Assembly Election

অবশেষে ভোট ঘোষণা জম্মু-কাশ্মীরে, সঙ্গে হরিয়ানাও

জাতীয়

অবশেষে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীরে। এক দশক পর সেপ্টেম্বরের ১৮, ২৫ এবং ১ অক্টোবর— তিন দফায় জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার ৯০ আসনের ভোট হবে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পরে প্রথম ভোট হতে চলেছে। একই সঙ্গে ভোট হবে হরিয়ানায়, ১ অক্টোবর এক দফায়। দুই ভোটেরই গণনা ৪ অক্টোবর। শুক্রবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ওই দুই বিধানসভা ভোটের কথা ঘোষণা করলেও মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড এবং দিল্লির নির্বাচনের কথা কিছু জানাননি। শুধু বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের ভোট মিটে গেলে বাকি রাজ্যগুলির বিষয় বিবেচনা করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীরা জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোটের দাবি জানিয়ে আসছিল। এমনকি তারা লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোট কেন হলো না, সেই প্রশ্নও তুলেছিল। শুধু দীর্ঘদিন যাবৎ বিধানসভা ভোট বকেয়াই নয়, রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পরেও কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর। যুক্তি হিসাবে বারংবারই নিরাপত্তা কথা বলা হচ্ছিল। কেন্দ্রের এনডিএ সরকার ভোট করার ব্যাপারে খুব উদ্যোগী ছিল না। কিন্তু গত ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ কেন্দ্র এবং নির্বাচন কমিশনকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট করার নির্দেশ দিয়েছিল। ফলে কেন্দ্রের ‘ইচ্ছা’ না থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের গুঁতোয় সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন ঘোষণা করতে বাধ্য হলো কমিশন। সে নিয়ে এদিন অবশ্য রাজীব কুমার বলেছেন যে, ‘তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমাকে মান্যতা দিয়েই সেপ্টেম্বরে বিধানসভা ভোটের কথা ঘোষণা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। এরপর আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে অমরনাথ যাত্রার বিষয়টি। ১৯ আগস্ট শেষ হচ্ছে সেই যাত্রা। এই কারণেই জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে ২০ আগস্ট। ওই দিনই প্রকাশিত হবে জম্মু-কাশ্মীরের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এরই পাশাপাশি ওখানকার আবহাওয়ার দিকটিও বিবেচনার মধ্যে রাখতে হয়েছে ভোটের দিন ঘোষণার ক্ষেত্রে।’
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ— দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয় রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে। এরও তিন বছর আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অজুহাত দেখিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা। শেষ বার জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। আবার ৩৭০ ধারা বিলোপের পর আসন পুনর্বিন্যাসের দায়িত্বে থাকা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা আসনসংখ্যা ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছিল গত বছর। সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টি বাড়ানো হয় জম্মুতে (৩৭ থেকে ৪৩) এবং একটি কাশ্মীরে (৪৬ থেকে ৪৭)। কমিশন জানায়, ২০১১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবশ্য কমিশনের এই যুক্তি মানতে চায়নি বিরোধীরা। তারা অভিযোগ করে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দুপ্রধান জম্মুতে বেশি আসন বাড়ানো হয়েছে মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকার তুলনায়। এর পিছনে সুস্পষ্টভাবে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি’র মদত রয়েছে।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার পরে কেন্দ্রের এনডিএ সরকার সন্ত্রাসবাদ কমে যাবে বলে দাবি করলেও উলটে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকাগুলিতে নিয়মিত সন্ত্রাসবাদী হামলা চলছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সন্ত্রাসবাদীদের পাশাপাশি বহু জওয়ানও প্রাণ হারিয়েছেন। এমন এক সন্ত্রাসের আবহের মধ্যেই ভোট হতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীরে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য জানিয়েছে, নির্বাচনের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে জম্মু-কাশ্মীরে। একারণেই মহারাষ্ট্র সহ তিন রাজ্যের নির্বাচনের বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে।
তবে দেরিতে হলেও জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট ঘোষণাকে দলমত নির্বিশেষে স্বাগত জানিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস, সিপিআই(এম) এবং ডিপিএপি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মানার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ন্যাশনাল কনফারেন্স’র সহ সভাপতি ওমর আবদুল্লার প্রতিক্রিয়া, ‘না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হলেও ভালো। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের অপেক্ষা রয়েছেন। ১৯৮৭-৮৮ সালের পর এবারই এত কম সময়ে এবং কম দফায় বিধানসভা ভোট হতে চলেছে এখানে। এটা অবশ্য কাশ্মীরের দলগুলির কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা এবং কমিশনের ক্ষেত্রেও নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।’ তবে ভোটের জন্য তাঁদের দল প্রস্তুত বলে এদিন জানিয়ে দেন ওমর আবদুল্লা। একই সঙ্গে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আচমকা এক সঙ্গে ৮৮ জন আধিকারিকের বদলির নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ধারণা হয়েছে, বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ভোট ঘোষণা আগের দিন। ভোটপর্ব মিটে গেলে জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় শাসনের অবসান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা।
কংগ্রেস প্রদেশ সভাপতি রাবিন্দর শর্মা একইভাবে বলেছেন, ‘না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হচ্ছে যে এই ভালো। তবে আমরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার পর বিধানসভা ভোটের পক্ষপাতী ছিলাম।’ তিনিও হঠাৎ করে সরকারি আধিকারিকদের বদলি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সিপিআই(এম) নেতা ইউসুফ তারিগামি বিধানসভা ভোট ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘বহুদিন পর ভোটের ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন, এজন্য অভিনন্দন। কমিশন সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। দেখতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হয়।’ তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং ভোটারদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন কমিশনের কাছে।
আবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট ঘোষণা করতে বাধ্য হলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে উন্নয়নের নতুন পর্বের দরজাও উন্মুক্ত হবে বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি এমনও দাবি করেছেন করেছেন যে, ‘কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের অক্লান্ত উদ্যোগের ফলেই জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি, উন্নয়ন এবং শক্তিশালী গণতন্ত্রের এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।’
হরিয়ানা বিধানসভার মেয়াদ শেষ না হলেও ওই রাজ্যের নির্বাচন এগিয়ে এনেছে কমিশন। ৯০ আসনের বিধানসভার ভোট এক দফাতেই ১ অক্টোবর হবে। তবে মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং ঝাড়খণ্ডের ভোটের দিন ঘোষণা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ বিরোধীরা। বিশেষত মহারাষ্ট্রের বিরোধী জোট এমভিএ এজন্য এদিন তীব্র সমালোচনা করেছে নির্বাচন কমিশনের। তাদের অভিযোগ, রাজ্যের শাসক জোট রাজ্যবাসীকে আরও কিছুদিন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বোকা বানাতে চাইছে বলেই ভোটের দিন আরও পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। সেই সূত্র ধরেই মহারাষ্ট্রের ভোটের ঘোষণা করেনি কমিশন।
 

Comments :0

Login to leave a comment