EDITORIAL

মোদী-মমতার কৃষক দরদ

সম্পাদকীয় বিভাগ

EDITORIAL

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় ফিরলে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মধ্যে (অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে) কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন। দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে হলে গ্রাম ভারত তথা কৃষকদের ভোট মোদীদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই প্রতিশ্রুতি দেবার পাশাপাশি ভোটের আগেই ছোট কৃষক পরিবারকে বছরে তিন কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা অনুদান দেবার প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। এবং প্রথম কিস্তির টাকা ভোটের আগেই কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মোদীকে টেক্কা দেবার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেন এরাজ্যে নাকি কৃষকের আয় তিনি অনেক আগেই তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।


 

ইতিমধ্যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর মহাসমারোহে ‘অমৃত মহোৎসব’ রূপে পালিত হয়েছে। তার পর থেকে চলছে ‘অমৃতকাল’। এই অমৃতকাল রূপী মহাকালের মেয়াদ ঠিক কত বছর তা স্পষ্ট করে বলা না হলেও ২০৩০ সালে, ২০৪০ সাল এবং ২০৫০ সালে কি কি হবে তার অজস্র প্রতিশ্রুতি অমৃত মহোৎসবে শোনা গেছে। তবে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়েছে কিনা সে খবর একবারের জন্য কারো মুখে উচ্চারিত হয়নি। শুধু কৃষকের আয় দ্বিগুণ করাই নয়, এমন আরও অনেক সাড়া জাগানো প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে। বলেছিলেন স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মধ্যে দে‍‌শের সব ঘরে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেবেন। প্রতি ঘরে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার বানিয়ে দেবেন। সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবেন, গঙ্গাকে দুষণমুক্ত করবেন। অমৃত মহোৎসব হয়ে যাবার পর এখন অমৃতকাল চলছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একটা প্রতিশ্রুতিও পালিত হয়েছে এমন দাবি সরকারের কোনও মহল থেকেই দেওয়া হয়নি। আর প্রধানমন্ত্রী তো ইতিমধ্যে এই ধারণাকে জনমানসে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন যে প্রতিশ্রুতি দেওয়াই তার কাজ, প্রতিশ্রুতি পালন করা নয়।


প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন। আর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন তখনই বাংলার কৃষকের আয় তিনগুণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে সেটা আরও বেড়ে নিশ্চয়ই চারগুণ হয়ে যাবার কথা। তাহলে বাংলার কৃষকরা এখন রীতিমতো ধনী। প্রধানমন্ত্রীর কল্যায়ণে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ আর মুখ্যমন্ত্রীর কল্যা ণে চারগুণ। সব মিলিয়ে ছ’গুণ।  যাদের আয় আগে পাঁচ হাজার টাকা ছিল তাদের এখন তিরিশ হাজার টাকা। তাহলে তো বলতে হবে বাংলার কৃষকের এখন স্বর্ণ যুগ চলছে। এই স্বর্ণ যুগে কৃষকরা ফসলের দাম না পেয়ে চাষের জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করতে না পেরে ক্রমবর্ধমানহারে আত্মহত্যা করছেন। এখন আলুর মরশুমে আলু কেনার খদ্দের নেই। যে দামে মাঠে আলু বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকের আয় তো দূরের কথা চাষের খরচ‍‌ উঠবে না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই মুহূর্তে কৃষকের আলু কুইন্টাল প্রতি ৫০০ টাকায়ও বিকোচ্ছে না। কোথাও দাম নেমে গেছে দুশো-তিনশো টাকারও নিচে। ফলে অবিক্রিত আলু পড়ে আছে খোলা মাঠে খড় চাপা দেওয়া অবস্থায়। এমন দুরবস্থা বাংলার আলুচাষিদের অতীতে কোনোদিন হয়নি। যদি আলু চাষিদের ন্যূনতম আয়ও করতে হয় তবে আলু বেচতে হবে কুইন্টাল প্রতি এক হাজার টাকায়। কৃষকরা বারবার সরকারের কাছে দাবি জানালেও সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তাই ক্ষুব্ধ কৃষক জেলায় জেলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়কে আলু ঢেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, অবরোধ করছেন সরকারের টনক নড়ানোর জন্য। কৃষকদের দাবি সরকারই এক হাজার টাকা দরে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে তাদের বিরাট লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করুক। আর কেন্দ্রীয় সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আলুর ক্ষেত্রেও চালু করুক। মোদী যদি আলুর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে আর মমতা যদি হাজার টাকা কুইন্টাল দরে আলু কেনার ব্যবস্থা করে তাহলে বাংলার আলুচাষিরা এযাত্রায় বাঁচতে পারে। কিন্তু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর অলীক দাবি করায় সিদ্ধহস্ত মোদী-মমতারা সেকাজ কোনোদিনই করবেন না। কৃষকের প্রতি শুকনো দরদ দেখিয়ে কিছু টাকা অনুদান দিয়ে ভোট কেনাই আসল লক্ষ্য।
 

Comments :0

Login to leave a comment