electoral bond

বন্ডে কোটি কোটি টাকা তৃণমূলকে জুগিয়েছে গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী, মৃত্যুর যৌথ দায় মুখ্যমন্ত্রী-সিইএসসি’র

রাজ্য কলকাতা

বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর দায় এড়াতে স্বভাবজাত ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দুর্যোগের সকালেই বলে দিলেন, ‘এর দায় সিইএসসি-কে নিতে হবে।’ অবশ্য এটি অসম্পূর্ণ বক্তব্য। কলকাতা মহানগরীতে স্রেফ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় সিইএসএসি’র সঙ্গেই এই দায় মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর সরকার এবং দলকেও নিতে হবে। অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর দল এবং সিইএসসি’র ঘনিষ্ঠতার ছবিই বলে দেয়, এটা ‘যৌথ দায়’।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্পষ্টভাবে অভিযোগ করেছেন ‘‘এই মৃত্যুর দায় কার? গোয়েঙ্কাদের নাকি তাদের থেকে নির্বাচনী বন্ডে কোটি কোটি টাকা নেওয়া তৃণমূলের?’’
গত বছর এসবিআই’র তরফে সুপ্রিম কোর্টের কাছে বন্ডের ইউনিক নম্বর সহ বন্ডের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রকাশিত সেই তালিকা প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখা যায় এই সংস্থা থেকে গোটা দেশের মধ্যে আঞ্চলিক দলের মধ্যে সব থেকে বেশি টাকা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই হিসাবটি ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। 
সেই তালিকাতেই এরাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে ভায়া নির্বাচনী বন্ড প্রায় সাড়ে ৪৪৪ কোটি টাকা দিয়েছে সিইএসসি’র মালিক আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী। মহানগরী সহ আশপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বন্টনের সঙ্গে যুক্ত আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর চার সংস্থা মিলিতভাবে মমতা ব্যানার্জির দলকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৪৪৪ কোটি টাকা সাহায্য করেছে।
ডিয়ার লটারির সোল ডিস্ট্রিবিউটার ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থাটি গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার বন্ড কিনেছিল, যার পরিমাণ ১৩৬৮ কোটি টাকা। সেই টাকার প্রায় ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫৪২ কোটি টাকা পেয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে এই একটি কোম্পানির কাছ থেকে সর্বোচ্চ টাকা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ডিয়ার লটারির পরই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তৃণমূলকে টাকা যোগানোর প্রশ্নে দ্বিতীয় স্থানে আছে আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী।
নির্বাচনী বন্ড আসলে কর্পোরেট তোলাবাজিরই অংশ, প্রথম থেকেই বলে আসছে সিপিআই(এম)। ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড’ যেমন জানে এরাজ্যে শাসক দলকে বিজেপি’র থেকেই বেশি টাকা দিলে জেলায়, মহল্লায় ডিয়ার লটারির ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠবে, তেমনই ৪০০ কোটি বেশি বন্ড কিনে তৃণমূলকে টাকা দেওয়া আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীও জানে টাকা জোগালে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দামও অনায়াসে বাড়ানো যেতে পারে। একতরফাভাবে বাজারও দখল করা যেতে। কলকাতা ও শহরতলি এলাকার বিদ্যুৎ বণ্টনের একচেটিয়া অধিকার সিইএসসি’র । নির্বাচনী বন্ডের তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ থেকে কোটি কোটি টাকা জোগানো হয়েছে হয়েছে তৃণমূলের তহবিলে। এখন মুখ্যমন্ত্রী দায় অস্বীকারের খেলায় নেমেছেন। আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন হলদিয়া এনার্জি ২৮১ কোটি টাকার বন্ড কিনেছিল। আরপিজি-সঞ্জীব গোষ্ঠীর মালিকানাধীন ধারিওয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কোম্পানি কিনেছিল ৯০ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড। এই সংস্থার ঠিকানা কলকাতার সিইএসসি’র সদর দপ্তরের ঠিকানায়। আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত পিসিবিএল লিমিটেড কোম্পানি ৪০ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কেনে। ক্রিসেন্ট পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানিও এসবিআই থেকে ৩৩ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল। যা গিয়েছিল তৃণমূলের তহবিলেই।
 

Comments :0

Login to leave a comment