MUKTADHARA : ANAYAKATHA : BAMKEYES : PALLAV MUKHOPADHAYA : 22 SEPTEMBER 2024, SUNDAY

মুক্তধারা : অন্যকথা : শরদিন্দু ও ব্যোমকেশ : পল্লব মুখোপাধ্যায় : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  ANAYAKATHA  BAMKEYES  PALLAV MUKHOPADHAYA  22 SEPTEMBER 2024 SUNDAY

মুক্তধারা : অন্যকথা

শরদিন্দু ও ব্যোমকেশ
পল্লব মুখোপাধ্যায়
পর্ব - ১

সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (৩০ মার্চ, ১৮৯৯ - ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০)-এর
জন্ম উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর শহরে নিজ মাতুলালয়ে। আদিনিবাস উত্তর কলকাতার
বরানগর কুঠিঘাট অঞ্চল | তাঁর রচিত প্রথম সাহিত্য প্রকাশিত হয় ২০ বছর বয়সে,
যখন তিনি কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে আইন নিয়ে পড়াশুনো করছিলেন। পড়াশুনোর
সাথেই তিনি সাহিত্য চর্চাও করতে থাকেন। তাঁর সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র ‘ব্যোমকেশ
বক্সী’ আত্মপ্রকাশ করে ১৯৩২ সালে।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র হল ‘ব্যোমকেশ বক্সী’।
ব্যোমকেশ একজন ডিটেকটিভ। নিজেকে তিনি ‘সত্যান্বষী‘ বলে পরিচয় দিতে পছন্দ
করেন। ১৯৩২ এ ‘সত্যান্বেষী‘ উপন্যাসে ব্যোমকেশের আত্মপ্রকাশ। প্রথমে শরদিন্দু
অজিতের কলমে লিখতেন। কিন্তু পরে তিনি তৃতীয়পুরুষে লিখতে শুরু করেন।
১৯৭০ সালে মৃত্যুর অব্যবহিত আগে শরদিন্দু তাঁর সমগ্র রচনা সঙ্কলনের প্রথমটি
ছাপা দেখে গেলেন, ‘শরদিন্দু অমনিবাস - প্রথম খণ্ড - ব্যোমকেশ‘ প্রকাশক আনন্দ
পাবলিশার্স। মে, ১৯৭২-এর মধ্যে চারটি মুদ্রণ। এর থেকে শরদিন্দুর জনপ্রিয়তা যে
কতখানি তা বোঝা যায় | বাঙালি যেন এতদিন রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করছিল কবে
ব্যোমকেশকে দুই মলাটের ভেতর পাবে, এই উচ্ছ্বাস সেই পাবার স্বীকৃতি। বাকি সব
ব্যোমকেশকাহিনী নিয়ে দ্বিতীয় খণ্ড বার হয় ঠিক একবছর পরে, মুদ্রণের ব্যাপারে
সেটিরও ওই একইরকম সাফল্যের ইতিহাস।
‘ব্যোমকেশ‘-এর আগে যেসব প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রহস্য কাহিনীর গোয়েন্দা
বাংলাসাহিত্যের অঙ্গনে বিরাজ করতেন তাঁদের ঠিক রসিক, রহস্যরসিক, সমাজমনস্ক
গোত্রে ফেলা যায় না। ব্যোমকেশ বক্সী ত্রিশের দশকে এক বুদ্ধিমান বাঙালী তরুণ,
জীবিকা বেসরকারী ডিটেকটিভ। আমাদের সঙ্গে তার ছাপার অক্ষরে পরিচয়
‘সত্যান্বেষী‘ গল্পে । সেখানে পিতৃস্বত্ত্বভোগী, মেসবাসী এক সাহিত্যান্বেষীর সঙ্গে
রুমমেট হয়ে ব্যোমকেশের পরিচয় ১৩৩১ বঙ্গাব্দে। এর নাম অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়,
আর কাজের খাতিরে ব্যোমকেশ তখন ‘অতুল মিত্র‘ ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
রহস্যভেদের সূত্রে অজিত আর ব্যোমকেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ক্রমশ গাঢ় হয় । এরপর
অনেকদিন তারা এক বাসায় কাটিয়েছে আর অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছে ব্যোমকেশের
কীর্তির কাহিনীকার। শার্লক হোম্‌স্‌ আর ওয়াটসনের সঙ্গে সাদৃশ্য অতি পরিষ্কার।

হোম্‌সের সঙ্গে তুলনা টেনে সুকুমার সেন বলছেন যে ব্যোমকেশ হোম্‌সের মতো
‘উৎকেন্দ্রিক নয়। সে শিক্ষিত, মেধাবী, তীক্ষ্ণদৃষ্টি, সংযতবাক, সহৃদয়। তাঁর চরিত্রে
মনস্বিতা ও গাম্ভীর্য ছাড়া এমন কিছু নেই যাতে তাকে সমান বয়সের বাঙালী ছেলের থেকে
স্বতন্ত্র মনে করতে হয়।‘ সত্যান্বেষী খেতাবটা ডিটেকটিভের বিকল্প, ব্যোমকেশের
নিজস্ব আবিষ্কার। প্রকাশের ইতিহাস দেখলে পঞ্চম গল্প ‘অর্থমনর্থম্‌‘-এ শরদিন্দু
তার বিয়ে দিলেন কারণ শরদিন্দুর জবানিতে ‘কী আর করবে -- বেচারা প্রেমে পড়ে গেল।‘
ভেবেছিলেন ‘বিয়ে হলে বাঙালীর ছেলের আর পদার্থ থাকে না, তাই ব্যোমকেশকে তখনই
রিটায়ার করিয়ে দিয়েছিলাম‘। হোম্‌সের কাহিনী যাঁদের পড়া আছে তাঁরা জানবেন যে কোনান
ডয়েল তাকে মেরেই ফেলেছিলেন। কোনান ডয়েল অনিচ্ছাসত্ত্বেও হোম্‌সকে ফেরত
আনতে বাধ্য হন পাঠক আর প্রকাশকদের চাপে। শরদিন্দুর ক্ষেত্রে বোম্বাই থেকে
ফিরে আসার পর ‘পরিমল গোস্বামীর বাড়ীর ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন --
কেন আপনি আর ব্যোমকেশকে নিয়ে লিখছেন না?‘ শরদিন্দু তাদের কথা শুনে কাহিনী
‘চিত্রচোর‘-এ ব্যোমকেশকে ফেরত এনেছেন। সে গল্পে পত্নী সত্যবতীও উপস্থিত আর
বিয়ের এতদিন পরেও ব্যোমকেশের ক্ষুরধার বুদ্ধি বা দুজনের ভালোবাসায় কোনো কমতি
দেখা যায় না। বাঙালির বিবাহোত্তর অধঃপতন সম্পর্কে শরদিন্দুর ধারণা যে ভুল হতে
পারে, ব্যোমকেশকে দিয়ে তা বুঝতে পেরে তিনি তাকে নিয়ে আরো বাইশটি কাহিনী লেখেন,
তাদের কয়েকটিকে শরদিন্দুর শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে ধরা হয়ে থাকে |
 

ক্রমশ

Comments :0

Login to leave a comment