Editorial 26th feb 2023

এলআইসি’কে ডোবাচ্ছে আদানিরা

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু গৌতম আদানির শেয়ার জালিয়াতির মাশুল গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা সংস্থা এলআইসি। কারচুপি করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের বন্ধুর কোম্পানির শেয়ার এলআইসি’কে দিয়ে কেনাতে বাধ্য করেছিল মোদীর সরকার। উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত দু’টি। (১) কৃত্রিমভাবে বাড়ানো আদানির শেয়ার এলআইসি’কে দিয়ে কিনিয়ে এলআইসি’র ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদানিদের ঘরে চালান করা। (২) কৃত্রিমভাবে বাড়ানো অস্বাভাবিক বে‍‌‍‌শি মূল্যে আদানিদের শেয়ার এলআইসি’র মতো সংস্থা কিনলে বাজারে আদানিদের পক্ষে ইতিবাচক বার্তা যাবে। তখন অস্বাভাবিক উচ্ছমূল্যের শেয়ার সম্পর্কে অন্যান্য লগ্নিকারীদের সন্দেহ ও দ্বিধা কমবে এবং এলআইসি’কে দেখে অন্যান্যরাও লগ্নী করতে উৎসাহিত হবে। বন্ধু আদানির কর্পোরেট সাম্রাজ্যের ভিত আরও শক্ত করতে সরকার এলআইসি’র পাশাপাশি দে‍শের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত এসবিআই’র নেতৃত্বে অনেকগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককেও বাধ্য করে অস্বাভাবিক উচ্চ শেয়ার মূল্যের ভিত্তিতে আদানি গোষ্ঠীকে বিপুল ঋণ দিতে।
প্রসঙ্গত এলআইসি বা এসবিআই সরকারি সংস্থা হলেও মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয় সেখানে মজুত থাকে। ব্যাঙ্ক বা বিমা সংস্থার দায়িত্ব তাদের গ্রাহকদের অর্থ সুরক্ষিত রাখা। কোনও অবস্থাতেই ভষ্মে ঘি ঢালার মতো নয়ছয় করা নয়। তেমনি ক্ষমতায় থাকলে জনগণের সঞ্চয় নিয়ে ছেলে খেলার অধিকার জন্মায় না। নিজেদের ঘনিষ্ঠদের মোটা অর্থ পাইয়ে দেবার জন্য জনগণের সঞ্চয়কে লোপাট করার ছাড়পত্র মেলে না।


মোদীর বন্ধুর কর্পোরেট যে শেয়ার বাজারে কারচুপি ও জালিয়াতি করে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে সীমাহীন অর্থ ঘরে তুলছে সেটা নিয়ে সন্দেহ-অভিযোগ অনেক দিন ধরেই ছিল। সেবি বা অন্যান্য সংস্থা লোক দেখানো তদন্ত করে সে সব ধামাচাপা দেবার ব্যবস্থা করেছে। সে ক্ষেত্রে মোদী সরকারের হাত ছিল বলেও গুঞ্জন আছে। আসলে দেশীও মহল থেকে অভিযোগ ওঠায় মোদী সরকার সেগুলি সফল ভাবে চাপা দেবার ব্যবস্থা করেছিল। গোদী মিডিয়াও যথারীতি সেসব নিয়ে টু শব্দও করেনি। কিন্তু এবার অভিযোগটি এসেছে দে‍‌শের বাইরে থেকে। একেবারে আমেরিকা থেকে। দেশীয় মিডিয়াকে মোদী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বিদেশি মিডিয়াকে আটকানোর ক্ষমতা নেই। তাই আদানিদের পুকুর চুরি আর আড়াল করা সম্ভব হয়নি। সারা দুনিয়ার কাছে ধরা পড়ে গেছে বিশ্বের তিন নম্বর ধনী ভারতের গৌতম আদানির কর্পোরেট জালিয়াতি করে গোষ্ঠীর শেয়ার মূল্য বাস্তবের থেকে অনেক বাড়িয়েছে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার মূল্যের ৮৫ শতাংশই জালি। অর্থাৎ শেয়ার মূল্য ১০০ টাকা হলে আসলে তার প্রকৃত দাম হওয়া উচিত মাত্র ১৫ টাকা। গত এক মাসে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার মূল্যের ধারাবাহিক পতনের ফলে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট সত্য বলে প্রমাণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে মোটামুটি ৬০ শতাংশের কাছাকাছি পতন হয়েছে। এভাবে চললে অচিরেই আদানিদের শেয়ারের প্রকৃত মূল্য বাজারে দেখা যাবে।


এইভাবে ৮৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেখানো শেয়ার অর্থাৎ ১৫ টাকার শেয়ার এলআইসি’কে দিয়ে কেনানো হয়েছে যাতে ৮৫ টাকা স্রেফ আদানিরা লুট করতে পারে। আদানিদের ৭টি সংস্থার ৮৩ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে এলআইসি। সেই ধাক্কায় আজ আদানির সাথে সাথে এলআইসি’র শেয়ার মূল্যে পতন শুরু উদ্বেগ-অনিশ্চয়তার হাত ধরে। এক মাস আগেও বাজারে এলআইসি’র শেয়ার মূল্য ছিল গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর এক মাস পরে তা ১৭শতাংশ কমে গেছে। অর্থাৎ আদানি গোষ্ঠী নিজেরা যেমন ডুবছে সাথে সাথে টেনে নামাচ্ছে এলআইসি’কেও।
 

Comments :0

Login to leave a comment