প্রবন্ধ
মুক্তধারা
যাহা পাই তাহা চাই না, যাহা চাই তাহা পাই না
অরিজিৎ মিত্র
২০২৫ ডিসেম্বর ১১ | বর্ষ ৩
মানুষের মনের ভেতরে এক আশ্চর্য দ্বিধা থাকে—যার জন্য জীবন ভরে ওঠে আকাঙ্ক্ষার আলোয়, আবার একই সাথে অনিশ্চয়তার ছায়ায়। হাতের কাছে যতটুকু আছে, তা প্রায়ই আমাদের মন ভরায় না; আর যেটুকু নেই, সেটাই সবচেয়ে আপন হয়ে ওঠে। এই চিরচেনা মানব-দ্বন্দ্বকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক অমূল্য সত্যে পরিণত করেছিলেন—
“তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।”
‘সোনার হরিণ’—এই প্রতীকটি শুধু একটি স্বপ্ন নয়, মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষার নাম। জীবনের প্রতিটি পর্বে আমরা এমন কিছু খুঁজি, যা ধরতে গেলেই আরও দূরে সরে যায়। শৈশবে যে খেলনাটির জন্য মন কাঁদত, বড় হয়ে সেটি আর কোনো আকর্ষণই রাখে না। আবার যে সুযোগ বা স্নেহ আমাদের হাতে ছিল, সেটাকে আমরা তখনই ধরতে পারিনি। মানুষ সবসময় দূরের দিকে তাকায়; কাছের জিনিসগুলো তার চোখে ধরা পড়ে দেরি করে।
রবীন্দ্রনাথ আরেকটি লাইনেও এই সত্যটিকে নিখুঁতভাবে ধরেছিলেন—
“পাবার জিনিস তোরা হাটে কিনিস…”
অর্থাৎ যে জিনিস সহজেই পাওয়া যায়, তাকে মানুষ বাড়তি মূল্য দেয় না; আর যা অধরা, সেটাই সবচেয়ে মূল্যবান বলে মনে হয়।
আমাদের জীবনের গল্পও ঠিক এমনই। কাছে যা আছে, তা যেন সাধারণ; আর যা নেই, তা যেন অসাধারণ। ফলে চাইতে চাইতে, দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা কখনো লক্ষ্য করি না—আমাদের নাগালের মধ্যেও কত আলো, কত শান্তি, কত আশ্রয় আছে।
যাহা পাই তাহা চাই না—এর পিছনে আছে আমাদের অস্থির মন;
যাহা চাই তাহা পাই না—এর পিছনে আছে জীবনের স্বাভাবিক খেলা।
কিন্তু তার মাঝখানে আছে উপলব্ধির এক ছোট্ট সত্য—কাছে যা আছে, তার মূল্য বোঝা হয়তো দূরের স্বপ্ন পাওয়ার চেয়েও বড় প্রজ্ঞা।
স্বপ্ন থাকা ভুল নয়; বরং মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি স্বপ্নই। কিন্তু স্বপ্ন যেন এমন না হয় যে কাছে থাকা সৌন্দর্যগুলো ঢেকে যায়।
চাওয়া থাকুক, পথ চলা থাকুক—
কিন্তু জীবনকে বোঝার ক্ষমতাটাও যেন অটুট থাকে।
রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার হরিণ’ আমাদের দৌড় করাক, আমাদের স্বপ্ন দেখাক—
কিন্তু সেই দৌড়ের মাঝেই যেন আমরা ভুলে না যাই:
হাতে যা আছে, তা হারিয়ে গেলে—
অধরা স্বপ্নের আলোর চেয়েও তা অনেক বেশি অন্ধকার রেখে যায়।
নবম শ্রেণী কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা কল্যাণ নগর, খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা
Comments :0