Broadcaste bill

ডিজিটাল, ওটিটি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে নয়া ব্রডকাস্টিং বিল আনছে কেন্দ্র

জাতীয়

লোকসভা ভোটে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েও কোনও শিক্ষা নেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরও শরিক জুটিয়ে জোট সরকার গড়ে মোদী এবারে মিডিয়ার কন্ঠরোধে আনতে চলেছেন ‘ব্রডকাস্টিং সার্ভিস রেগুলেশন বিল’। এই বিলে নতুন ধারার যে ডিজিটাল নিউজ এবং ওটিটি মিডিয়া রয়েছে তাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ডিজিটাল এবং ওটিটি মিডিয়ার সংবাদ প্রকাশে যে স্বাধীনতা রয়েছে তা রুখতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে খবর। বিশেষ করে এই সব মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সরকার বিরোধী সংবাদ প্রকাশ বন্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিলে। সিপিআই(এম) সাংসদ জন ব্রিটাস ‘দি ওয়্যার’ নিউজ পোর্টালে এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘নয়া ব্রডকাস্টিং বিলের পরিসর অনেক বড়। শুধু ডিজিটাল মিডিয়া বা ওটিটি প্লাটফর্ম নয়। ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলকে  ব্রডকাস্টিং বিলের আওতায় আনা হয়েছে। ব্যক্তিগত ইউটিউবে আপনার প্রচারিত সংবাদ বা মতামত সরকারের অপছন্দ হলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধি রাখা হয়েছে বিলে।’ 
বর্তমানে দেশে সমাজ মাধ্যমের যে বিপুল প্রসার ঘটেছে তা কড়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হলো বিলের মূল লক্ষ্য। মূলধারার কর্পোরেট মিডিয়ার বড় অংশই এখন গোদী মিডিয়া বলে পরিচিত। এরা ধারাবাহিকভাবে মোদী সরকারের হয়ে সংগঠিত প্রচার চালায়। বিষয়টি সংবাদজগতে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠায় এদের সংবাদ নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গিয়েছে। এই পরিসরে জায়গা করে নিয়েছে সামাজিক মাধ্যমের নানা ধরনের সংবাদ মিডিয়া। এদের মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। স্মার্ট ফোনের প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সামাজিক মিডিয়ার বিপুল প্রসার ঘটেছে। শাসক বিজেপি নিজস্ব নয়া প্রযুক্তির প্রচার মাধ্যম চালু করেছে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে সরকার বিরোধী প্রচার যে জনসমাজে বিপুল প্রভাব ফেলেছে তা গত লোকসভা ভোটে বিজেপি’র পরাজয়ে বহুলাংশে প্রমাণিত হয়েছে। এই কারণেই সামাজিক মাধ্যম সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা মোদী সরকারের কাছে জরুরী হয়ে পড়েছে।
ব্রডকাস্টিং বিল নিয়ে ব্রিটাস তাঁর প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ‘ইতিমধ্যে কেন্দ্র কর্পোরেট প্রতিনিধিদের কাছে এই বিলের কপি পাঠিয়েছে। কর্পোরেটের চূড়ান্ত সম্মতি মিললে তা পেশ হবে সংসদে।’ তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন হয়েছে তার মূল কথা হলো ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচার পছন্দ না হলে সেই মিডিয়ার মালিককে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। সেই একই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ভারতের নয়া ব্রডকাস্টিং বিলে। সামাজিক মাধ্যমের প্রচারের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে আনাই এই বিলের লক্ষ্য।’ এর মাধ্যমে নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হবে বলে জানান ব্রিটাস। এপ্রসঙ্গে ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে শীর্ষ আদালতে কেন্দ্র বনাম কমলেশ বাশওয়ানির এক রায় উল্লেখ করেছেন তিনি। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘ওই মামলায়  পর্নোগ্রাফি দেখা বন্ধ করতে যে আবেদন জমা পড়ে তা খারিজ করে আদালত। রায়ে আদালত জানায়, এই জাতীয় নিয়ন্ত্রণ আনা হলে তা হবে বেডরুমেও নীতি পুলিশের ব্যবস্থা করা। যা কখনো চলতে পারে না। যদি হয় তা হবে নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। তা কখনো করা যায় না। এবারে মোদী সরকার যে ব্রডকাস্টিং বিল আনছে তা কার্যত নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং তাঁর মতপ্রকাশের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ যা শীর্ষ আদালতে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত রায়  বিরোধী।’ 
তাঁর মতে, ‘সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারায় নাগরিকের বাক্ স্বাধীনতার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে সেই অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে ব্রডকাস্টিং বিলে। বর্তমানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বে ভারতের স্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫৯ নম্বরে। ব্রডকাস্টিং বিল চালু হলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারতের স্থান আরও তলানিতে চলে যাবে।’ প্রতিবেদনে ব্রডকাস্টিং বিলকে দানবীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এই বিলে কেন্দ্রীয় সরকারকে ডিজিটাল এবং ওটিটি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে চরম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিলে সমাজমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে গঠন হচ্ছে ‘বিজনেস আ্যাভাইসরি কাউন্সিল’। সরকারি নির্দেশে কাউন্সিলের সুপারিশ মতো কেন্দ্র যে কোন সোসাল মিডিয়ার অফিসে অভিযান চালাতে পারবে। সেই অফিসের  ব্রডকাস্টিং সংক্রান্ত যাবতীয় মেশিন বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। প্রচারের যে কোন সংবাদ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপদ বলে দাগিয়ে তার অফিস বন্ধ করে দিতে পারবে এবং তার ইলেকট্রনিক মেশিন বাজেয়াপ্ত করতে পারবে সরকার।’
এমনিতেই নতুন প্রজন্মের দর্শক গোদী ও কর্পোরেট মিডিয়ার বাইরে সোসাল মিডিয়ার দিকে বেশি ঝুঁকছে। তথ্য দেখা গিয়েছে, রাবিশকুমার এবং ধ্রুব রাঠিদের ইউটিউব চ্যানেলের গ্রাহক প্রতিদিন বাড়ছে। রাঠীর গ্রাহকের সংখ্যা হবে ২৭ মিলিয়ন এবং রবিশ কুমারের গ্রাহক সংখ্যা ৯৬ লক্ষ। ইউটিউব’র মোট গ্রাহকের সংখ্যা হবে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ। গোদি মিডিয়া ক্রমশ তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। গোদি মিডিয়া ছেড়ে তাই নতুন প্রজন্ম ইউটিউব সংবাদ চ্যানেলে আস্থা রাখছে বলে জানাচ্ছে সমীক্ষা।

 

Comments :0

Login to leave a comment