মহিলা কুস্তিগিরদের দম কতটা, বুঝতে বুকে অস্বস্তিকরভাবে স্পর্শ করতেন ব্রিজভূষণ শরণ সিং। প্রতিযোগিতায় নামার আগে ওয়ার্ম আপের সময়ে বা অনুশীলনে কিংবা নিজের অফিসে ডেকে নানা অছিলায় মেয়েদের গায়ে হাতও দিতেন বিজেপি সাংসদ। দেশের রেসলিং ফেডারেশনের প্রধান এভাবেই বারবার হেনস্তা করেছেন মহিলা কুস্তিগিরদের। প্রভাবশালী ব্রিজভূষণ হয়তো শেষ করে দেবে কেরিয়ার, তাই ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি নির্যাতিতারা। বজরঙ পুনিয়া, সাক্ষী মালিকদের মতো পদক জয়ী প্রথম সারির কুস্তিগিররা ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির দাবিতে রাজধানী দিল্লিতে ধরনায় বসলে মনে আরও জোর পান নির্যাতিতা কুস্তিগিররা। কিন্তু এফআইআর দায়ের করতে গেলে অমিত শাহের পুলিশ স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ নেয়নি। পরে সুপ্রিম কোর্টের চাপে কনৌট প্লেস থানার পুলিশ দু’টি এফআইআর দায়ের করতে বাধ্য হয়। সেই এফআইআরেই এমন ভয়ঙ্কর সমস্ত অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিররা। যা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল দিল্লি পুলিশ।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে শনিবার জানা যাচ্ছে, দুই প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ করেন, ‘‘প্রশিক্ষণের সময় জোরে শ্বাস নিতে বলে বুকে অত্যন্ত বাজে ভাবে স্পর্শ করেছিলেন ব্রিজভূষণ।’’ আরেক কুস্তিগির জানান, তিনি পাঁচবার ব্রিজভূষণের যৌন হেনস্তার শিকার হন। বলেন, ‘‘২০১৬ সালে একটি প্রতিযোগিতা চলছিল। তার মধ্যে একদিন ব্রিজভূষণ আমাকে রেস্তোরাঁয় ডেকে পাঠান। সেখানে বুকে এবং তলপেটে হাত দিচ্ছিলেন। এই ঘটনার পর আমি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করি। ঠিক মতো খেতে-ঘুমোতেও পারছিলাম না।’’ ২০১৯ সালে আবারও একটি প্রতিযোগিতা চলাকালীন তাঁর উরুতে, ঘাড়ে হাত বোলাতে শুরু করেন ওই বিজেপি নেতা। নিজের ক্ষমতাকে ঢাল করে এভাবেই পরপর যৌন নির্যাতন করেছেন ব্রিজভূষণ। আরও এক কুস্তিগির বলছেন, ‘‘২০১৮ সালে ফের ব্রিজভূষণের বর্বরতার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। একইভাবে অনুশীলনের সময় আচমকা এসে জার্সি তুলে বুকে এবং পেটে হাত দেন ব্রিজভূষণ। অজুহাত দেন, দম বোঝার চেষ্টা করছেন। তারও আগে একদিন হঠাৎই তাঁকে জড়িয়ে ধরে স্তনে হাত দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন ব্রিজভূষণ। তখন তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন নির্যাতিতা। তাঁর আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার প্রায় এক বছর পর রেসলিং ফেডারেশনের অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। তখন ব্রিজভূষণ নিজের ঘর থেকে অন্যদের বের করে দিয়ে তাঁকে জোর করে আটকে রাখার চেষ্টা করেন। নিজের ফোন নম্বর দিয়ে ওই কুস্তিগিরের নম্বরও চেয়েছিলেন।
যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এবছর জানুয়ারি থেকে কুস্তিগিররা সরব হয়েছেন। গত মাস থেকে ফের ধরনায় বসেন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উলটে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় দিল্লি পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে ব্রিজভূষণকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন আরও জোরদার করছেন বামপন্থীরা। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (এআইডিডব্লিউএ), সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম) বিক্ষোভরত কুস্তিগিরদের সমর্থনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ সভা করতে চলেছে। এসকেএম এক বিবৃতিতে এদিন জানিয়েছে, ১১ থেকে ১৮ মে দেশের সমস্ত রাজ্যে রাজধানী শহরে, জেলা-মহকুমা সদর দপ্তরে জনসভা হবে। প্রতিবাদ মিছিল বেরবে। ব্রিজভূষণ শরণ সিং, তাঁর সমর্থক এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কুশপুতুলও পোড়ানো হবে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশের শতাধিক কৃষকনেতা রবিবার ফের যন্তরমন্তরে যাবেন। এদিন ধরনাস্থলে যান সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা এবং সিপিআই নেতা পল্লব সেনগুপ্ত।
এআইডিডব্লিউএ’র সঙ্গে আরও চার মহিলা সংগঠন ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির দাবিতে এক লক্ষ সই সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। জেলাশাসকের মাধ্যমে তা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। একইসঙ্গে দেশজুড়ে গ্রামে-গ্রামে, বস্তিতে, মহল্লায় সভা করবেন মহিলা আন্দোলনের কর্মীরা। বিজেপি ঠিক কতটা মহিলা বিরোধী তা ফের প্রচার করা হবে।
নিগ্রহের প্রতিবাদে কুস্তিগিররা পদক ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। তারপরও মোদী-অমিত শাহ নীরব। রাজ্যসভা সাংসদ কপিল সিবাল এদিন বলেন, ‘‘উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের জন্য ব্রিজভূষণ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তাঁকে রেসলিং ফেডারেশনের প্রধানের পদ থেকে সরানো যাচ্ছে না? আপনাদের বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগানের কী হলো? প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দু’জনেই কেন চুপ?’’
Wrestler issue
‘দম বুঝতে’ অস্বস্তিকর স্পর্শ, নানা অছিলায় যৌন হেনস্তা
×
Comments :0