অধ্যক্ষ কি কাউকে লুকাচ্ছেন? ঘটনার ১৪ ঘন্টা পরে কেন এফআইআর? অধ্যক্ষ নিজে কেন দায়ের করলেন না এফআইআর? তাঁর পদত্যাগের পরই আরেক কলেজে প্রিন্সিপাল করা হলো কেন?
আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণ মামলার শুনানিতে এমনই একের পর এক কড়া প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছে। শিয়ালদহ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আরজি করে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের ভূমিকায় একের পর এক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সন্দীপ ঘোষকে অন্য কলেজের অধ্যক্ষ করার ঘোষণা শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও। সন্দীপ ঘোষকে টানা জেরা করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বক্তব্য, বয়ানে বারবার অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর পলিগ্রাফ টেস্ট করতে চাইছে সিবিআই।
‘আশ্চর্যজনক’ এবং ‘সন্দেহজনক’। সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ঘুরে ফিরে এমনই মন্তব্য করে গিয়েছে বৃহস্পতিবারের শুনানিতে। কড়া প্রশ্নের মুখে পড়ছে কলকাতা পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা। আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণে ‘বিস্মিত’, ‘বিরক্ত’ বিচারপতিরা।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রী ধর্ষণ হত্যায় তদন্ত পদ্ধতিতে বারবার সন্দেহ জানাচ্ছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। বেঞ্চে রয়েছেন দুই বিচারপতি জোবি পরদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র।
বেঞ্চের বক্তব্যে পুলিশের ভূমিকায় খেদ স্পষ্ট। স্পষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় বিরক্তি। বিচারপতিরা বলেছেন, ‘‘অস্বাভাবিক মৃত্যু নথিভুক্ত করতে এত দেরি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে ৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৬.১০ মিনিটে। অথচ টালা থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে রাত সাড়ে ১১টায়। এই দেরি অত্যন্ত চিন্তার।’’
প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবালকে প্রশ্ন করেন, জেনারেল ডাইরি হয়েছে রাত দশটার পর। অথচ তার আগেই মেডিক্যাল বোর্ড প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলেছিল যে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষণও করা হতে পারে। ময়নাতদন্ত সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টায় হয়েছে। অথচ তার অনেক পরে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডাইরি করা হলো। এটা কিভাবে সম্ভব?
বিচারপতি পরদিওয়ালার মন্তব্য, ‘‘ত্রিশ বছরের কর্মজীবনে এমন তদন্ত দেখিনি। অস্বাভাবিক মৃত্যু নথিভুক্ত হলো রাত সাড়ে দশটার পর। অথচ তার আগে ময়নাতদন্ত হয়ে গেল।’’ তিনিই বলেন, ‘‘হাসপাতালের নন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিচারপতি পরদিওয়ালা বলেছেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা হলো না। অথচ ময়না তদন্ত শুরু হয়ে গেল।’’
নিহত ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার পরিচয় দিয়েই হাসপাতাল থেকে তাঁদের প্রথমে বলা হয়েছিল যে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
সুপ্রিম কোর্টে বৃহস্পতিবার সওয়ালেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশ। তা যে মনে করার কারণ রয়েছে স্পষ্ট হয়েছে বিচারপতিদের সওয়ালেই।
Comments :0