NEWSCLICK RAID

নিউজক্লিক সম্পাদকের গ্রেপ্তারির পদ্ধতিতে প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট

জাতীয়

নিউজক্লিকের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত চক্রবর্তীকে হেপাজতে নেওয়ার সময়ে গ্রেপ্তারির কোনো কারণ দেখায়নি দিল্লি পুলিশ। শনিবার দিল্লি হাইকোর্ট এই প্রশ্নে পুলিশকে বিঁধেছে। হাইকোর্টের বিচারপতি তুষার রাও গেদেলা এদিন বলেছেন, ‘হেপাজতে নেওয়ার আবেদনে পুলিশ গ্রেপ্তারির কারণ দেখায়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট রায় আছে।’ ধৃতদের তরফে আদালতকে জানানো হয়েছিল হেপাজতে নেবার আগে ধৃতদের আইনজীবীদের বক্তব্যও শোনা হয়নি। বিচারপতি এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেন, হেপাজতের আদেশে একটা কথা নেই। ধৃতদের আইনজীবীদের কথা শোনা হয়নি। কেন হয়নি, বলুন। মেহতা অবশ্য এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। 


মঙ্গলবার দিনভর জেরার পরে প্রবীর পুরকায়স্থ ও অমিত চক্রবর্তীকে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বুধবার ভোরে এক বিচারপতির বাসভবনে গিয়ে পুলিশ তাঁদের সাতদিনের হেপাজত নেয়। গ্রেপ্তারির কোনো কারণ দেখানো হয়নি, এফআইআর-এর কপিও দেওয়া হয়নি। দিল্লির দায়রা আদালতে ধৃতদের আইনজীবীরা এফআইআর-এর কপি চেয়ে আবেদন করলে দিল্লি পুলিশ জানায়, এই মামলা স্পর্শকাতর। কপি দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত দায়রা বিচারপতি অবশ্য পুলিশের যুক্তি মানেননি। এফআইআর-এর কপি দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দেন। শুক্রবার এই এফআইআর বাতিল করার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ধৃতদের আইনজীবীরা। সেই আবেদনের শুনানিতেই বিচারপতি গেদেলা গ্রেপ্তারির ধরনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। 
প্রবীর পুরকায়স্থের হয়ে সওয়াল করেন কপিল সিবাল। তিনি বলেন, হেপাজতের আদেশই ভুল পদ্ধতিতে হয়েছে। সুতরাং এই নির্দেশ টেঁকে না। ধৃতরা এই অবস্থায় কেন আটক থাকবেন? তিনি অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদনও জানান। বিচারপতি বলেন, অভিযোগের চরিত্র যা তাতে এখনই ধৃতদের মুক্তি দিতে বলা যাবে না। সিবাল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ভাবেই বলেন, আমাদের আদালতে কী চলছে (যে বিচারপতি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর উল্লেখেই) ? ধৃতদের গ্রেপ্তারির কারণ জানানো হলো না। হাইকোর্টের বিধি বলছে ধৃতরা আইনজীবীদের সাহায্য নিতে পারেন। বিধিতে আরো বলা রয়েছে যদি ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়ে থাকে তাহলে সাময়িক হেপাজতে নেওয়া যেতে পারে যাতে আইনজীবীরা উপস্থিত হতে পারেন। তেমন নির্দেশও দেওয়া হলো না। অথচ তাঁকে হেপাজতে নিয়ে যাওয়া হলো। হেপাজতে নেবার আবেদনে গ্রেপ্তারির কোনো কারণ বলা হলো না। তারা জানে যে আমি আইনজীবী কিন্তু আমাকে খবর দেওয়া হলো না। অথচ পুলিশের আইনজীবীকে খবর দেওয়া হলো। আমাদের তরফে কোনো প্রত্যুত্তর ছাড়াই নির্দেশ দেওয়া হলো। এইসব কীভাবে ঘটছে? 


সিবাল আরো উল্লেখ করেন, পোর্টালের বিরুদ্ধে অর্থের বেআইনি লেনদেন সংক্রান্ত একটি মামলায় হাইকোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী সুরক্ষা দিয়েছে। সেই মামলার শুনানির আগেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। 
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলেন, যা দেখা যাচ্ছে তার থেকে বেশি কিছু রয়েছে। সোমবার শুনানি করুন। তিনি দাবি করেন, এই মামলা নিয়ে অযথা হই চই করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের বাড়িতে তল্লাশি ও দু’জনকে গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সাংবাদিক মহল, নাগরিক সমাজ এবং বিরোধী দলগুলি সোচ্চার হয়েছে। তুষার মেহতা একেই ‘অযথা হই চই’ বলে অভিহিত করেছেন। 
বিচারপতি সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। ওই দিন দিল্লি পুলিশকে কেস ডায়েরি দাখিল করার নির্দেশও দিয়েছেন। 
অপর ধৃত অমিত চক্রবর্তী শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর আইনজীবী আদালতকে একথা জানানোর পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেন বিচারপতি। 


এদিকে, নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে সরকারের ক্রোধের কারণ কী তা এফআইআর-এ স্পষ্ট হয়ে গেছে। নানা সঙ্গতিহীন মন্তব্যের ভরা ওই এফআইআর-এ বলা হয়েছে, এঁরা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন কেননা এঁরা দীর্ঘস্থায়ী কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই অভিযোগকেই ‘জোরদার’ করতে পুলিশ অভিযোগ করেছে, কৃষক আন্দোলনে সরকারের সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে এঁরা অর্থ জুগিয়েছেন। কোভিডের সময়ে ভারত সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। সরকারকে খাটো করেছেন। ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। এফআইআর-এ বলা হয়েছে, ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিপর্যস্ত করতে, দেশের সুরক্ষা বিঘ্নিত করতে ভারতীয় ও বিদেশি সংস্থা থেকে এরা বেআইনি ভাবে অর্থ নিয়েছে। ‘গোপন সূত্রে’ পুলিশ এমন খবর পেয়েছে বলে দাবি করে বলা হয়েছে, সাংহাইয়ের বাসিন্দা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নেভিল রায় সিংঘম নানা পদ্ধতিতে এদের অর্থ দিয়েছেন। এইসব অর্থ নানা পথে গেছে গৌতম নাভলাখার কাছে, যিনি নিষিদ্ধ নকশালপন্থী সংগঠনকে সক্রিয় ভাবে সমর্থন করেন। উল্লেখ্য, সমাজকর্মী  ও সাংবাদিক নাভলাখা ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত এবং তাঁর বিচারের প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃত ভাবেই দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। এফআইআর—এ বলা হয়েছে, সিংঘম এবং তাঁর কিছু সহযোগীর সঙ্গে নিউজক্লিকের সম্পাদকের ই-মেল থেকে দেখা যাচ্ছে তাঁরা কাশ্মীর ও অরুণাচলকে ভারতের অংশ হিসাবে দেখাতে চান না। শিয়াওমি, ভিভোর মতো চীনের টেলিকম কোম্পানি ভারতে শিখণ্ডি সংস্থা খুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার সময়ে এরা ওই সংস্থাগুলির সপক্ষে কথা বলেছে। এ-প্রসঙ্গে জনৈক গৌতম ভাটিয়াকে ‘মুখ্য ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করলেও তিনি কে, তা জানানো হয়নি। বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক গীতা হরিহরণকেও এই সূত্রে অভিযুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চীনের টেলিকম সংস্থা যদি ভারতে শিখণ্ডি সংস্থা খুলেই থাকে তাহলে তাদের ব্যবসা করতে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে কেন? কেনই বা সেই শিখণ্ডি সংস্থাকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না— এই মর্মে এদিনই প্রশ্ন উঠেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment