বন্ধুর সঙ্গে মেলায় গিয়েছিলেন এক তরুণী, রাস্তায় বন্ধুর সামনেই তাঁকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘির কাছে মির্জাপুরে হাড়হিম করা এই ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকার মহিলারা। একের পর এক ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের ঘটনায় এই এলাকায় সন্ধ্যা হলেই ঘর থেকে বেরোতে চাইছেন না মহিলারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার বর্ধমান-নবদ্বীপ রোডের মির্জাপুরে বন্ধুর সঙ্গে মেলা দেখতে যান ওই নির্যাতিতা। রাস্তা ফাঁকা থাকার সুযোগে তিন জন দুষ্কৃতী এসে তাঁদের ঘিরে ধরে এবং মেয়েটিকে নিগ্রহের চেষ্টা করে। নির্যাতিতা তরুণীর পুরুষ বন্ধু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন, অভিযোগ তাঁকে আটকে রেখে তরুণীকে তিন জন মিলে ধর্ষণ করে। এমনকি যুবতীর বন্ধুর কাছে মোটা টাকাও দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর ভয় দেখানো হয়, পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে খুন করে দেওয়া হবে।
নির্যাতনের তিন দিন পরে ঘটনার আতঙ্ক, শাসকদলের ভয় কাটিয়ে আতঙ্কিত ধর্ষিতা পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনার কথা জানান। এরপর বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে দলবেঁধে তাঁকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে, বর্ধমান মহিলা থানায় গিয়ে সেই অভিযোগ জানান নির্যাতিতা। তারপরেই তিন জন গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তার হওয়া তিন জনের নাম তাপস পণ্ডিত, সজল ঘটোয়াল এবং বিক্রম মালিক। তাদের রবিবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ ইতিমধ্যেই যুবতীর বয়ান রেকর্ড করেছে। তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষাও করা হয়েছে।
এর আগের ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যুক্ত থাকায় মহিলা থানা, জেলা প্রশাসন নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ায়নি। যদিও অভিযোগ পাওয়ার পরে এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চাপে পড়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু একাধিক ঘটনায় নারী নির্যাতনে দেওয়ানদিঘি থানায় নির্যাতিতারা বিচারই পাননি। দেওয়ানদিঘি থানার মির্জাপুরে এক মহিলাকে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী ধর্ষণই শুধু করেনি, তাঁর শরীরে লোহার রড দিয়ে এমনভাবে মারধর করেছে যে সেই আক্রান্ত মহিলা প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। গোটা শরীরে আঘাতের কালশিটে দাগ নিয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বেঁচে আছেন। তৃণমূলের ভয়ে আতঙ্কে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ছেলের সামনে তাঁর যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
পূর্ব বর্ধমানের জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, ঘটনাটি ৭ তারিখের হলেও ১০ তারিখ অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। দেওয়ানদিঘি এলাকায় তৃণমূলের এক নেত্রীর ছত্রছায়ায় অপরাধীরা একের পর এক ঘটনা ঘটালেও পুলিশ নিশ্চুপ। এই তৃণমূল নেত্রীই উদ্যোগে নিয়ে স্থানীয় বিডিও-কে আইবুড়ো ভাত খাইয়েছিলেন। পুলিশ, প্রশাসন ও তৃণমূল সব মিলে মিশে একাকার। এখানেই শাসকদলের দুষ্কৃতীদের হাতে প্রকাশ্য দিনের বেলায় খুন হন দুই সিপিআই(এম) নেতা কমরেড প্রদীপ তা ও কমরেড কমল গায়েন। সেই অপরাধীরা পুলিশের মদতেই পরে ছাড়া পেয়ে যায়।
থানার পুলিশ, প্রশাসন ও শাসকদল মির্জাপুর এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে। তা না হলে নির্যাতিত মহিলাকে নিরাপত্তা না দিয়ে মির্জাপুর ছেড়ে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে বলে পুলিশ? দালাল লাগিয়ে বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেবে, এমন আশ্বাসও দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু নির্যাতিতা এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা এখনও চলছে।
গত কয়েক মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলায় একের পর এক নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একাধিকবার সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের কাছে বিচারের আশায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। এই সব ঘটনায় শাসকদল যুক্ত থাকায় পুলিশ দলদাসের ভূমিকা পালন করেছে। তুহিনা খাতুনের মৃত্যুর জন্য প্রধান আসামি শাসকদলের বাদশা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বর্ধমান ও তার আশেপাশে একের পর এক মহিলা নির্যাতন ঘটলেও এখানকার বিধায়কের নির্দেশেই শাসকদলের অপরাধীদের বাঁচাতে পুলিশ ঘটনাগুলিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তুহিনা খাতুনের আসামি শাসকদলের কাউন্সিলর, তাই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার না করে অপরাধী যাতে জামিন পায় তার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেয়। ঠিক একই কায়দায় দেওয়ানদিঘির মির্জাপুরে ধর্ষিতা নির্যাতিতা মহিলাকে ফের হেনস্তা করেছে তৃণমূল। পুলিশের মদতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরাধীরা।
Comments :0