BILKIS BANO

জেলে ফিরতে হবে শুনেই ‘নিখোঁজ’ বিলকিসের ধর্ষকরা

জাতীয়

Bilkis bano gujrat pogrom bengali news

সুপ্রিম কোর্ট তাদের ফের গারদের ওপারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। গুজরাটের বিজেপি সরকারের পুলিশ নাকি সোমবার শীর্ষ আদালতের রায়দানের আগে থেকেই কড়া নজরদারিতে রেখেছে দাহোদের সেই গ্রাম সিংভাদকে। কিন্তু কোথায় বিলকিস বানোর ধর্ষকরা? কাদের পাঠানো হবে জেলে? অধিকাংশের বাড়ির দরজায় ঝুলছে তালা। কেউ নাকি রায়ের দিন সকালেই পালিয়েছে, কেউ ফেরার ১৫ দিন ধরে। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তারা পালিয়েছে নাকি প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনে বিজেপি’র পুলিশই পালাতে সাহায্য করেছে, সে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। 
সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক সোমবারই ধর্ষকদের গ্রামে যান। দেখেন, ধর্ষক ন’জনের কোনও খোঁজ নেই। অধিকাংশের বাড়ি তালাবন্ধ। সামনে মোতায়েন রয়েছেন একজন করে পুলিশকর্মী। শীর্ষ আদালতের রায়দানের আগেই পুলিশ এই ‘বন্দোবস্ত’ করেছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। যদিও তাঁরা ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দু’-চার কথা বলে ফেললেও পরক্ষণেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। ধর্ষকদের ভরসার আশ্রয়স্থল বিজেপি সরকারই তাদের গা-ঢাকা দিতে সাহায্য করেছে বলেও ক্ষোভে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীরা। 
ধর্ষকদের একজন গোবিন্দ নাই। তার পাত্তা নেই, কিন্তু খুঁজে পাওয়া গিয়েছে গোবিন্দর বাবাকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, এক সপ্তাহ আগেই ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। সব দোষ কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন তিনি। ধর্ষকদের অন্যতম প্রধান দোষী সাব্যস্ত রাধেশ্যাম শাহ, যে আদালতের সঙ্গে প্রতারণার দায়েও অভিযুক্ত, সেই শাহকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার বাবা আবার দাবি করলেন, প্রায় ১৫ মাস ছেলে ঘরছাড়া। তবে স্থানীয় বাসিন্দা, দোকানদাররা বলছেন, রবিবারও রাধেশ্যামকে দেখা গিয়েছে পাড়ায়। ওই সাংবাদিক লিখেছেন, এলাকার সমস্ত দোকানদাররাই মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। কারোর পেট থেকেই কোনও কথা বের করা যাচ্ছে না। কিন্তু গ্রামের একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘‘আপনি ওদের (ধর্ষকদের) কাউকেই খুঁজে পাবেন না। ওরা সবাই পালিয়েছে।’’
আরেক ধর্ষক প্রদীপ মোহিয়া। স্বভাবতই তার বাড়িতেও তালা। বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়ানো সাব ইন্সপেক্টর আরএন দামোর সাফ বলে দিলেন, ‘‘সোমবার ভোরেই বেরিয়ে যায় প্রদীপ। মনে হয়েছিল তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে। ওর বাইকও ফেলে রেখে গিয়েছে।’’ যেদিন রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট, সেদিন কীভাবে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে সে বেরিয়ে যেতে পারে? এমন স্পর্শকাতর একটি ঘটনায় কী করে পুলিশ এত দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে? জবাব মেলেনি।
প্রদীপের বাড়ি থেকে কয়েক মিটার দূরেই রমেশ চন্দনার (দোষী সাব্যস্ত) জামাইয়ের ঘর। গ্রামবাসীদের কথায়, রমেশ অধিকাংশ সময় গোধরাতে থাকে। এই গ্রামে আর দেখা যায় না। জামাই দাবি করেছেন, রমেশ চন্দনা এখন কথা বলার মতো অবস্থাতেই নেই। ধর্ষক দুই ভাই শৈলেশ এবং মীতেশ ভাট আবার রাধেশ্যামের প্রতিবেশী। কিন্তু তাদের খোঁজও কেউ দিতে পারল না। আরও তিন ধর্ষক রাজুভাই সোনি, কেশরভাই ভোহানিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া এবং বিপিনচন্দ্র জোশী মূলত ভদোদরাতেই থাকে, জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। 
কেন্দ্রে মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গুজরাট গণহত্যায় অভিযুক্তরা পরপর মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। ধর্ষকদেরও মুক্ত করে দিতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া পাল পিটিশন, তার শুনানি এবং রায় হিসেব খানিক গুলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ধর্ষকদের বেপাত্তা করে দিতে পারলে তাদের জেলে ফেরাও অনিশ্চিত হয়ে যাবে। সেজন্যই এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ধর্ষকদের ফের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন বলেন, ‘‘অপরাধীরা যদি তাঁদের সাজার পরিণতিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে, তাহলে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বলে আর কিছু থাকবে না। রায় দেওয়ার সময় আদালতকে সতর্ক থাকতে হয়, রায়ের বিষয়বস্তু নিয়েও। স্বৈরাচারী কোনও সিদ্ধান্তকে সংশোধন করা এবং সাধারণ মানুষের ভরসা বাঁচিয়ে রাখাও আদালতের কর্তব্য। এই মামলার আসামিরা কী করেছেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। বিশেষ করে একজন তো গোটা প্রক্রিয়ারই অপব্যবহার করেছে। মাত্র ১৪ বছর তারা জেলবন্দি ছিল, তারমধ্যে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছে বহুবার। এই অপরাধীদের সুরক্ষার আবেদন আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের শাসন জারি থাকবেই।’’ গুজরাট সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সরকারও এই কুকর্মে সমানভাবে দায়ী বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেদিন বিচারপতিরা। 
গুজরাট গণহত্যার সময় উন্মত্ত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে বিলকিস বানো নিজের পরিবার নিয়ে পালাতে গিয়ে ওই চরম নৃশংসতার শিকার হন। ছোট্ট মেয়ে সহ পরিবারের সাতজনের নিথর দেহ পড়েছিল তাঁর চোখের সামনে। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে নরেন্দ্র মোদী। আর শাস্তির মেয়াদ পেরনোর আগেই কলার তুলে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের যেদিন ছেড়ে দেওয়া হলো, সেইদিন নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী।


 

Comments :0

Login to leave a comment