SSC

আনন্দ থেকে দূরে ধরনাতেই রইলেন চাকরিপ্রার্থীরা

কলকাতা

কলকাতা, ৬ অক্টোবর— আনন্দ থেকে দূরে ধর্মতলার রাস্তায় বসেই শারদোৎসব কাটালেন সাড়ে পাঁচশোরও বেশি দিন ধরে অবস্থানকারী চাকরিপ্রার্থীরা। ১ সেপ্টেম্বর এখানে শারদোৎসব নিয়ে একটা কার্নিভাল হয়েছে, আগামী ৮ অক্টোবর তাঁদের সামনেই রেড রোডে হতে চলেছে আরেকটা সরকারি কার্নিভাল। কিন্তু প্রাপ্য চাকরির দেখা নেই। এই কারণেই পুজোর দিনগুলিতেও তাঁরা বাড়ি যাননি, প্রতারণার বিরুদ্ধে রাস্তাতেই থেকেছেন। পাশে পেয়েছেন বামপন্থী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে, তাঁরা এসে সংহতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছেন। 
উৎসবে শামিল হওয়ার মতো মন তো নেই কারোরই, অর্থও নেই। ভবিষ্যতের আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা সব আনন্দ নিংড়ে নিচ্ছে তাদের। অথচ কত আলাদা হতে পারত পরিস্থিতিটা। নতুন পাওয়া চাকরির মাইনে নিয়ে পুজোর ভরপুর বাজার করে প্রিয়জনদের সাথে উৎসবের আয়োজনে মেতে উঠতে পারতেন তাঁরা। কিন্তু তা হলো না এখনও। পরীক্ষার মানদণ্ডকে দূরে সরিয়ে প্রার্থী নির্বাচনের নতুন মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘুষ। যে যত বেশি ঘুষ দেবে সে তত তাড়াতাড়ি আর তত ভালো চাকরি পাবে। এই চরম দুর্নীতিগ্রস্ত অবস্থাই শারদোৎসবে পথে বসিয়ে রাখল চাকরিপ্রার্থীদের। লড়াই ছাড়েননি এই জেদি শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর দল। শারদীয়ার মতো মহোৎসবেও। 
অবস্থানকারীদের মধ্যে একজন জানাচ্ছেন, ‘পুজো নিয়ে কি আর বলি! গোটা পুজোটা আমাদের বিষাদেই কেটে গেল। আমার জীবনে প্রথমবার এরকম পুজো কাটালাম, বাড়ি থাকতে পারলাম না, কোনও আনন্দ করতে পারলাম না। দুঃখে, চিন্তায় কাটল চারটে দিনই। মাঝে মাঝে চোখ ছলছল করত, তখন ভাবতাম কী অপরাধ করেছি আমরা যে এতটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের? আমরা তো কারোর কাছে কোনও অন্যায় আবদার করিনি। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, বাড়ির লোকের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। আর তার জন্য কারোর কাছে হাতও পাতিনি। পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে চাকরি পেতে চেয়েছিলাম। অথচ আমাদের চোখের সামনেই সেই চাকরি তুলে দেওয়া হলো এমন লোকেদের যারা পরীক্ষা দিতেই আসেনি!’
আরেকজন অবস্থানকারী জানাচ্ছেন, ‘পুজোয় যেখানে আমাদের পাশ দিয়ে সবাইকে ভালোমন্দ খেতে খেতে যেতে দেখছি, সেখানে আমাদের দুবেলা খাবার জোগাড় করাই দুষ্কর। পকেটে তো তেমন পয়সাও নেই কারণ প্রশাসনের দুর্নীতির কোপে পড়ে আমরা আজও বেকার। তবে এই দুঃসময় বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, পুজোর চারদিনই তাঁদের কোনও না কোনও প্রতিনিধি আমাদের এসে দেখে গেছেন, খাবার দিয়ে গেছেন। অষ্টমীর দিন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আমাদের এখানে এসেছিলেন, বিজয়ার দিন এখানে এসেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এই বিপদের দিনে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য আমরা তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।’
 

Comments :0

Login to leave a comment