R G KAR Mother

মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যা মুখের ওপরেই নাকচ মায়ের

রাজ্য

‘‘মেয়ের মুখটা একবার দেখার জন্য পুলিশের পায়ে ধরেছি। ‘তদন্ত চলছে’ বলে আমাদের দেখতে দেওয়া হয়নি।’’ শনিবার এই মর্মন্তুদ অভিযোগ করেন আরজি কর হাসপাতালে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের শিকার চিকিৎসক-ছাত্রীর মা। 
এদিন সাংবাদিকদের সামনে ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘আমাকে ওইদিন সকাল ১০.৫৩ মিনিটে প্রথম ফোন করে খবরটা দেয়। হাসপাতাল থেকে বলে আপনার মেয়ে অসুস্থ। আমি জিজ্ঞাসা করি, আমার মেয়ের কি হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কি ডাক্তার? আপনারা এখনই আসুন। আমি তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি। তখন সহকারী সুপার আমাদের ফোন করে বলেন, আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি ভাবি সব শেষ।’’
চিকিৎসক-ছাত্রীর মা এদিন আরও বলেন, ‘‘হাসপাতালে গিয়ে আমার মেয়ের মুখটা একবার দেখানোর জন্য পুলিশকে বলি। আমি পুলিশের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি। বলেছি, মেয়ের মুখটা একটু দেখতে দিন। ওরা আমাকে দেখতে দেয়নি। ওরা বলেছে, তদন্ত চলছে। আমি বলেছি, তদন্ত চলুক। আপনাদের সামনে আমি আমার মেয়ের মুখটা একটু দেখতে চাই। আমাদের বলেছে, আপনাদের যেতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্ট ডিপার্টমেন্টের ঘরে বসিয়ে রাখে। আমাদের অনেক হেনস্তা করেছে। মৃতদেহ আনা অবধি আমাদের হেনস্তা করা হয়েছে।’’ এদিন চিকিৎসক-ছাত্রীর বাবাও হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের মুখ দেখতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন। 
মা এদিন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুলিশ সেদিন সিজার লিস্ট তৈরি করছিল। আমাকে কিছু মেডিক্যাল রিপোর্ট ও ওষুধ দেখিয়ে বলে, আপনার মেয়ে অনেক ওষুধ খেতো। আপনার মেয়ে অসুস্থ ছিল। এইভাবে পুলিশ কেসটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছিল। আমি প্রতিবাদ করি। পুলিশকে বলি, আমার মেয়েকে গত সপ্তাহে অজানা কিছু একটা কামড়েছে। আমার মেয়ের আউটডোরে ডিউটি ছিল। তখন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ এই ওষুধ ওকে দিয়েছে। এরপর আর পুলিশ কেসটা ঘোরাতে পারেনি। পুলিশ আমাদের হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি বের করে দিতে চাইছিল। মেয়ের খুবই প্রিয় গাড়িটাকে পুলিশ ভেঙে দিতে চাইছিল। আমি ওদের বলি, মেয়ের এই প্রিয় গাড়িটাকে ভাঙবেন না।’’
তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। উনি আমাকে বলেন, আসল দোষীকে আমরা ধরেছি। আমি বলেছি, আমি ওকে আসল দোষী মনে করছি না। ও জানলো কি করে যে আমার মেয়ে ওই ঘরে একা আছে? এই ঘটনার পেছনে ভেতরের লোক অনেকেই জড়িত আছে। পরে আমার মেয়ের দেহ দেখে মনে হয়েছে, একজন নয়, একাধিক লোক এই ঘটনায় জড়িত আছে। আমরা মনে করি, পুরো চেষ্ট মেডিসিন বিভাগ জড়িত আছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী আমাকে একটা টাকার কথা বলেন। এটা আপনার মেয়ের নামে কিছু করে রাখবেন। আমি বলেছি, এটা আমি নিতে পারব না। তাহলে আমার মেয়ে আমাকে ওপর থেকে ছিঃ বলবে। আমি চাই নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। আসল দোষীরা ধরা পড়ুক। দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজা হোক।’’
চিকিৎসক-ছাত্রীর মা আরও বলেন, ‘‘আজকে আটদিন অতিক্রান্ত হয়েছে। আমি তো মা। আমি সব হারিয়েছি। এরকম দিন যেন কোনও মায়ের জীবনে না আসে। আমরা পুলিশের ওপর ভরসা করতে পারছিলাম না। ওরা তদন্তে দেরি করছিল। আমাদের সাথে সহকারী সুপার, বিভাগের প্রধান, কেউ আজ অবধি দেখা করতে আসেনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা রয়েছে। আমার মেয়ের বিচারের দাবিতে সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। আমি আমার অন্তঃস্থল থেকে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই। একটা মেয়েকে হারিয়েছি, কিন্তু কোটি কোটি মেয়কে আমার পাশে পেয়েছি। আমার মেয়ের বিচার যতদিন না পাব, ততদিন এইভাবে আমার পাশে যেন ওরা থাকে।’’
চিকিৎসক-ছাত্রীর বাবা এদিন বলেন, ‘‘তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশের কিছু গাফিলতি আমাদের নজরে আসে। সেইজন্য আমরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছি। এখন সিবিআই তদন্ত করছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ আমাদের প্রথমদিন বলেন, আমার সাথে কথা বলতে হলে আমার ঘরে আসতে হবে। চেষ্ট মেডিসিন বিভাগের কেউ আমাদের সাথে আজ অবধি কথা বলেনি। পুলিশ কমিশনার প্রথমদিকে আমাদের সাথে কোনও সহযোগিতা করেনি। পরের দিকে চাপে পড়ে সহযোগিতা করে। আমার মেয়ে অসুস্থ প্রথমে বলা হয়। এরপর বলা হয়, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মেয়ে বলতো, আমার আরজি কর হাসপাতালে আর যেতে ইচ্ছে করে না। এমডি’তে যেটা শেখার, সেটা আমার হয়ে গেছে। এখন যাই, কাজ করি, চলে আসি।’’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেনি। আমার তো মনে হয়, এর পেছনে বিরাট বিরাট চক্র কাজ করছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment