ভোটার তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ দেওয়া হোক, কিন্তু জীবিতদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে দেবো না। শনিবার সিপিআই(এম)’র বারাকপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে ওয়ারলেস পাড়া মোড়ে অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। এসআইআর নিয়ে তৃণমূল বিজেপি’র আতঙ্ক সৃষ্টির রাজনীতির বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, তৃণমূল চাইছে মৃত ভোটার, ভুয়ো ভোটারদের নাম তালিকায় থাকুক। আর বিজেপি চাইছে মৃত ভোটারদের নাম করে জীবিতদের নাম বাদ দিতে। আমরা বামপন্থীরা বলছি, জীবিত মানুষদের জীবনজীবিকা এবং ভোটাধিকার সহ সব অধিকার রক্ষায় লড়াই করাই আমাদের কাজ। তাই কোনো প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া চলবে না।
এদিন সিপিআই(এম)’র বারাকপুর এরিয়া কমিটির অন্তর্গত মাঠপাড়া শাখার কার্যালয়ের উদ্ধোধন করেন মহম্মদ সেলিম। পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ পার্টি নেতা তড়িৎবরন তোপদার। এরপর ওয়ারলেস পাড়া মোড়ে জনসভায় তিনি ভাষণ দেন, সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা প্রভাত ভান্ডারী। সভায় সেলিম বলেন, নির্বাচন কমিশন ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০২৫ সালের তালিকার নাম মিলিয়ে দেখার কথা বলেছে। সেই সময়ে অর্থাৎ ২০০২ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ছিল। আমরা মানুষকে বলছি, শুধু ভোটার তালিকা নয়, সেই সময়কার সঙ্গে এখনকার সামগ্রিক পরিস্থিতিও মিলিয়ে দেখবেন। তখন মানুষের অধিকার রক্ষা ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার সক্রিয় ছিল। এখন রাজ্যের মানুষের জীবন জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত অধিকারগুলো আক্রান্ত। রাজ্যে তৃণমূল ও দেশে বিজেপি লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুই শাসকদল মিলে মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই শাসকদলের লুট চলছে, মানুষ যাতে রুখতে না পারে তার জন্য ভোটাধিকারও কেড়ে নিতে চাইছে। এই রাজ্যে এই অবস্থা কখনোই ছিল না। তিল তিল করে এই রাজ্যকে বামপন্থীরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। সেই রাজ্যকে খাদের কিনারায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে তৃণমূল বিজেপি। রাজ্যের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ভুলুন্ঠিত হয়েছে। ২০০২ আর ২০২৫ সালে জনজীবনের পরিস্থিতিও মিলিয়ে নিতে হবে। বিপদের এই পরিস্থিতির থেকে মানুষকে রক্ষা করতে বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে।
সেলিম বলেন, আমরা চাই নির্মাণ, পুনর্নির্মান। ওরা চায় ধ্বংস। আরএসএস’এর পরিকল্পনা মতো রাজনৈতিক মেরুকরণের লক্ষ্যে তৃণমূল আর বিজেপি এই কাজ করতে চাইছে। মানুষের প্রতি সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা করে মন্দির নির্মাণের প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে মোদী ও মমতা ব্যানার্জির সরকার। এরা ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ ও সতর্ক করে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাঁদের ভোটাধিকার রক্ষায় বামপন্থী কর্মীরা রাজ্যজুড়ে সক্রিয় রয়েছে।
তিনি বলেন, লুটেরার রাজত্ব কায়েম রাখতে ওরা গণতন্ত্রকে হত্যা করছে। মানুষের কথা বলার অধিকার, প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। পার্ক ষ্ট্রিট, কামদুনি থেকে অভয়া, এই রাজ্যে মহিলারা একের পর এক ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে চলেছে। এক বছর হয়ে গেলেও অভয়া ন্যায়বিচার পায়নি। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হলে ভয় পেলে হবে না। কোনো ছাপান্নার দরকার নেই, লাল ঝান্ডাকে আঁকড়ে ধরে লড়াই চালাতে হবে। বাংলার ভালো কীভাবে হবে তা বামপন্থীরা জানে, বাংলাকে বাঁচাতে হলে নবান্ন থেকে তৃণমূলকে তাড়াতে হবে।
সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক পলাশ দাশ সভায় বলেন, বিজেপি মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। হিন্দুত্বের ধজ্বা নিয়ে মানুষকে বিভাজিত করছে। এইরকম ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর রাজনীতি এরাজ্যে আমরা আগে কখনো দেখিনি। এসআইআর’এর নামেও মানুষকে বিভাজন করছে। তৃণমূল আর বিজেপি মিলে জীবনের মূল সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। মমতা ব্যানার্জি হিডকোর জমিতে ডিটেনশন ক্যাম্প করতে চেয়েছিলেন। আমরা বামপন্থীরা বাধা দিয়েছি। মমতা ব্যানার্জিকে পিছু হটতে হয়েছিল। এই তৃণমূলকে সরকারে রাখতে চাইছে বিজেপি। বামপন্থীরা তা হতে দেবে না।
প্রবীণ পার্টি নেতা তড়িৎবরন তোপদার বলেন, তৃণমূল ও বিজেপি এসআইআর এর সুযোগ প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দিয়ে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। এই বিষয়ে পার্টি কর্মীদের বুথে বুথে নজরদারি করতে হবে। সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সদস্য গার্গী চ্যাটার্জি বলেন, আরএসএস’এর মেধাবী ছাত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিজেপি’কে এই রাজ্যে ডেকে এনেছেন তিনিই। বাংলাকে বাঁচাতে বিজেপি ও তৃঙমূল মুক্ত বাংলা গড়তে হবে। সভায় পার্টি নেতা ঝন্টু মজুমদারও ভাষণ দিয়েছেন।
MD SELIM
ভোটাধিকার সহ সব অধিকার রক্ষার লড়াই করাই বামপন্থীদের কাজ: ব্যারাকপুরে সেলিম
×
Comments :0