Editorial price rise

মজা দেখছে সরকার

সম্পাদকীয় বিভাগ


কয়েকদিন আগে দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক উচ্চতা থেকে খানিকটা নামায় বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীরা ঢাক পিটিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য প্রচারে নেমে পড়েছিলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত এক বছর ধরে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে টানা সুদের হার বাড়িয়ে গেলেও চট জলদি সেটা স্থগিত রেখে কর্পোরেট মহলের বাহবা কুড়িয়েছে। কিন্তু সাফল্যের ফানুস উড়তে না উড়তেই ফের চুপসে যেতে বসেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও নিশ্চিত হতে পারছে না মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল হবে। লক্ষণীয় মোদী সাফল্য প্রচারের ঢাকীরা এবার নীরব। ব্যর্থতা-অপদার্থতায় তারা আত্মগোপনে চলে যায়। বড়জোর কেউ কেউ দায় এড়াবার জন্য বলার চেষ্টা করেন মূল্যবৃদ্ধি তো সব দেশেই হচ্ছে, তাহলে শুধু মেদীকে গাল দেওয়া কেন? ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশের মূল্যবৃদ্ধি আর ভারতের মূল্যবৃদ্ধি এক পাল্লায় মাপা যায় না। তেমনি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশের সঙ্গেও ভারতের তুলনা চলে না। তুলনা যদি চীনের সঙ্গে করতে হয় তাহলে দেখা যাবে সেখানে মূল্যবৃদ্ধির হার ভারতের থেকে অনেক কম। আমেরিকা-ইউরোপে মানুষের আয় এতটাই বেশি যে সেখানে মূল্যবৃদ্ধি হলে ভারতের সাধারণ মানুষের মতো দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয় না। ভারতবাসীর আয় নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো। তাই সামান্য মূল্যবৃদ্ধিও ভারতের সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।
হালে গত সপ্তাহ খানেক ধরে খাদ্যপণ্যের বিশেষ করে সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে অস্বাভাবিক হারে। প্রায় সমস্ত রকমের আনাজের দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি দ্বিগুন-তুনগুন। কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি। টমাটো, উচ্ছে, বরবটি, বেগুন, কাঁকরোল ১০০ টাকার ওপরে। গাজর, ঢেঁড়শ, ঝিঙে, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আদা, রসুন, জিরে ইত্যাদি মশলাপাতির দামও বাড়ছে হু হু করে। এককথায় গরিব-মধ্যবিত্ত পরিবারে ভয়ানক সঙ্কট। প্রতিদিন এই সঙ্কটের আঁচে জ্বলছেন মানুষ।
খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লে উচ্চবিত্তের তেমন গায়ে লাগে না। উচ্চ মধ্যবিত্তরাও সামলে নিতে পারেন। কিন্তু গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্তদের নাজেহাল অবস্থা। কেননা এই অংশের মানুষ, যারা সংখ্যায় মোট জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ, তাদের মোট পারিবারিক আয়ের সিংহভাগই খরচ হয় খাদ্যের পেছনে। ফলে খাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে অন্য প্রয়োজনীয় খরচের অর্থ থাকে না। তাই ভারতের মতো দেশে সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ হওয়া উচিত খাদ্যপণ্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যন্ত্রণার ভার লাঘব করাই একটা নির্বাচিত সরকারের দায়। বাস্তবে কি কেন্দ্রে, কি রাজ্যে সরকার সেই দায় অস্বীকার করছে। সরকার যাই বলুক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার কোনও হাতিয়ারই এখন সরকারের কাছে নেই। উদারনীতির নামে কর্পোরেট পুঁজির পদতলে সব হাতিয়ার সমর্পণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন বৃহৎ পুঁজির অদৃশ্য সুতোয় নিয়ন্ত্রিত খোলা বাজার? ঠিক করে যাবতীয় পণ্য ও পরিষেবার দাম কি হবে। পুঁজির মরজির উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের রুজি রোজগার এবং জীবনযাত্রাকে। একমাত্র রিজার্ভব্যাঙ্ক বাজারে নগদ টাকার জোগান কমিয়ে বাড়িয়ে খানিকটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে বটে তাতে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হয় না।
পশ্চিমবঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে আনাজ-মশলার দাম অস্বাভাবিক বাড়ছে। নেহাত সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন তাই বাধ্য হয়ে বন্ধ গুদামের ধুলো ঝেড়ে টাস্ক ফোর্সকে বহু কাল পর বার করা হয়েছে। তারা বাজারে বাজারে ঘুরে দাম কমাবে। কীভাবে? কেউ জানে না। ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার। সরকারের ‘সুফল বাংলা’ কাউন্টার থেকে নাকি ৫ টাকা কম দামে সবজি বিক্রি করা হবে। গড়ে প্রতি ব্লক ও পৌরসভায় একটা করেও কাউন্টার নেই। যেখানে কয়েক হাজার দোকান থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ সবজি কেনেন সেখানে একটা কাউন্টার থেকে ক’জন সবজি পাবেন? এমন নির্বোধ হাস্যকর ছেলেমানুষী এই সরকারের পক্ষেই সম্ভব। মূল্য হ্রাস বা নিয়ন্ত্রণের কোনও সদিচ্ছা বা যোগ্যতা এই সরকারের নেই। দাম কমানোর নামে নাটক করে মানুষকে বোকা বানাতে চায়।

Comments :0

Login to leave a comment