New Parliament Building

আজ উদ্বোধন নয়া সংসদের

জাতীয়

New Parliament Building

সাংবিধানিক ও সংসদীয় রীতিনীতি লঙ্ঘন করে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে বাদ দিয়েই রবিবার নবনির্মিত সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের বয়কট এবং বিভিন্ন মহলের দাবি সত্ত্বেও উদ্বোধক হিসাবে তো নয়ই, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণটুকুও জানানো হয়নি ভারতীয় সংসদের প্রধান স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে। ডাক পাননি উপরাষ্ট্রপতি তথা সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ও। এর মধ্যেই রীতিমতো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আবহে ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংসদ উদ্বোধনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করে ফেলেছে মোদী সরকার।

 


বর্তমান সংসদ ভবনের কাছেই ৬৪,৫০০স্কোয়ার মিটার জায়গা জুড়ে ত্রিভুজাকৃতি পাঁচতলা নতুন সংসদ ভবন নির্মিত হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর মৃত্যুমিছিল চলাকালীন বিপুল খরচে এই নির্মাণ শুরুর ব্যাপারে বিরোধীদের ঘোরতর আপত্তি থাকলেও তা কানে তোলেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। নয়া ভবন তৈরির শুরু থেকে শেষ, একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি-আরএসএস সরকার। ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত রামনাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ না জানানোয় সেসময় একপ্রস্থ বিতর্ক হয়। 
এবার দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে এই ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে দূরে রাখায় দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ক্ষুব্ধ বিরোধীরা বলেছেন, ‘‘শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির (মোদীর) অহংবোধ এবং আত্মপ্রচারের উদগ্র ইচ্ছা দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিলো।’’ পর্যবেক্ষকদেরও বক্তব্য, ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচন। দেশের ইতিহাসে নিজের ‘অনন্যসাধারণ প্রতিভা’ খোদাই করে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ব্যক্তিপ্রচারলোভী মোদী!
এছাড়াও, ব্রিটিশ শাসকের কাছে মুচলেকা-দানকারী হিন্দুত্ববাদী বিনায়ক দামোদর সাভারকারের জন্মদিনটিকেই নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধনের জন্য বেছে নেওয়ার পেছনেও সবিশেষ তাৎপর্য দেখতে পাচ্ছেন বিরোধীরা। অনেকেই মনে করছেন, এসব আসলে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বহুত্বের ঐতিহ্য মুছে ফেলে সর্বস্তরে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠার গোপন কর্মসূচির অঙ্গ। দেশের ইতিহাস ভুলিয়ে দিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। যাবতীয় মুসলিম নাম একের পর এক বদলে দেওয়ার ছকে উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হয়েছে ‘প্রয়াগরাজ’। গত জানুয়ারিতেই রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহাসিক মুঘল গার্ডেনের নাম বদলে করা হয়েছে ‘অমৃত উদ্যান’। এই এপ্রিলেই এনসিইআরটি’র ইতিহাস সিলেবাস থেকে মুঘল আমল সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলি ছেঁটে ফেলা হয়েছে।


মোদী-রাজত্বের এই পরম্পরার ছাপ আগামীকাল সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। চাপের মুখে  ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের’ লোক-দেখানো কিছু কর্মসূচি নেওয়া হলেও বাস্তবে রবিবারের অনুষ্ঠানে ‘সেঙ্গোল’ স্থাপনাসহ নানান কায়দায় হিন্দুত্ববাদকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা চলবে। ইতিমধ্যেই নানা আকারের সাধু-সন্তদের ভিড় চোখে পড়ছে রাজধানীতে। আগামীকাল তাঁদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকাতেও দেখা যেতে পারে। শনিবারই তামিলনাডুর অধীন মঠের একদল পুরোহিতকে নিজের বাসভবনে ডেকে ‘আশীর্বাদ’ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সংসদ কক্ষে স্থাপনের জন্য তাঁরা ‘মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সেঙ্গোল তুলে দেন’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
এদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার শনিবার পাটনায় বলেন, নতুন সংসদ ভবন তৈরির কোনও দরকারই ছিল না। আসলে স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অংশই নেয়নি, তারা এখন দেশের ইতিহাস নতুন করে লিখতে চাইছে! সংসদের নতুন বাড়ি তৈরি সেই চেষ্টারই অন্যতম অঙ্গ। এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারও এদিন মহারাষ্ট্রের পুনেতে বলেন, ব্রিটিশ আমলে তৈরি সংসদের পুরানো বাড়িটিতে ভালো অবস্থাতেই ছিল। তাও কারুর সঙ্গে কথা না বলে নতুন ভবন নির্মাণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন রাষ্ট্রপতিকে বাদ দিয়ে নিজেই ভবন উদ্বোধন করতে চলেছেন! অনুষ্ঠান বয়কট করে বিরোধীরা ঠিকই করছেন।   

Comments :0

Login to leave a comment