football morocco

মরক্কোর পালটা দৌড় চলতে থাকুক

সম্পাদকীয় বিভাগ

শান্তনু চক্রবর্তী

২০০৬-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের কোনও প্রসঙ্গ এলেই ফরাসি অধিনায়ক জিনেদিন জিদানের সেই কুখ্যাত হেড বাটের কথাটা উঠে পড়বেই পড়বে। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ইতালির ডিফেন্ডার মাতারোজ্জিকে মাথা দিয়ে ঢুসো মেরে, লাল কার্ড দেখে, স্টেডিয়ামের টানেল দিয়ে নিঃশব্দে মিলিয়ে গিয়েছিলেন জিদান। মাঠে বা টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা দর্শকরা এই দৃশ্যটুকুই দেখেছিলেন। ফ্রান্সের দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের আশা সেদিন ওখানেই শেষ হয়ে গি‌য়েছিল। কোনও ফুটবলার কোনও পরিস্থিতিতেই মাঠের মধ্যে এমন আচরণ করতে পারেন না। ১৯৯৮-এ ফ্রান্সের বিশ্বজয়ের নায়ক ফিফার রোল মডেল জিদান তো কখনোই নন। কিন্তু তারপরেও জিদান সেদিন কেন মেজাজ হারিয়েছিলেন? অনেকপরে যেটা জানা গেছে, গোটা ম্যাচে মাতারো‍‌জ্জি সারাক্ষণ জিদানের আলজেরীয় জাতি পরিচয় তুলে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে গিয়েছিলেন। শেষ অবধি একটা সময় জিদানেরও ধৈর্যচুতি ঘটে। তারপরেই ওই অনভিপ্রেত ঘটনাটা ঘটে যায়।


কী বলতে পারেন মাতারোজ্জি জিদানকে? সেই সময় ইতালির বারলুসকোনি সরকারের এক মহামন্ত্রীর মন্তব্য থেকে আমরা তার খানিকটা আন্দাজ করতে পারি। ইতা‍‌লি সেবার টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পরে ওই মন্ত্রীমশাই তাঁর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন যাক বাবা, কমিউনিস্ট কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসবাদী মুসলিমদের মহাজোটবন্ধনের নোংরা হাত থেকে আমরা পবিত্র ট্রফিটাকে শেষ অবধি বাঁচাতে পেরেছি! ইঙ্গিতটা স্পষ্টই ফ্রান্সের তথাকথিত ‘মাল্টি-কুল্টি’ বা বহু জাতি-সংস্কৃতির ফুটবল বি‍‌গ্রেডের প্রতি। ১৯৮০’র দশকে মিশেল প্লাতিনিরা যা পারেননি শ্বেতাঙ্গ ও অভিবাসী ফুটলারদের সেই মিশ্রবাহিনী ফ্রান্সকে ১৯৯৮-র বিশ্বকাপ ও ২০০০-এ ইউরো কাপ জিতিয়েছিল। ২০০৬-এর ইতালি দলে অবশ্যই কোনও কৃষ্ণাঙ্গ বা অভিবাসী ফুটবলার ছিল না। ২০১৮বা ২০২২-র বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও ছিল না। এই দু’বারই ইতালি, ফুটবলের এই গ্রেটেস্ট শোয়ের মূলপর্বেই পৌঁছাতে পারেনি। আর ২০১৮-য় দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জ‌য়ী ফ্রান্সের মোট ২৩ জনের দলে ১৪ জন ফুটবলারই ছিলেন কোনও না কোনোভাবে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। শতকরা হিসাবে প্রায় ৭৯ শতাংশ। ইতালিতে এই মুহূর্তে বেনিতো মুসোলিনির ফ্যাসিস্ত শাসনের পরে সবচেয়ে দক্ষিণপন্থী শাসকের রাজ চলছে। ফ্রান্সে অনেক আপস, শ্রমিক-বিরোধী ক্ষতিকর অর্থনীতির অনেক কাঁটা সুদ্ধই ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী সরকার ক্ষমতায় ফিরেছে। উগ্রজাতীয়তাবাদী প্রবল দক্ষিণপন্থী আগ্রাসনের হাত থেকে কান ঘেঁ‍‌ষে বেঁচে গেছে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ— ‘মাল্টি কুল্টি’! আজ প্রসঙ্গত বলা যায়, এই ২০২২-এও যে ফরাসি দলটি রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ খেলতে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে, সে দলেও কৃষ্ণাঙ্গ বা অভিবাসী ফুটবলারের শতাংশের হিসাবটা ২০১৮ থেকে খুব কিছু আলাদা নয়।
ব্যাপারটা হয়তো ঠিক এমন নয় যে, ফ্রান্স সরকার উলটে গেলেই দিদিয়ের দেশঁর ওপর ফতোয়া নেমে আসতো যে, এক্ষুনি ফরাসি জাতীয় দলে শুদ্ধ শ্বেতাঙ্গ, খাঁটি ফরাসি  ফুটবলারের সংখ্যা বাড়াতে হবে যারা অন্তত ম্যাচের আগে ‘লা মার্সেই’টা (ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীত) অন্তত ঠিকঠাক গলা ছেড়ে গাইতে পারবেন! তবে জাতীয় দলের অভিবাসী ফুটবলারদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে ভুরু কুঁচকানিটা শুধুই  ঘোর জাতীয়তাবাদী ন্যাশনাল ফ্রন্টের সুপ্রিমো মেরি ল্যাঁপেন-এরই আছে এমনটাও নয়। ২০১৮-র বিশ্বকাপ জয়ের পরেও ১৯৯৮-এ জিদান দেশঁদের সহ খেলোয়াড় লঁরা ব্লাঁ প্রস্তাব দিয়েছিলেন ফ্রান্সের ফুটবল আকাদেমিগুলিতে ভর্তির  সময়েই কৃষ্ণাঙ্গ তথা অভিবাসী ফুটবলারদের সংখ্যা ৩০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে দেওয়া উচিত। একমাত্র তাহলেই ভবিষ্যতে  জাতীয় দলে আরব আর আফ্রিকার ফুটবলারদের এই বাড়াবাড়ি সংখ্যাধিক্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ফ্রান্সের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড়দের এহেন জাতিবিদ্বেষী প্রস্তাবকে পাত্তা দেয়নি। তবে লরাঁ ব্লাঁ যেটা মুখ ফুটে বলেছিলেন, সেটা কিন্তু অনেক ফরাসি জনগণের মনের কথা। লিবেরাল গণতন্ত্র, সাম্য-মৈত্রী-সৌভ্রাতৃত্বের প্রগতিশীল স্লোগান দিয়ে বহুত্ববাদের ঢাকনা পরিয়ে তাকে আড়ালে রাখলেও সুযোগ পেলেই বেয়াড়া কাঁটার মতোই তার খোঁচাটা টের পাওয়া যায়। ২০২২-এ যে করিম বেঞ্জিমার চোটের জন্য দেশঁ সহ ফরাসি ফুটবল কর্তাদের অনেক হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে, ২০১৬-র ইউরো কাপ বা ২০১৮-র বিশ্বকাপের সময় তাঁর কিন্তু কোনো চোট-আঘাত ছিল না। তবু তুচ্ছ একটা শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাঁকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। অথচ রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগা বা চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনি তখন তুঙ্গ ফর্মে! শোনা যায় শৃঙ্খলাভঙ্গটা স্রেফ বাহানা। আসলে ফরাসি সমাজের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে বেঞ্জিমা যে সদর্পে তাঁর আলজেরীয় আত্মপরিচয়ের কথা ঘোষণা করেছেন— ফ্রান্সের জাতীয় দলের ফুটবলার হয়েও বার বার বলেন তাঁর ‘‘হৃদয়ের অর্ধেকটা জুড়ে আলজেরিয়া’’—এটাই ফেডারেশন কর্তাদের রাগের কারণ।
তাঁর দুরন্ত বল স্কিল, বিপজ্জনক চোরা গতি, উইং থেকে আচমকা কাট করে ভিতরে ঢুকে আসা, বক্সের মধ্যে বাড়ানো সোনার পাসগুলো যখন তখন যে কোনও ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। ২০২২-এর বিশ্বকাপ  স্কোয়াড থেকে তাঁকে তাই বাদ দেওয়া যায়নি। চোট বাধ না সাধলে এই যেঅনেক ম্যাচে গোলের দরজা খুলতে ফ্রান্সের এতটা সময় লেগে  যাচ্ছে, সেটা হয়তো লাগতো না। কিন্তু সুভদ্র রুচিবান এলিট ফরাসি সমাজ তারপরেও হয়তো বেঞ্জিমার মধ্যে একজন আরব দুর্বৃত্ত বা দস্যুকেই খুঁজে পেতো—‘মাগ অব অ্যান আরব’! তো আমরা ধরেই নিলাম বেঞ্জিমার স্বভাবে এক বিদ্বেষী আরব আছে। কিন্তু কিলিয়ান এমবাপে? তিনি তো তাঁর বুকের মধ্যে কোথাও এক টুকরো ক্যামেরুনকে আঁকড়ে লুকিয়ে ঘোরেন না! বরং প্রাণপণ একজন অনুগত, দেশপ্রেমিক ফরাসি নাগরিকই হতে চান। তাঁর অপ্রতিরোধ্য গতিই ফ্রান্সকে ২০১৮-র বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল। বুধবারের সেমিফাইনালেও মরক্কোর পেনাল্টি বক্সে পায়ের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তাঁর তীব্র দৌড় আর বলের উপর আশ্চর্য নিয়ন্ত্রণই ফ্রান্সকে ম্যাচের নির্ধারক দ্বিতীয় গোলটা এনে দিয়েছিল। আজকের ফাইনালেও মেসির বিশ্বকাপ ছুঁতে পারা না পারা অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁর দৌড়, আর্জেন্টিনার রক্ষণ কতটা রুখে দিতে পারবে তার ওপরেই। কিন্তু তাঁকেও ২০২১-এর ইউ‍‌রো কাপে ব্যর্থতার পক্ষে ভয়ঙ্কর ক্ষতি ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছিল। এতটাই যে এমবাপে প্রায় সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছিলেন, ফ্রান্সের হয়ে আর কোনোদিন খেলবেন না।


আর এই একটা ইস্যুতেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হয়ে খেলা অভিবাসী ফুটবলারদের ভাগ্য একই সু‍তোয় বাঁধা। সেখানে ফ্রান্সের এমবাপে, বেলজিয়ামের রোমেল লুকাকু বা ইংল্যান্ডের মার্কাস রাশফোর্ডকে দিনের শেষে একই মাটিতে এসে দাঁড়াতে হয়। ২০২১-এর ওই ইউরো কাপের ফাইনালেই ইতালির বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে পেনাল্টি নষ্ট করেন ইংল্যান্ডের ৩ কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার রাশফোর্ড, সাকা ও স্যাঞ্চো। আর শ্বেতদ্বীপ জুড়ে বর্ণবিদ্বেষের প্লাবন বয়ে যায়। তাঁদের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। আমাদের এই পোড়া দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশে নয়— সারা দুনিয়াকে সুসভ্যতার জ্ঞান দিয়ে বেড়ানো খোদ ইংল্যান্ডেই  রাশফোর্ডের মুরালে কালি মাখিয়ে বিকৃত করা হয়, স্যাঞ্চো-সাকাদের বাড়িতে ঢিল পড়ে, ভাঙচুর চলে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে, ফ্রান্সের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন যখন সমতা ফেরানোর সোনালি সুযোগটা বারের উপর দিয়ে  হেলায় উড়িয়ে দেন, তখন শ্বেত ব্রিটেন কি তার দেশপ্রেম বা দায়িত্ববোধ নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ করে? এখানেই সেই জাতিসত্তার প্রসঙ্গটা এসে যায়। ভূমিপুত্র কেনের দেশপ্রেম প্রমাণ করার কোনও দায় নেই। কিন্তু একদা ‘প্রভু’ দেশের প্রাক্তন উপনিবেশ থেকে আসা এমবাপে-পোগবা-বেঞ্জিমা কিংবা রাশফোর্ড-সাকা-স্যাঞ্চোদের প্রতি মুহূর্তে তথাকথিত আশ্রয়দাতা দেশের কাছে নতজানু হয়ে ভাত-কাপড়ের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। এই তথাকথিত লিবেরাল, বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক ইউরোপের দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদীরা চান এইসব অভিবাসীদের সমস্তরকম নাগরিক অধিকার, ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও কেড়েকুড়ে এতটাই প্রান্তিক কোণঠাসা করে দেওয়া হয়, তারা আপন প্রাণ বাঁচা বলে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আজ মধ্যপন্থীরা চান, এই মানুষগুলো তাদের সমস্ত জাতি-পরিচয় মুছে ফেলে খাঁটি ফরাসি, ব্রিটিশ বা বেলজিয়ান হয়ে উঠুক।
দুটো প্রক্রিয়ারই ফলাফল শেষ অবধি একই। এরা প্যারিসের কুখ্যাত ‘বঁ‍‌লিউ’ বা ব্রাসেলস-এর ঘেটো-য় দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের অসহ্য, অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য হন। সব সাধারণ মানুষরাও তাদের একটুও বিশ্বাস করেন না। তাদের সমা‍‌জবিরোধী দুর্বৃত্ত, অপরাধী, দাঙ্গাকারী ভাবেন। কোনও বহুত্ববাদই পারস্পরিক অবিশ্বাসের পর্দাটা উড়িয়ে দিতে পারে না। তাই সামান্য প্ররোচনাতেই এইসব বঁলিউ ঘেটোগুলোয় দাঙ্গা বেধে যায়। সেটা পুলিশের বাড়াবাড়ি হতে পারে কিংবা বিশ্বকাপে ইউরোপীয় দলের বিরুদ্ধে মরক্কোর জয় বা পরাজয়। আবার এই অসহনীয় জীবন থেকে বেরিয়ে আসার জন্যেও এই মানুষদের কাছে ফুটবল ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই। প্যারিসের বঁলিউ-এর ওই পাঁক-নোংরা-দারিদ্র  ঘেঁটেই উঠে এসেছেন এমবাপে বা পোগবা। ব্রাসেলসের কঙ্গো অভিবাসীদের বস্তি থেকেই পায়ে বল নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন রোমেল লুকাছ। তবে  তিনি একথাটাও সার বুঝেছেন— ‘মাঠে নেমে গোল করতে পারলেই আমি গর্ব আজ আমাদের বেলজিয়াম স্ট্রাইকার থাকবো। দু’-একটা ম্যাচ এদিক-ওদিক হলেই রাতারাতি আমার নামের আগে কঙ্গো-জাত দূরছাই ফুটবলারের তকমা বসে যাবে।


এই রকম কোনও তকমা বসে যাওয়ার ভয় নেই মরক্কোর। তারকা ডিফেন্ডার আশরাফ হা‍‌কিমি বা সেমিফাইনালে শেষ মুহূর্ত অবধি লড়াই চা‍‌লিয়ে যাওয়া সোফিয়ান আমারাবতের। প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসাবে সেমিফাইনালে যাওয়া এই মরক্কো দলের ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৬জনেরই জন্ম, এমনকি বেড়ে ওঠা ইউরোপে। হাকিমি বড় হয়েছেন স্পেনে, খেলেন পিএসজি-তে এমবাপের সঙ্গেই। কিন্তু রক্ষণ সামলাচ্ছেন মরক্কোর। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসাবে নেদারল্যান্ডসের লিগ ফুটবলে ঝড় তোলা আমারাবতকে সেদেশেই থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং রু দগুলিত। কিন্তু তারপরেও তাঁকে দেখা গেল সেমিফাইনালে মরক্কোর প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শাসক দেশের রক্ষণে বারবার আক্রমণের ঢেউ তুলে আনতে। গ্রুপ লিগ বেলজিয়ামকে হারাবার পরেও মরক্কো নকআউটে তাদের আরও দুই পুরানো ঔপনিবেশিক বোম্বেটে প্রভু ওলন্দাজ ও পর্তুগিজদের ধরাশায়ী করেছে। ইউরোপের অহং স্বাভাবিকভাবেই এই উত্তর-আফ্রিকা তথা আরব দিগ্বিজয়ে আহত হয়েছে। মরক্কোর রক্ষণাত্মক ফুটবল নিয়ে সাহেব কলমচিরা সরব হয়েছেন। যেন ইউরোপ ঘর বাঁচিয়ে, প্রতি-আক্রমণমূলক ফুটবল খেলে না।
আসলে শ্বেত ইউরোপের লাগছে অন্য জায়গায়। অভিবাসনের স্রোতটা উলটো দিকে ঘুরিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খেলে বড় হওয়া ফুটবলারদের এক সুতোর জোটের মরক্কো একটা পালটা বা বিকল্প মিশ্র সংস্কৃতির ফুটবল দল তৈরি করেছে। যাকে বলা যায় আরব আফ্রিকান ‘মাল্টিকুল্টি’। মাঠ ও মাঠের বাইরে মরক্কোর ফুটবলারদের আচরণও কোথাও ইউরোপের পালটা এক উষ্ণ, আন্তরিকতাময় যৌথ জীবনবোধের সন্ধান দেয়। প্যালেস্তাইনের পতাকা থেকে মায়েদের সঙ্গে ফুটবলারদের নাচ— সবটাই তার উপাদান। মরক্কোর ফুটবল দলকে ঘিরে তাই শুধু আফ্রিকা বা আরব দুনিয়া নয়, গোটা দক্ষিণ গোলার্ধের চেতনা ও সংস্কৃতির একটা সমাবেশ ঘটে গেছে। পশ্চিম পৃথিবী হ‌য়তো সেখানে কোনও নতুন প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ দেখছে। তাই ভয় পাচ্ছে। আর বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ফুটবলের মানচিত্র বদলে দেওয়ার জন্য। ‘অ্যাটলাস লায়ন্স’-দের দৌড় তাই ২০২৬-এও জারি থাক।
 

Comments :0

Login to leave a comment