তরাই ও ডুয়ার্সের চা বাগান শ্রমিকদের বোনাসকে ঘিরে অচলাবস্থা কাটলো না। বৃহস্পতিবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চলল টানা ৯ ঘন্টা। তাতেও সমাধান সূত্র বের না হওয়ায় ফের রাত ৮ টায় নতুন করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়েছে। তৃতীয় দফার প্রথম দিনে মালিক পক্ষের অনড় মনোভাবের কারণেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ফলপ্রসূ হচ্ছে নি। মালিক পক্ষ গতবারের ১৯ শতাংশ হারে বোনাসের বদলে ১০ শতাংশের বেশি বোনাস দিতে রাজিই নয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় তরাই ও ডুয়ার্সের ১৭৬ বাগানের সাড়ে ৪ লক্ষ শ্রমিকের বোনাসের বিষয় নিয়ে কলকাতার বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাকক্ষে প্রায় ৬ ঘন্টা বৈঠক চলার পর মালিক পক্ষ সাড়ে ১১ শতাংশ হারে বোনাস দিতে রাজি হয়। সিআইটিইউ নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক ইউনিয়ন সহ অন্য ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও তাদের ২০ শতাংশ বোনাসের দাবি থেকে সরে এসে জানিয়ে দেয় সাড়ে ১৮ শতাংশ হারে বোনাস দিক মালিক পক্ষ। দুই পক্ষের বোনাসের দাবির মধ্যে অনেক ফারাকের কারণে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ সিদ্ধ্বান্ত নেয় সব ইউনিয়নের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে ছোট আকারে একটি আলাদা বৈঠক হবে। এরপরেই চায়ের বিরতি ঘোষণা হয়।
এরপর সেই বৈঠক চলে আরো ৩ ঘন্টা। বৈঠকে মালিক পক্ষ ১৪ শতাংশ হারে বোনাস দিতে রাজি হলেও শ্রমিক ইউনিয়ন গুলি সেটা মেনে নিতে রাজি হয় নি। অচলাবস্থা কাটাতে ফের রাত ৮ টায় সব ইউনিয়নের সমস্ত প্রতিনিধিদের নিয়ে আবার বৈঠক শুরু হয়েছে।
এদিকে এরই মধ্যে চায়ের বিরতির পর বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় চা ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বা পক্ষ থেকে কোন একজন প্রতিনিধি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবে সেই নিয়ে বচসা শুরু হয়। বচসা হাতাহাতিতে গড়ায়। সিআইটিইউ নিয়ন্ত্রিত শ্রমিক ইউনিয়নের তরাই এলাকার নেতা গৌতম ঘোষ বলেন,‘‘শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শ্রমিকের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে এসে এভাবে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা অতীতে কখনও দেখা যায়নি।
এদিকে তরাই ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন বাগানে কারখানার সাইরেন বাজার পরেই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও সকলের মন পড়েছিল কলকাতায়। সন্ধ্যে অব্দি বিভিন্ন বাগানের গেটে জড়ো হয়ে শ্রমিকরা অপেক্ষা করছিল বোনাসের কি হল জানতে। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নামতেই ঘরে ফিরেছেন সকলে।
তরাই এলাকার ৪৫ টি চা বাগানের প্রায় ৪০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক সহ ডুয়ার্সের বাগানের শ্রমিক মিলিয়ে বোনাসের আওতায় আসবেন প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ চা শ্রমিক। তরাইয়ের বন্ধ বাগান পানিঘাটা সহ বিভিন্ন বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের উৎসবের দিন গুলিতে ভরসা রাজ্য সরকারের দেওয়া ১ হাজার ৫০০টাকা অনুদান। তরাই এলাকায় ১টি, ডুয়ার্সের জলপাইগুড়িতে ৭ টি এবং আলিপুরদুয়ারে ৭টি চা বাগান এই মুহুর্তে বন্ধ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী লোকসভা ভোটের আগে ৫ টি বন্ধ চা বাগান অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। যদিও সে প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত হয় নি।
Tea Garden Workers
বহাল বোনাস জট, ফের শুরু বৈঠক
×
Comments :0