদার বাড়িতে ফোনে খবর আসে তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছেন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যে খবর আসে দেহ দাহ করা হয়ে গেছে। তারপর থেকে বাকি ২৭ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। গ্রাম জুড়ে শুধুই আতঙ্ক ও আর্তনাদ।’’ 
জানা গেছে, মৃত জগেন হাঁসদার পরিবারে তিন নাবলক সহ তাঁর স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী মা রয়েছেন। দিনমজুরি করে সংসার চালাতে গিয়ে প্রায়দিনই দুই বেলা হাঁড়ি চড়ত না। বয়স্ক মা প্রতিবন্ধী হলেও মেলেনি সরকারি প্রকল্পের কোন সুযোগ সুবিধা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকেও বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে পরিবারটিকে। একমাত্র উপার্জনকারী দিনমজুর পরিবারের কর্মঠ স্বামীর মৃত্যুতে শোকাহত স্ত্রী পার্বতী হাঁসদা।
ডাঙ্গর পাড়া গ্রামের ২৮টি পরিবার দাবি করেছে যে এই মৃত্যুর ঘটনার আসল রহস্য উদ্ঘাটন করতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিক। পরিবারকে অন্ধকারে রেখে দেহ দাহ করার বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন গোটা গ্রামের মানুষ। তাঁরা সরকারের কাছে বাকি ২৭ জনকে গ্রামে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment