Noushad gets bail

৪১দিন পর জামিন হলো নওসাদের

রাজ্য

শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকল না পুলিশের কোনও যুক্তিই, আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্ট। শুধু বিধায়ক নন, আইএসএফ রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ মাইতি সহ ২১জনের জামিন হলো বৃহস্পতিবার। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিসন বেঞ্চ যাবতীয় সওয়াল জবাব শোনার পর পুলিশের যুক্তিকে নস্যাৎ করে বৃহস্পতিবার সকলের জামিন মঞ্জুর করেন। 
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলছি নওসাদ সিদ্দিকীকে মিথ্যে মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভাঙড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। তারপর নওসাদের নামে পুলিশকে খুনের চেষ্টার মিথ্যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এভাবেই মীনাক্ষী মুখার্জিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা চাই নওসাদ সিদ্দিকী সহ মিথ্যা মামলায় যতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সমস্ত মামলা খারিজ হোক এবং যে পুলিশ অফিসাররা এই মিথ্যা মামলা করেছেন তাঁদের বেতন কেটে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হোক। আদালতের কাছে আমরা এই আবেদন করব। 
ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট এদিন এক বিবৃতিতে বলেছে, ভিত্তিহীন অভিযোগে ৪১দিন জেল হেপাজতের পর আইএসএফ চেয়ারম্যান ও বিধায়ক মহম্মদ নওসাদ সিদ্দিকী ও দলের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিত মাইতি সহ ২১ জনের নিঃশর্ত জামিন আরও একবার প্রমাণ করল যে মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না, সত্যের জয় অবধারিত। স্বৈরাচারী তৃণমূল কংগ্রেস, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্ত দ্বারা পরিচালিত। এদেরকে আরও জনবিচ্ছিন্ন করতে হবে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হবে ও দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে হবে। 
বিবৃতিতে দলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গত ২১ জানুয়ারি থেকেই আমরা বলে আসছি যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ ৮৮জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গণতন্ত্রকে পদদলিত করে, সাংবিধানিক অধিকারকে ভূলুন্ঠিত করে রাজ্য সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতিতে লিপ্ত। এদিন হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চের রায় নিঃসন্দেহে সরকারকে জোর থাপ্পড় কষিয়েছে। আমরা বারবারই বলে এসেছি বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। গত ৪১ দিন ধরে নওসাদ সিদ্দিকী সহ অন্য বন্দিদের মুক্তির দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের যে তরঙ্গ উঠেছিল তাতে আমাদের পার্টির সর্বস্তরের নেতা ও কর্মীরা নিরন্তর শামিল ছিলেন। 
তাঁরা বলেন, আদালতের ভেতরে যেমন সওয়ালের ভেতর দিয়ে আমাদের আইনজীবীরা অকাট্য যুক্তি দিয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন, আদালতের বাইরেও গণআন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে পথে প্রান্তরে। সেই আন্দোলনে আইএসএফ সহ বামদলগুলি ও বিভিন্ন গণসংগঠন ছিলেন। স্বৈরাচারী সরকারের এই অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনও ক্রমাগত শাসকের ওপর চাপ তৈরি করেছে। আইএসএফ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি গণআন্দোলনে শামিল সকল দল ও সংগঠনকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। 
উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি ভাঙড়ে আইএসএফ কর্মীদের ওপর আক্রমণ হানে তৃণমূলের আরাবুল বাহিনী। এর প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভ কর্মসূচি করে আইএসএফ। সে সময়ে তাঁদের ওপর হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে নওসাদ সিদ্দিকী সহ বহু কর্মীকে। এরপর বিভিন্নভাবে নানা অজুহাতে বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ সাজায় পুলিশ যা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতিরাও। হেয়ার স্ট্রিট থানা এবং নিউমার্কেট থানায় মামলা দায়ের হয়। 
এখানেই শেষ নয়, এরপর লেদার কমপ্লেক্স থানা আরও মামলা জুড়ে দেয় নওসাদের বিরুদ্ধে। একের পর এক মিথ্যা ও জামিন অযোগ্য মামলায় ৪১ দিন জেল হেপাজতে থাকতে হয় বিধায়ক সহ আইএসএফ কর্মীদের। এমন কি পুলিশ হেপাজত থেকেও মুক্তি মেলেনি নওসাদের। নওসাদ সিদ্দিকী’র বক্তব্য ছিল, সামনে পঞ্চায়েত ভোট, তাই ভয় পেয়েছে শাসক দল। সেই কারণে ভাঙড়ের মানুষের থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা চলছে। নওসাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজ্য জুড়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে সিপিআই(এম) সহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদনের শুনানিতে সওয়াল জবাবের সময়ে বিচারপতি দেবাংশু বসাক প্রশ্ন করেন, আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি থেকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে— এমন আশঙ্কা পুলিশের হলো কেন? পুলিশের কাছে কী প্রমাণ আছে, যেখান থেকে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে পারত বলে মনে করা হয়েছে?  আগেই বিচারপতিরা গত ২১ জানুয়ারি আইএসএফ’র কর্মসূচির ভিডিও দেখতে চেয়েছিলেন। বুধবার সেই ভিডিও দেখেন তাঁরা। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এজলাসে বসে আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর বক্তৃতাও শুনেছেন। 
এরপরই ওইদিন বিচারপতিদের ডিভিসন বেঞ্চ মন্তব্য করেন,  সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই পুলিশ এত মানুষকে গ্রেপ্তার করে জেলে রেখে দিয়েছে। এটা কী করে হয়! ধৃতদের মধ্যে কোনও পথচারীও থাকতে পারেন। তাছাড়া পুলিশকে মারার নির্দেশের কোনও প্রমাণও দিতে পারেনি পুলিশ। বিচারপতিরা জানতে চান, পুলিশকে মারার প্রমাণ কোথায় ? বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে চারটি মামলার শুনানি একসঙ্গে গ্রহণ করেন বিচারপতিরা। এরপর বৃহস্পতিবার এক প্রস্ত শুনানির পর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারপতিদের ডিভিসন বেঞ্চ। জামিনের আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আইনজীবী সামিম আহমেদ।

Comments :0

Login to leave a comment