এখনও পর্যন্ত দুর্নীতির যে অংশটুকু দেখা যাচ্ছে তা পাহাড়ের চূড়া মাত্র। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেতরকার নানা অনৈতিকতা ও অব্যবস্থার বিস্তারিত রেকর্ড আমাদের সংগ্রহে এসেছে। আদালতের কাছে আমরা তার অনেকটাই ইতিমধ্যে পেশ করেছি। এরপর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা আদালতকে দেব। রাজ্য সরকারকে এই মর্মে হুঁসিয়ারি দিল সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ।
শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস’র পক্ষ থেকে চিকিৎসকরা বলেন, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর রোখার যে চক্রান্ত চলছে তার বিরুদ্ধে এবং আর জি কর হাসপাতালের নৃশংস ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাটকারী দোষীদের আড়াল করার যে চেষ্টা চলছে তার বিরুদ্ধে ১ অক্টোবর কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন— ব্যাপক আকারে পথে নামছে যে ৫৫টি সংগঠন, তাতে শামিল থাকছে জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। একইভাবে পরের দিন ২অক্টোবর কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত যে প্রতিবাদ মিছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট-এর পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছে তাতে শামিল থাকবে জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস। সমস্ত ক্ষেত্রের সাধারণ মানুষকে মিছিলে আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসক মহল। সংগঠনের স্পষ্ট বক্তব্য, রাস্তায় আন্দোলনের পথে থেকেই ন্যায় বিচারের দাবি মিটিয়ে নিতে চাই আমরা।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস-এর তরফে উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ পুন্যব্রত গুন, ডাঃ মানস গুমটা, ডাঃ উৎপল বন্দ্যেপাধ্যায়, ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী, ডাঃ তমোনাশ চৌধুরি, ডাঃ অর্পিতা রায়চৌধুরি, ডাঃ কৌশিক চাকী, ডাঃ সুকান্ত চক্রবর্তী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ’-র যুগ্ম আহ্বায়ক সৌম্য দত্ত ও বিশ্বরঞ্জন রায়। এছাড়াও ছিলেন অন্যান্য বেশ কিছু সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, ‘এক লক্ষ্যে এক লক্ষ একসাথে রাজপথে’— এই আহ্বানে ১ অক্টোবর মহা মিছিলের ডাক দিয়েছে ৫৫টি সংগঠন। তাতে ব্যাপকভাবে অংশ নেবেন সাধারণ মানুষ। একইভাবে ২ অক্টোবর মিছিল সমাবেশেও মানুষ অংশ নেবেন- ‘দু’ তারিখে দু’ লক্ষ’ স্লোগানকে সামনে রেখে।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দুর্নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে দুষ্কৃতীরাজ। জুনিয়র ডাক্তারদের ধমকানো, চমকানো, পরীক্ষায় পাশ ফেল করিয়ে দেওয়ার নামে তোলাবাজি, এসবে যে নামগুলি সামনে আসছে সেই একই সব নাম মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভোট লুট ও দুর্নীতিতেও এসেছিল। নিরাপত্তাহীন ও সুরক্ষাহীন হয়ে রয়েছে সমস্ত হাসপাতালগুলি। সিনিয়র ডাক্তাররা প্রতিবাদ করতে গেলেই কণ্ঠরোধের চেষ্টা হয়েছে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে। আসলে থ্রেট কালচার শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয়, ছোটো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হকার, এমনকি সিইএসসি সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বহু জুনিয়র ডাক্তারের কেরিয়ার শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় কেউ শাসকের বিরুদ্ধে লিখলেই পুলিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত কিছু সহ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় আজ সাধারণ মানুষ, নানা পেশার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পথে নেমে এসেছেন।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চের পক্ষে সৌম্য দত্ত বলেন, গত ৫০ দিন ব্যাপী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গেছে, তা এসেছে তাঁদের নিজেদের তাগিদেই। সরকার মুখে যাই বলুক, সমস্ত ক্ষেত্রের এই শ্রমজীবী, পেশাজীবী থেকে ছাত্র, যুব, মহিলা, ক্রীড়াবিদ, সমাজকর্মী, চাকুরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত, প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের অংশগ্রহণ সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে। এদিন আরও একবার জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস-এর পক্ষ থেকে চিকিৎসকরা জানান, রাজ্য সরকার এখানে এক রকম বলছে, আবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আর এক রকম বলছে। তারা যে হলফনামা দিচ্ছে তাতে গলদ রয়েছে। আমরা আরও বহু বিস্ফোরক তথ্য সুপ্রিম কোর্টকে দিতে চলেছি। তাঁরা বলেন, জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস-এর পক্ষ থেকে দ্রোহের উৎসব পালিত হবে উৎসবের দিনগুলিতে শ্যামবাজার মোড়ে চিকিৎসকদের গড়া মঞ্চে। সেখানে চিকিৎসা পরিষেবাও পাবেন সাধারণ মানুষ।
Joint Platform of Doctors
চিকিৎসক মঞ্চ থাকছে ১ অক্টোবরের মিছিলে
×
Comments :0