Siliguri Corporation Budget

দিশাহীন শিলিগুড়ি পৌর বাজেট, বয়কট সিপিআই(এম) কাউন্সিলরদের

জেলা

শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনে বাজেট অধিবেশনে সিপিআইএম কাউন্সিলরদের বিক্ষোভ। ছবি রাজু ভট্টাচার্য।

অনিন্দিতা দত্ত- শিলিগুড়ি

শিলিগুড়িবাসী তথা গবীরের স্বার্থ বিরোধী, চূড়ান্ত বৈষম্যের বাজেটের বিরোধীতা করে, কর্পোরেশনকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার বাজেট আলোচনা বয়কট করলেন বামপন্থী কাউন্সিলাররা। বাজেট আলোচনাকে ঘিরে দফায় দফায় তর্ক বিতর্কের পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বামপন্থী কাউন্সিলারদের বক্তব্য, জনবিরোধী এই বাজেট আলোচনার সাক্ষী থাকতে চাই না। কোনভাবেই বাজেট সমর্থনযোগ্য নয়। বিরোধী ওয়ার্ডগুলির প্রতি বৈষম্যের রাজনীতি করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলেও সরব হন। জনবিরোধী বাজেট নিয়ে আগামীদিনে রাস্তার আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে মেয়রের পেশ করা দিশাহীন বাজেটকে অসমর্থন করেছেন বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি কাউন্সিলাররাও।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের মেয়র ২০২৪—২০২৫ সালের ৬১৮কোটি ৮৪ লক্ষ টাকার বাজেট প্রস্তাব এবং একই সঙ্গে ২০২৩—২৪ সালের ২৮৩কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেট প্রস্তাব সভার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত করেন। দেখা যায় ২০২৪—২০২৫ অর্থবর্ষে দশ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করা হয়েছে। এদিন বাজেট আলোচনাকে কেন্দ্র করে কর্পোরেশনের হল ঘর বিরোধীদের সমালোচনার মুখে বারবার সরগরম হয়ে ওঠে। বাজেটের কপি ছিড়ে ফেলে বাজেট আলোচনা বয়কট করে বেরিয়ে যান সিপিআই(এম)’র তিনজন কাউন্সিলার। মেয়রের পেশ করা রিপোর্ট কার্ড হাতে নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ১৯নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই(এম)’র মহিলা কাউন্সিলার মৌসুমী হাজরা। স্লোগান ওঠে ‘কর্পোরেশনকে তৃণমূলীদের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করার চক্রান্ত মানছি না মানবো না’। ‘গরীব মানুষ বিরোধী বাজেট মানছি না মানবো না’। ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। 


সিপিআই(এম) কাউন্সিলার জয় চক্রবর্তী বলেন, মেয়রের পেশ করা ৬১৮কোটি টাকার বাজেট সম্পূর্ণ ভুলে ভরা। গরীব, সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী এই বাজেটকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। বাজেট বইতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রকল্পকে কর্পোরেশনের প্রকল্প বলে দেখানো হয়েছে। ঋণে দায়ে জর্জরিত রাজ্য সরকার। একই কায়দায় শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ড শহরবাসীদের কাধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। বিরোধী ওয়ার্ডগুলির প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। বিগত বামফ্রন্ট পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের সময়ে প্রতি বছর ১০ শতাংশ করে পৌর কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করা হতো। আইনে আছে বাজেট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ গরীব মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে হবে। কিন্তু ৬১৮কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩৪ কোটি টাকা গরীব মানুষদের জন্য বরাদ্দ করেছে এই বোর্ড। আইন অনুয়াযী ইউপি সেলে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা উচিৎ ছিলো বস্তিবাসী গরীব মানুষদের উন্নয়নের জন্য। গতবছরের বাজেটে ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে সম্পূর্ণ এসি করা, জংশনে ফুটওভার ব্রিজ করা, রেগুলেটেড মার্কেটের পাশে বাস টার্মিনাস করা, পানীয় জল প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু কোন কাজই হয়নি। এবছরের বাজেটে সেগুলির কোন উল্লেখ নেই। মেয়র যে পানীয় জল প্রকল্পের গল্প শোনাচ্ছেন সেই প্রকল্প আদৌও বাস্তবায়িত হবে কিনা সেবিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রতিবারই মানুষকে ধোকা দিচ্ছে এই বোর্ড। 
কর্পোরেশনের টাকায় তৈরী, সারা বছরের কর্পোরেশনের কাজের ফিরিস্তি দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট কার্ডে তৃণমূলের দলীয় নেতা নেত্রীদের ছবি দেখিয়ে বামপন্থী মহিলা কাউন্সিলার মৌসুমী হাজরা প্রশ্ন তোলেন, এরা কারা? কর্পোরেশনের নয়, দলীয় রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছেন মেয়র। রিপোর্ট কার্ডের ছবিতে কর্পোরেশনের দলীয় বা বিরোধী সমস্ত কাউন্সিলাররা থাকতেই পারে। কিন্তু দলীয় কাউন্সিলারদের পাশাপাশি দলীয় নেতাদের ছবি দিয়ে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশিত হয়েছে। ভোটের আগে এই রিপোর্ট কার্ড বাড়ি বাড়ি বিলি করে দলীয় আত্মপ্রচার চালাবেন মেয়র। কর্পোরেশনের টাকায় তৃণমূল দলীয় রাজনীতি করবেন কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।   
অপর সিপিআই(এম) কাউন্সিলার দীপ্ত কর্মকার বলেন, পৌর কর্মী, অস্থায়ী ও সাফাই কর্মী যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে পৌর এলাকার নাগরিকেরা পরিষেবা পেয়ে থাকেন সেই পৌর কর্মচারীরা আজ উপেক্ষিত। পৌর কর্মীদের স্বার্থ বিরোধী বাজেটে কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই বাজেটে। 
কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ডের বিরুদ্ধে শহরের উন্নয়ন স্তব্ধতার অভিযোগ, বিরোধীদের কন্ঠরুদ্ধ করার প্রচেষ্টা সহ একাধিক অভিযোগ তুলে এদিনের বাজেট আলোচনা বয়কট করার কথা আগেই জানিয়েছিলো কংগ্রেস। মেয়রের পেশ করা বাজেটকে ‘কপি পেস্ট’ বাজেট বলে উল্লেখ করে কর্পোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার সূজয় ঘটকও এদিন বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি।   পৌর কর্পোরেশন এলাকায় পানীয় জল, যানজট, পার্কিং সহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পৌর কর্পোরেশনের বর্তমান তৃণমূলী বোর্ড কোন সঠিক দিশা দেখাতে পারেনি। এইরকম একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে ধরে প্রস্তাবিত বাজেটকে জনহিতকর নয় বলে এদিন বিরোধী বিজেপি কাউন্সিলাররাও বাজেট আলোচনা বয়কট করেন।

Comments :0

Login to leave a comment