RG KAR RALLY

সূর্য ডুবতেই জ্বলল ক্ষোভের আগুন

রাজ্য

ডুয়ার্সের বানারহাটে চা শ্রমিক মহিলা সহ সমাজের অনান্য অংশের মহিলাদের মিছিল।

মধ্যরাতে রাস্তার দখল নেওয়ার ডাক উঠেছে। সজো সাজো রব সর্বত্র। বুধবার তার আগেই সন্ধ্যা তেকে বাংলার সর্বত্র পথে নামছেন অসংখ্য নাগরিক। নামছেন মহিলারা। আওয়াজ উঠছে: বিচার চাই।
আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ হত্যার প্রতিবাদে ধূপগুড়ি থেকে বসিরহাট, সর্বত্র ধরা পড়ছে এই ছবি। সই সময়ই, যখন চিকিৎসকরা বলছেন যে কোনও লিখিত ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ ছাড়াই মঙ্গলবার আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার কক্ষ সংলগ্ন দেওয়াল ভাঙা হয়েছে। এই কক্ষেই মিলেছিল নির্যাতিতার রক্তাক্ত দেহ। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় ক্ষোভ জোরালো হয়েছে আরও।  


বুধবার বিকেলে কলকাতায় হয়েছে নাগরিক মিছিল। এসেছেন সব অংশের মানুষ। সূর্যের আলো নিভতেই বসিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র টাউন হল ময়দানে বিকাল থেকে উত্তাপ বাড়ছিল বসিরহাটের নাগরিক সমাজের ভিড়ে। সন্ধ্যা গড়াতেই মাঠ পরিপূর্ণ। মোবাইলের আলো মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে মিছিল শুরু হয় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ধ্বনি তুলে। সঙ্গে শঙ্খধ্বনি উলু দিতে দিতে জেদি মিছিল এগিয়ে যায় বসিরহাট পোস্ট অফিসের দিকে। সমাজের নানান অংশের সহস্রাধিক মানুষ যোগ দেন মিছিলে।
হাসনাবাদে হয়েছে পথ অবরোধ। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আওয়াজ তোলে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই। হাড়োয়া গার্লস হাইস্কুলের প্রাক্তনীরা ও হাড়োয়ার আপামর সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। 


হুগলী জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র- যুব, মহিলা সহ অন্যান্য গণসংগঠনের উদ্যোগে মোমবাতি হাতে মিছিল ও বিক্ষোভ দেখানো হয়। 
কোচবিহারের দিনহাটায় ১৪ আগস্ট মহিলারা রাত দখলের ডাক দিয়েছেন। সেই আন্দোলনের প্রতি কুৎসিত ইঙ্গিত করে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, দিনহাটার কেউ কেউ রাতের দখল নিতে চাইছেন আমার সমর্থন রইল। তারপরেই ওই পোস্টে তাঁর সংযোজন, তবে স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে রাতে ফোন করবেন না।
এই পোস্টের পরেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিশেষত মহিলারা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। অবশ্য মন্ত্রীমশাই কারুর কমেন্টসের জবাব দেননি। এভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকেই এসেছে সরাসরি বা প্রচ্ছন্ন হুমকির খবর। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মঙ্গলবারই শাসানি আর হুমির প্রতিবাদ জানান ছাত্রছাত্রীরা। 
শিলিগুড়ির হাসমি চকে সিপিআই(এম) দার্জিলিং জেলা কমিটি অবরোধ বিক্ষোভ করেছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল করেছে বামফ্রন্ট। বামপন্থী গণসংগঠনও যোগ দেয় প্রতিবাদে। 
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বাজারে বামফ্রন্টের ডাকে বিক্ষোভ মিছিল ও থানাতে  ডেপুটেশন হয়। এই ঘটনা যে বিচ্ছিন্ননয়, রাজ্যে ধর্ষণ এবং ধর্ষণ খুনের একের পর এক ঘটনা সামনে আসছে বারবার, কামদুনি থেকে চোপড়া, নিপীড়কদের আড়াল করছে তৃণমূল সরকার, বলা হয় তা-ও।
পূর্ব বর্ধমান জেলা আন্দোলনে উত্তাল। এদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ করে চিকিৎসক ও জুনিয়র ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মীরা দিনভর বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মেমারী গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
কোচবিহার শহরে কোতোয়ালি থানায় বিক্ষোভে শামিল হন শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মহিলারা।    এদিন কোচবিহার শহরে কমরেড গোপাল সাহা ভবনের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে সমবেত হয় কোচবিহার কোতোয়ালি থানার সামনে। এখানেই বিক্ষোভে শামিল হন তারা। কোচবিহার শহরে জনরোষের মুখে পড়তে হলো পুলিশকে। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মহিলারা বুধবার সন্ধ্যায় কোচবিহার শহরে এএল দাস চৌপথিতে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করতে উদ্যত হলে, তা কেড়ে নেয় পুলিশ। এরপরই জনতার রোষের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। উত্তেজিত জনতা রীতিমতো ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের সাথে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।

বুধবার বিকেলে হরিহরপাড়া বামপন্থী গণসংগঠন সমূহের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়। হরিহরপাড়া সিপিআই(এম) অফিস থেকে শুরু হয় মিছিল। হাসপাতাল মোড় হয়ে ব্রিজ মোড় পর্যন্ত এই বিক্ষোভ মিছিল চলে।
এদিন বহরমপুরে রাস্তায় নামেন  মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরাও। বুধাবার মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলে মিলে এদিন বহরমপুরে মিছিল করেন। 
হাওড়া ময়দানে জিটি রোড অবরোধ করে প্রতিবাদে সামিল হলো সি পি আই (এম) কর্মী সমর্থকরা। সিপিআই(এম) হাওড়া জেলা কমিটির ডাকে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, পাটিনেতা পরেশ পাল ও শহীদ ছাত্র কমরেড আনিস খানের বাবা সালেম খান।
প্রতিবাদে সরব হলেন আইনজীবীরাও। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, দুই জেলার ৬টি আদালত চত্বরে হয় প্রতিবাদ কর্মসূচি ও ধিক্কার মিছিল। আইনজীবীদের শ্লোগানে আদালত চত্বর গমগম করে ওঠে। বুকে কালো ব্যাচ, হাতে প্লাকার্ড ব্যানার। মেদিনীপুর আদালত চত্বরে আওয়াজ তুললেন উই ওয়ান্ড জাস্টিস। আইনজীবীদের সাথে সামিল হলেন ল-ক্লার্ক সহ নানান কর্মী।
সরকারি চিকিৎসক সংগঠন এএইচএসডি স্লোগান দিয়েছে, ‘অভয়ার জন্য রাতের দখল নাও। মধ্যরাতে চলো আরজি করে’। কলকাতায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বেসরকারি পিয়ারলেস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও।  

Comments :0

Login to leave a comment