Putin speech

আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্থগিত রাখল রাশিয়া

আন্তর্জাতিক

Putin speech

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত রাখল রাশিয়া। ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর লাগাতার অস্ত্র সরবরাহের প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১০ সালে নতুন করে স্বাক্ষরিত এই ‘স্টার্ট’ চুক্তিতে উভয় দেশের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা সীমায়িত করা হয়েছিল। তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ও রুশ রাষ্ট্রপতি দমিত্রি মেদভেদেভের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়েছিল। মেয়াদ ফুরোনোর আগে ২০২১-এ আরও পাঁচ বছর এই চুক্তির মেয়াদবৃদ্ধি হয় উভয় দেশের সম্মতিতে। আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানে উভয় দেশই ১৫৫০-র বেশি পরমাণু অস্ত্রমুখ রাখবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই সংখ্যা নির্ধারিত হয় ২০১৮ সালে।

মঙ্গলবার ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ বার্ষিক ভাষণে পুতিন একথাও জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন নতুন করে পরমাণু পরীক্ষার কথা ভাবছে। তা যদি হয় তাহলে রাশিয়াও এই পরীক্ষা শুরু করতে প্রস্তুত থাকবে। রাশিয়া প্রথম উদ্যোগ নেবে না। কিন্তু তেমন হলে পরীক্ষা শুরুর জন্য তৈরি থাকতে হবে। পুতিনের এই ভাষণে বিশ্বের চলতি পরমাণু অস্ত্রের ভারসাম্য প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের মোট পরমাণু অস্ত্রের ৯০ শতাংশই রয়েছে এই দুই দেশের হাতে।

ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর হচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঠিক তার আগেই পুতিন তাঁর ভাষণে অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেনি। ইউক্রেনের জনগণের সম্পর্কে তাঁর কোনো বৈরিতা নেই। কিন্তু তাঁরা কিয়েভের শাসক চক্র ও পশ্চিমী শক্তিগুলির হাতে বন্দি হয়ে গেছেন। কার্যত পশ্চিমী শক্তিগুলি ইউক্রেনকে রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে দখল করে রেখেছে। যুদ্ধে যাঁদের পরিবারের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ব্যথা তিনি অনুভব করছেন। কিন্তু যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়াকে রক্ষা করতে। পশ্চিমী অভিজাতরা চায় রাশিয়াকে ধ্বংস করতে। শুধু সামরিক ভাবেই নয়, রাশিয়ার সংস্কৃতি ও নিজস্বতাকেও তারা ধ্বংস করতে চাইছে। এই কারণেই পশ্চিমী শক্তিগুলি নিজেদের সামরিক লক্ষ্য গোপনও করছে না। একটি স্থানীয় সংঘাতকে তারা বিশ্বজোড়া সংঘাতে পরিণত করতে চাইছে। একই সঙ্গে তারা চাইছে রাশিয়ার পরমাণু কেন্দ্রগুলি দখল করতে। রাশিয়া প্রত্যুত্তরে তৈরি কেননা এখানে রাশিয়ার অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন জড়িত।


পুতিন বলেন, মার্কিনীদের সঙ্গে চুক্তিতে তারা রাশিয়ার পরমাণু কেন্দ্রগুলি পরীক্ষা করছিল। অথচ দেখা গেল ইউক্রেনের ড্রোন রাশিয়ার সেই বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করল যেখানে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। সেই ড্রোনে ন্যাটোর উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। এই অবস্থায় রাশিয়া পরমাণু কেন্দ্র পরীক্ষা করতে দেবে ভাবাই অর্থহীন। 
পুতিন তাঁর ভাষণে অভিযোগ করেছেন, ন্যাটোকে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত করা হচ্ছে। ইউক্রেনকে অস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছে। পূর্ব ইউরোপকে এমন ভাবে অস্ত্রে সাজানো হচ্ছে যাতে রাশিয়াকে আক্রমণ করা যায়। এই কারণেই এই সংঘাত হচ্ছে। তাঁর দাবি, রাশিয়াকে যুদ্ধে হারানো যাবে না। এই যুদ্ধে আমরা জিতবই। এইসঙ্গেই তিনি বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমী অবরোধ কোনও কাজে লাগেনি। এই অবরোধ ব্যর্থ হয়েছে।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন গোপনে এবং আকস্মিকভাবে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন সোমবার। মঙ্গলবার তিনি পোল্যান্ডে গেছেন। পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেজ দুদা বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমেরিকাই বিশ্ব ব্যবস্থা রক্ষা করতে পারে। বাইডেনের একটি ভাষণ দেবার কথাও রয়েছে। পুতিনের ভাষণের কী জবাব তিনি দেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার আগে মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্থনি ব্লিন্কেন বলেছেন, পরমাণু নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। ন্যাটের মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, পুতিনের সিদ্ধান্ত পৃথিবীকে আরও বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দেবে। 

Comments :0

Login to leave a comment