AIPSO

হিংসা থামাতে বসেছিলেন গান্ধীজী, স্মরণ বেলেঘাটায়

রাজ্য কলকাতা

AIPSO GANDHI BHAWAN BENGALI NEWS

ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন ঠেকাতে বেলেঘাটায় অবস্থানে বসেন গান্ধীজী। ১৯৪৭ সালের ১৩ আগস্ট। বর্তমান ভারতে যখন বিজেপি-আরএসএসর আগ্রাসনে চ্যালেঞ্জের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র, সেই সময় গান্ধীজীর ধর্মের নামে ভাগাভাগি ঠেকাতে সেই ভূমিকাকে স্মরণ করে বেলেঘাটার সুকান্ত মঞ্চ থেকে গান্ধী ভবন অবধি পদযাত্রা করল সারাভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা বা এআইপিএসও। 

এআইপিএসপিও নেতৃবৃন্দ, স্বাধীনতার দুইদিন আগে বেলেঘাটার হায়দরি মনজিল নামে একটি ভগ্নপ্রায় বাড়িতে এসে ওঠেন গান্ধীজী। সেই সময় ভ্রাতৃঘাতী হিংসায় জ্বলছে কলকাতা সহ অবিভক্ত বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। দুইদিন পরেই বাংলা ভেঙে হবে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তান। সেই সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভরসা যোগাতে বেলেঘাটার সংখ্যালঘু প্রধান অঞ্চলকে অবস্থানের জন্য বেছে নেন গান্ধীজী। তাঁর প্রয়াসকে পদে পদে আটকানোর চেষ্টা করে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। কিন্তু বেলেঘাটার সাধারণ মানুষকে সঙ্গী করে গান্ধীজী অবস্থান চালিয়ে যান। তিনি সেই দফায় কলকাতায় ২৬ দিন ছিলেন। সাম্প্রদায়িক হিংসায় জ্বলতে থাকা শহরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। অমৃতবাজার সহ তৎকালীন সংবাদপত্রে এই ঘটনাকে দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা মিরাকেলহিসেবে বর্ণনা করা হয়। 

এদিন সুকান্ত মঞ্চের সামনে গান্ধী মূর্তিতে মালা দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক অশোকনাথ বসু। মানবজমিন ও বেহালা বড়িষা উচ্চবালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রাথমিক বিভাগের পড়ুয়ারা ও শিক্ষিকা মৌ সান্যাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর শোভাযাত্রা পৌঁছয় গান্ধী ভবনের সামনে। সেখানে গান্ধীজীকে শ্রদ্ধা জানান রবীন দেব, বিনায়ক ভট্টাচার্য, অঞ্জন বেরা, প্রবীর দেব সহ  এআইপিএসও নেতৃবৃন্দ।

এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে দীর্ঘক্ষণ। তার মাঝে মাঝে হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, সৈকত গিরি, সমীর পুততুন্ড, বাসুদেব বসু প্রমুখ বক্তারা বর্তমান ভারতের প্রেক্ষাপটে এই দিনটি পালনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। প্রস্তাব পাঠ করেন অঞ্জন বেরা ও বিনায়ক ভট্টাচার্য। 

এআইপিএসও বলছে, ‘‘কলকাতা শহর ও তার চারিপাশে এলাকায় টানা তিন সপ্তাহ ধরে সাম্প্রদায়িক হিংসার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সমবেত করার এক মহান মানবতাবাদী প্রচেষ্টায় ব্রতী হয়েছিলেন গান্ধীজী। তাঁর সেই ঐতিহাসিক প্রচেষ্টাকে স্মরণে রেখে দেশের সংবিধানের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে রক্ষা করার অঙ্গীকার নিয়েই এই কর্মসূচির আয়োজন।’’

বক্তারা বলেছেন, ‘‘গান্ধীজীর মতো মানুষরা কখনোই পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ভারতকে শুধুমাত্র হিন্দুদের আবাসস্থল হিসেবে ভাবেননি। তাঁদের স্বপ্ন ছিল, স্বাধীন ভারত হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণতন্ত্র। হিন্দু, মুসলমান সহ সব ধর্মের ও সব বর্ণের মানুষের ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনও ভূমিকা না থাকলেও, বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার এই বিভাজনকামী শক্তিগুলির হাতেই। স্বাধীনতার প্রাক্কালে এই শক্তিগুলির ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। পরাজয়ের হতাশা থেকে গান্ধীজীকে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতার গোড়ায় সুযোগ না পেলেও এখন স্বাধীনতা আন্দোলনের সমস্ত অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায় তারা। সংবিধানের মৌলিক চরিত্রগুলি বদলানোর সামান্য সুযোগের সন্ধানে রয়েছে তারা।’’

এআইপিএসও বলছে, ‘‘হিন্দুত্ববাদীরা কর্পোরেট লুট ও বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ভিন্ন মতকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে দাগানো হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নির্বাচনে দেশবাসী রায় দিলেও এখনও বিপদ কাটেনি। তাই বিভাজনের আত্মঘাতী রাজনীতির বিরুদ্ধে সমস্ত অংশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সাধারণতান্ত্রিক চরিত্র অর্জিত হয়েছে। তাকে রক্ষা করতেই হবে।’’

এদিন কিশোরবাহিনীর নারকেলডাঙা সুকান্ত শাখা ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড সমন্বয় কমিটির কচিকাঁচারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কাজী কামাল নাসের নিজের লেখা গান করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নীপা বসু গান করেন, ও মধুমিতা আইচ আবৃত্তি করেন। 

এছাড়াও ঝুমা দাস, তরুণ পাত্র, পরিমল দেবনাথ, কুণাল বাগচী, অর্জুন রায়,  শ্রাবণী সেনগুপ্ত, সমর চক্রবর্তী,গৌতম ঘোষ, সোমনাথ ভট্টাচার্য, শ্যামশ্রী দাস, খগেন্দ্রনাথ অধিকারী, মৃণাল রায়চৌধুরীর, সুস্নাত দাস, শ্যামল চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments :0

Login to leave a comment