STORY — SOURISH MISHRA | RABITHAKUR — NATUNPATA | 5 MAY 2024

গল্প — সৌরীশ মিশ্র | রবি ঠাকুরের জন্য — নতুনপাতা | ৫ মে ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  RABITHAKUR  NATUNPATA  5 MAY 2024

গল্প

রবি ঠাকুরের জন্য

সৌরীশ মিশ্র

নতুনপাতা


এক

"বাবা, দিতে দেবে তো?"
"দেওয়া তো উচিত। কেন দেবে না!"
বাবার কথা শুনে বেশ কিছুটা আশ্বস্ত হয় বছর বারোর কুহু।

পঁচিশে বৈশাখের সকাল। বাবা-মা'র সাথে প্রতি বছরের মতো এবারও রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান দেখতে চলেছে কুহু। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি হয় স্কোয়ার পার্কে। সেখানেই চলেছে ওরা।

অটো নিয়ে স্কোয়ার পার্কে পৌঁছতে ওদের মিনিট পনেরো লাগল। আর, সুবিশাল পার্কটায় ঢুকেই ওরা দেখল অনুষ্ঠান প্রায় শুরু হওয়ার মুখে। যন্ত্রসংগীত শিল্পীরা মঞ্চে উঠে পড়েছেন।
"তাড়াতাড়ি চল্ কুহু।"
"হ্যাঁ, চলো বাবা।"
"তোমরা যাও, আমি তাহলে বসি গিয়ে।" কুহুর মা কুহুর বাবাকে বললেন কথাটা।
"হ্যাঁ, তুমি গিয়ে বসো। আর, আমাদের দু'জনের জন্য দুটো চেয়ার রেখো।"
"ঠিক আছে।"
কুহুর মা পা বাড়ান দর্শকাসনের দিকে। আর, কুহু আর কুহুর বাবা মঞ্চের দিকে।

মঞ্চের সামনে পৌঁছে কুহুর বাবা দেখলেন, মঞ্চে ওঠার মুখটায় তিনজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে। ওঁরা যে কর্মকর্তা বুঝতে অসুবিধা হোলো না কুহুর বাবার। প্রত্যেকের বুকে যে সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীটি এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে তার ব্যাচ্।
কুহুর হাত ধরে ওর বাবা এগিয়ে গেলেন ওঁদের দিকে।
"এক্সকিউজ মি, আমার একটা কথা ছিল আপনাদের সাথে।"
"হ্যাঁ বলুন।" তিনজন ব্যক্তির মধ্যে সবচাইতে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি তিনিই বললেন কথাটা।
"আমার মেয়ে একটা ফুলের মালা নিজের হাতে গেঁথে এনেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতে পড়াবে বলে।" কুহু তার হাতে ধরা ছোটো ক্যারিব্যাগটা থেকে বেলি ফুলের মালাটা বের করে দেখায়। "আপনারা যদি পারমিশন দেন তবে ও এই মালাটা আপনাদের মঞ্চে যে রবি ঠাকুরের ছবিটা আছে তাতে পড়াতে পারে..."
"হ্যাঁ হ্যাঁ, কেন নয়!" ভদ্রলোক ওখানে উপস্থিত বাকি দু'জন কর্মকর্তার একজনকে সাথে সাথেই বললেন, "ওকে নিয়ে যাও তো। আপনিও যান সাথে।" শেষ বাক্যটা ফের কুহুর বাবাকে বললেন বয়স্ক ভদ্রলোক।

বাবার হাত ধরে কুহু স্টেজে উঠল কর্মকর্তা ভদ্রলোকের পিছন-পিছন। 
"যাও, মালাটা পড়িয়ে দাও।" মঞ্চে উঠেই কুহুকে বললেন কর্মকর্তা ভদ্রলোক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাঁধানো ছবিটায় এরই মধ্যে বেশ কিছু ফুলের মালা পড়ানো হয়েছে। কুহু ছবিটার সামনে গিয়ে তার গাঁথা মালাটাও পড়ালো ফটোয়। তারপর দু'হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করলো সে রবি ঠাকুরকে। কুহুর বাবাও প্রণাম করলেন মেয়ের পর।
তারপর কুহু ওর বাবার সাথে নেমে এলো কর্মকর্তা ভদ্রলোকের সঙ্গে মঞ্চ থেকে।
আর তখুনি, ওদের দেখে এগিয়ে এলেন সেই বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভদ্রলোক। কুহুর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, "কি, খুশি তো?"
"হ্যাঁ, খুউব খুশি।" মিষ্টি হেসে বলল কুহু।
"রবি ঠাকুরকে খুব ভালোবাসো, না তুমি?"
"খুউব।"
"ও প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিগুলো আছে সেগুলো মুছে, আমাদের বাগান থেকে ফুল তুলে এনে সাজায়। এই রুটিনের কোনো অন্যথা হয়না ওর একদিনও।" কুহুর বাবা বলেন ভদ্রলোককে।
"বা:, খুব ভাল তো। তা, তোমার নাম কি, মা?"
"কুহু।"
"বা:, বেশ সুন্দর নামটাও তো তোমার। আচ্ছা, এতো সুন্দর মালা গাঁথতে শিখলে কোথায় তুমি?"
"বাবা বলল না, আমাদের বাড়িতে একটা বাগান আছে। সেটা কিন্তু ছোট নয়, বিরাট বড়। ঐ বাগানে প্রতিদিন প্রচুর ফুল ফোটে নানান রকমের। মা ঐ ফুল দিয়ে ঠাকুর পুজোর জন্য প্রতিদিন মালা গাঁথে। মা-র কাছেই শিখেছি আমি মালা গাঁথা।"
"বা:। বা:। ভেরি গুড।"
"তাহলে এবার আমরা যাই। গিয়ে বসি। অনুষ্ঠান তো শুরু হোতে চলল। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আমার মেয়েকে পারমিশন দেওয়ার জন্য।" কুহুর বাবা বলেন এবার ভদ্রলোককে।
"একটুখানি দাঁড়ান।" বলেই ভদ্রলোক তাঁর পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে কাকে যেন ফোন করে কি বললেন। তারপর ফের ফোনটা পকেটে রেখে কুহুর বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, "একটুখানি দাঁড়িয়ে যান ভাই।"
ব্যাপারটা কি, বুঝে উঠতে পারেন না কুহুর বাবা। তবে ভদ্রলোক যখন দাঁড়াতে বলেছেন তাই অগত্যা দাঁড়িয়ে রইলেন কুহুর বাবা, কুহুকে নিয়ে।


দুই

তবে অপেক্ষা করতে হোলো না বেশিক্ষণ। মিনিট খানেক কাটতে না কাটতে আরো একজন কর্মকর্তা এসে উপস্থিত হলেন যেখানে কুহু, কুহুর বাবা আর ঐ তিন কর্মকর্তা দাঁড়িয়েছিলেন। উনি হাতে করে এনেছেন একটা কাপড়ের ক্যারিব্যাগ। সেটা বয়স্ক সেই কর্মকর্তার হাতে দিয়েই দ্রুত পায়ে চলে গেলেন তিনি ব্যাক-স্টেজের দিকে।
এবার, ঐ বয়স্ক কর্মকর্তা ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন কুহুদের দিকে। ওদের সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। তারপর বলতে শুরু করলেন কুহুর বাবাকে, "ভাই, যে সংস্থাটি এই অনুষ্ঠানটা আয়োজন করছে, সেই সংস্থার প্রেসিডেন্ট আমি। সত্যি বলছি ভাই, আপনার মেয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি ভালবাসা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমি তাই আপনার মেয়েকে রবি ঠাকুরের একটা ছবি উপহার দিতে চাই।" বলতে বলতেই ব্যাগটা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা সুন্দর করে বাঁধানো ছবি বের করলেন ভদ্রলোক ও কুহুর হাতে দিলেন সেটা। "ঠিক এই ছবিই দেওয়া হবে আজ এই অনুষ্ঠানে সকল আমন্ত্রিত শিল্পীদের। তাহলে বুঝতেই পারছেন ভাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি আপনার মেয়ের ভালবাসা দেখে কতোটা মুগ্ধ হয়েছি আমি।"
ভদ্রলোক যখন এইসব কথা বলছেন কুহুর বাবাকে, কুহু কিন্তু সে সব কিছুই শুনছে না। বরং, অপলকে সে দেখেই চলেছে তার হাতে ধরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিখানি।
"কি, পছন্দ হয়েছে তো মা ছবিটা?" কুহুর কাছে জানতে চান প্রেসিডেন্ট ভদ্রলোক।
"খুউব পছন্দ হয়েছে। আমাদের বাড়িতে তিনখানা রবি ঠাকুরের ছবি আছে। তবে, এই ছবিটা নেই।" বলতে বলতে কেঁদেই ফেলে কুহু। দু'চোখ ভরা জল নিয়ে সে ছবিটাকে তার বুকের মাঝে দু'হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আর, ঐ দৃশ্য দেখে, প্রেসিডেন্ট ভদ্রলোক আর কুহুর বাবার চোখেও জল এসে যায়। 

Comments :0

Login to leave a comment