পেরুর রাষ্ট্রপতি পেড্রো কাস্তিলোকে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টার জেরে শুরু হয়েছে অভ্যুত্থানের অভিযোগে মামলাও। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে গেছে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি মদতপুষ্ট ও কর্পোরেট গোষ্ঠীর সাহায্যে বিরোধী নিয়ন্ত্রিত সংসদে কাস্তিলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতেই বোঝাই যাচ্ছিল কাস্তিলোকে সংসদে অভিশংসিত করা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। দক্ষিণপন্থী বিরোধী শক্তির লক্ষ্য প্রথমে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে কাস্তিলোকে সরানো, তার পর নির্বাচিত বামপন্থী সরকারটাই ভেঙে দেওয়া। কাস্তিলো বিরোধীদের ছক বুঝে তড়িঘড়ি পার্লামেন্ট (সংসদ) ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার ফল হয় উলটো।
সংসদের অধিকাংশ সদস্য বিরোধীদের সঙ্গে একযোগে ‘‘নৈতিক অক্ষমতা’’র অভিযোগে কাস্তিলোকেই রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারিত করেন। সংসদে ১৩০ জন সদস্যের মধ্যে ১০১ জন কাস্তিলোর বিরুদ্ধে ভোট দেন। কাস্তিলোকে সমর্থন করেন ৬ জন। ১০ জন ভোটের সময় সংসদে অনুপস্থিত থাকেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কিছু সময় পরে গ্রেপ্তার করা হয় কাস্তিলোকে।
অন্যদিকে কাস্তিলোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি পদে শপথগ্রহণ করানো হয় দিনা বুলয়ার্তকে। প্রবীণ মহিলা আইনজীবী বুলয়ার্তই হলেন দেশের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি। এর আগে রাষ্ট্রপতি কাস্তিলোর সময় তিনি উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। শপথগ্রহণের পর বুলয়ার্ত ২০২৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কথা ঘোষণা করেন।
২০২১ সালের জুন মাসে পেরুতে রাষ্ট্রপতি ভোট হয়। নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদে কাস্তিলোর রানিং মেট হিসাবে ছিলেন দিনা বুলয়ার্ত। সেবার পেরুতে গঠিত হয় বামপন্থী সরকার। কাস্তিলো এবং বুলয়ার্ত নতুন সরকারের পরিচালনায় একযোগে কাজ করেন। অবশ্য সংসদ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টার কারণে বুলয়ার্ত রাষ্ট্রপতি কাস্তিলোর পাশ থেকে সরে যান। শপথ নেওয়ার পরে নতুন রাষ্ট্রপতি দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এছাড়াও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার সমর্থন চান তিনি।
লিমায় রাজনৈতিক মহলে চাউর কিছু সময় ধরেই কাস্তিলোর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগে চাপ বাড়ছিল। শুরু হয়েছিল তদন্ত। বিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত সংসদে কাস্তিলোর বিরুদ্ধে ‘নৈতিক অক্ষমতার’ আরোপে দেশ বিরোধী কাজের দায়ে অভিশংসনের প্রক্রিয়া গড়াতে থাকে। কিন্তু বিরোধীদের বারে বারে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র ধাক্কা খাচ্ছিল। আগে দু’বার ভেস্তে যায় সংসদে অভিশংসনের তোড়জোড়।
লাতিন আমেরিকার মেক্সিকো, বলিভিয়া, কলম্বিয়া এবং চিলির সরকার পেরুতে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পেড্রো কাস্তিলোকে সরিয়ে দেওয়া এবং গ্রেপ্তার করার নিন্দা করেছে। ‘‘পুঁজিপতি এবং অভিজাত শ্রেণির স্বার্থেই কাস্তিলোকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে। জনাদেশে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়। ইচ্ছাকৃত ভাবেই তৈরি করা হয় শত্রুতাপূর্ণ এবং সঙ্ঘাতের আবহ। বাস্তবে যা কাস্তিলোকে কঠোর নীতি গ্রহণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সুবিধা হয়েছে বিরোধীদের,’’ সাংবাদিকদের এই কথা জানান মেক্সিকোর বামপন্থী সরকারের রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর। তিনি আরও বলেন,‘‘ আশাকরি মানবাধিকার সম্মান পাবে। আমজনতার স্বার্থে বজায় থাকবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।’’
পেরুতে রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলিভিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস। ‘‘আমরা আবারও দেখছি পেরুর ক্ষমতাশালী শ্রেণি এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ মেহনতিদের জন্য স্বচেষ্ট শ্রমিক সংগঠন অথবা আদি ও মূল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সরকারে মেনে নিতে পারছেন না,’’ জানান মোরালেস। পেরুতে নিরাপত্তা, জীবনের আধিকার এবং শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সহাবস্থান বজায় রাখার দাবি করেন তিনি। এছাড়াও আর্জেন্টিনা এবং চিলির বিদেশমন্ত্রক থেকেও পেরুতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বুধবার লিমায় কাস্তিলোর সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পেরুতে রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে মেক্সিকো প্যাসিফ অ্যালাইন্সের ১৭ তম সম্মেলন বাতিল করেছে। এবার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে মেক্সিকোতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
Comments :0