Salim Itahar

লুট আর বিভাজনের জন্যই মন্দির রাজনীতি মমতার: ইটাহারে সেলিম

রাজ্য জেলা

ইটাহারে কৃষক সমাবেশে মহম্মদ সেলিম। মঞ্চে নেতৃবৃন্দ।

বিশ্বনাথ সিনহা

লুটের জন্য বিভাজনের রাজনীতি করে দক্ষিণপন্থী বিজেপি এবং তৃণমূলের মতো দল। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে গিয়ে মন্দিরের ঘোষণা করেছেন বিভাজনেরই উদ্দেশ্যে। মন্দির-মসজিদ বানানো কোনও সরকারেরই কাজ নয়। 
বৃহস্পতিবার ইটাহারে সমাবেশে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সারা ভারত কৃষকসভার উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে এদিন ভাষণ দেন তিনি। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) নেতা শতরূপ ঘোষ এবং কৃষক নেতৃবৃন্দ।
সেলিম বলেন, এখানে যখন সভা হচ্ছে দেশের কোথাও না কোথাও কৃষক আত্মহত্যা করছেন। নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন। মমতা ব্যানার্জি বললেন চারগুণ করে দেবেন আয়। আর কৃষক নাজেহাল চাষের খরচ মেটাতে। ডিজেলের দাম বেড়েছে। সার, বীজ কিনতে হচ্ছে কালোবাজারে। সেচের খরচ লাফিয়ে বেড়েছে এদিকে বাজারে ফসলের দাম নেই। কৃষিকাজ লাভজনক থাকছে না।
তাই দেশে পাঁচশো কৃষক সংগঠন লড়াই করে মোদী সরকারকে পিছনে ঠেলেছে তিন আইনের বিরুদ্ধে। এমন আইন যে কৃষকের মাণ্ডি থেকে আমাদের রেশন আদানি-আম্বানিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে।
সেলিম বলেন, এখন শুধু আদানি-আম্বানি নয়, আমেরিকা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বাজার দখল নিতে চাইছে। তার বিরুদ্ধে আজকের লড়াই।
সেলিম বলেন, হক কথা সোচ্চারে বলতে হয়। লড়াই করে নিজের অধিকার কেড়ে নিতে হয়। সারা বিশ্বে বামপন্থীরা সেই লড়াই করছে। কৃষক সম্মেলনে তা নিয়ে আলোচনা হবে। সেলিম বলেন, সাম্রাজ্যবাদকে আমরা দেখেছি। প্যালেস্তাইনে ৭২ হাজার মানুষকে মেরেছে। তার মধ্যে ২৫ হাজার শিশু। বামপন্থীরা প্যালেস্তাইনের কথা বলতেই সঙ্ঘ পরিবার বলল, ওরা তো মুসলমান। আসলে সঙ্ঘ মার খাওয়া মানুষকে ভাগ করে। যারা হামলা করে তাদের আড়াল করে। 
সেলিম বলেন, ’’মমতা ব্যানার্জির জগন্নাথ মন্দিরের রাজনীতিও একই কারণে। জনতাকে ভাগ করা তার উদ্দেশ্য। উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যার সময় মমতা গিয়ে বলছেন বড় করে মহাকাল মন্দির গড়ব। যখন আকাল হয়েছে, ঘর ভেসে গিয়েছে, চাষের জমি বালিতে ভরে গিয়েছে, তখন তিনি বলছেন আকালের মোকাবিলা মহাকাল দিয়ে করবেন!’’
সেলিম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বহু মানুষ মহাকালকে মানেন। কিন্তু করোনার সময় মোদী থালা বাজাতে বলেছিল। বলেছিলেন রামমন্দির করে দিয়েছি। কিন্তু রামমন্দির করেও বিজেপি পার পায়নি, অযোধ্যায় লোকসভা ভোটে হেরেছে।’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘মন্দির বা মাসজিদ ছিল, থাকবেও। সেটা সরকারের কাজ না। সরকারের কাজ রাস্তা করা, হাসপাতালে ডাক্তার, ব্রিজ ঠিক করা। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পাচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগী। কৃষক নদীর এক পার থেকে অন্য পারে যেতে পারে না। ছাত্রছাত্রীরা পারাপার করতে পারে না। ইটাহারের বন্যায় দেখেছি, দ্বীপ হয়ে যায়। সরকারের কাজ বাঁধ করা। সে কাজ করছে না।’’
আমরা লালঝাণ্ডা রাজনীতি করি কৃষকের অধিকার, মহিলার অধিকার, তফসিলি জাতি বা আদিবাসীদের মর্যাদার কথা বলি। 
তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণপন্থা মানে পুরুষ-মহিলা আলাদা, হিন্দু-মুসলিম আলাদা, রাজবংশী-আদিবাসী আলাদা। কেবল মানুষকে ভাগ করে। মানুষ যত ভাগ হবে, লুট তত বাড়বে। কলকারখানা, পোস্ট অফিস, বিমানবন্দর সব লুট হচ্ছে, দোকান-ব্যবসা, জেলের জলাশয় নদী সব হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।’’ সেলিম বলেন, ‘‘বামপন্থীরা বলেছিল তেভাগা, লাঙল যার জমি তার। বামফ্রন্ট সরকার জমি দিয়েছে। এক ফসলা জমিকে তিন ফসলি করেছে। শুধু কৃষিতে হবে না, কলকারখানা চাই। আজকে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখছি। তাঁদের আক্রমণ করছে ভাষা-ধর্মের নামে।’’ 
সেলিম বলেন,  ‘‘বিজেপিআর-এসএস বৈচিত্র মানে না। তাই গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ করছে। অমিত শাহ বলছে ‘ডিটেক্ট-ডিলিট-ডিপোর্ট’। অনেকে মনে করছে মমতা আছে তাই বিজেপি’র হাত থেকে বাঁচা যাবে। এই মমতা সংসদে আদবানির সঙ্গী হয়ে বাংলার ভোটার লিস্ট ছুঁড়ে বলেছিলেন যে বাংলাদেশি নাম আছে, না’হলে ভোট করতে দেব না।’’

Comments :0

Login to leave a comment