R G Kar Midnight Protest

আজ মাঝরাতে রাস্তার দখল লড়াকু মহিলাদের

রাজ্য

 মধ্য রাতের দখল নিতে রাস্তায় নামছেন মহিলারা। বুধবার রাত ১১টার পর রাস্তায় অবস্থান করার বার্তা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু কলকাতা নয়, মধ্যরাতের এই অবস্থান বিক্ষোভ জেলায় জেলায় ঘটতে চলেছে। শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা, একের পর এক জায়গার উল্লেখ করে অবস্থানের বার্তা পোস্ট, শেয়ার, কমেন্ট করে দলমত নির্বিশেষে হাজারে হাজারে মহিলা জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘আমিও থাকবো’। আর জি কর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের প্রতিবাদে মধ্যরাতেই রাস্তায় নেমে অভূতপূর্ব বিক্ষোভের সাক্ষী হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ।
সাতাত্তর বছর আগে এরকমই এক ১৪ আগস্টে গোটা দেশ রাত জেগেছিল। মধ্যরাতের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘সময় এসেছে, এখন আমরা অর্থবহভাবে অঙ্গীকার পূরণ করবো। বিশ্ব যখন ঘুমে মগ্ন, তখন জীবন এবং স্বাধীনতায় জেগে উঠবে ভারত।’ এবারের ১৪ আগস্টে বাংলার মহিলারা যেন অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেই লড়াইতেই নামতে চলেছেন। মধ্যরাতেই পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের পরে ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের মাথা। মধ্যরাতেই আর জি করের মহিলা চিকিৎসক ডিউটির মাঝে বিশ্রাম নিতে সেমিনার রুমে ঢুকে ধর্ষিতা ও খুন হওয়ার পরে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ‘মধ্যরাতে একা সেমিনার রুমে গেছিল কেন?’ মধ্যরাতের দুষ্কৃতী মালিকানা আর  দুষ্কৃতী শাসনকেই বৈধতা দেওয়া শাসকদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে পিতৃতান্ত্রিক বিধিনিষেধে কোণঠাসা মহিলারা রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্বাধীনতার মধ্যরাতেই তাঁরা রাস্তায় নেমে দখল নিতে চায় সময়ের, ন্যায়বিচার চান আর জি কর হাসপাতালের নৃশংস ঘটনার।
সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সোশাল মিডিয়াতে তাই বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে ‘মেয়েরা, রাতের দখল নাও/মধ্যরাতে/ আর জি করে... রাজ্যজুড়ে’। সোচ্চারিত নারী, মশাল হাতে নারী ইত্যাদি নানা ছবির পোস্টার সহ জায়গার নাম উল্লেখ করে এই পোস্ট গত দু’দিনে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এআইডিডব্লিউএ রাজ্যজুড়ে সর্বত্র এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে। সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সোশাল মিডিয়াতে একই বার্তা শেয়ার করেছেন। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিও সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন এবং কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ও সমর্থন করেছেন মধ্যরাতের কর্মসূচিকে। 
এখনও অবধি সোশাল মিডিয়াতে যে সব এলাকার উল্লেখ করে রাত দখলের কর্মসূচির কথা জানা গিয়েছে তার মধ্যে কলকাতায় উত্তরে আর জি কর অর্থাৎ শ্যামবাজার তো আছেই, এছাড়াও দক্ষিণে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যা ন্ড, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস, কলেজ স্ট্রিট সহ বিভিন্ন এলাকার নাম রয়েছে। এছাড়াও জেলায় জেলায় বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচির প্রস্তুতির কথা জানা গিয়েছে। বেহালা শখের বাজার, সিঁথির মোড়, নিউটাউনের বিশ্ববাংলা গেট, ডানলপ খালসা মডেল স্কুল, নাগেরবাজার, হাওড়া ময়দান থেকে শুরু করে শিলিগুড়িতে দার্জিলিঙ মোড়, মালদহ ইংলিশ বাজার পোস্ট অফিস মোড়, উত্তরপাড়া কলেজ মোড়, মধ্যমগ্রাম চৌমাথা মোড়, বনগাঁর নীলদর্পণ, শ্রীরামপুর, রায়গঞ্জের ঘড়িমোড়, ব্যারাকপুর স্টেশন, দুর্গাপুর, শান্তিপুর ডাকঘর, নৈহাটি, আরামবাগ, বর্ধমানের কার্জন গেট, শান্তিনিকেতনের রতনপল্লি, আন্দুল বাস স্ট্যান্ড, হাওড়ার বি ই কলেজের ১ নম্বর গেট, কদমতলা পাওয়ার হাউস, বারাসত, চুঁচুড়া, চন্দননগর ইত্যাদি জায়গায় মধ্য রাতের দখল নিতে মহিলারা নামবেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহিলারা প্রচার করছেন। 
কিন্তু ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে, মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তৃণমূলে। সমর্থন দূরের কথা, এই আন্দোলন ভাঙার চেষ্টায় তারা নেমে পড়েছে। যাঁরাই সোশাল মিডিয়াতে সক্রিয় হয়েছেন তাঁদের ফোনে অথবা সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কোথাও স্থানীয় কাউন্সিলর, কোথাও স্থানীয় ক্লাবের মস্তান দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা উল্লেখ করে মধ্যরাতে রাস্তায় নামতে বারণ করা হচ্ছে। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত জনবিক্ষোভের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তৃণমূলেরও কারও এখন প্রকাশ্যে মহিলাদের বিরোধিতা করার সাহস হচ্ছে না। পরিস্থিতিতে অন্যরকম স্রোত দেখা যাচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment